×

জাতীয়

অভিমানী কর্মীদের বুকে টেনে নেয়ার সময় এখন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২১, ১০:০১ পিএম

অভিমানী কর্মীদের বুকে টেনে নেয়ার সময় এখন

তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়ন করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ নিয়ে কথা বলেছেন বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে হাতেখড়ি এডভোকেট আফজাল হোসেনের। ছিলেন সূর্যসেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও হল ছাত্র সংসদের ভিপি। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। পরে সক্রিয় হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। ঢাবির দুই বার সিনেট সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্ত ছিলেন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ’৭১-এর ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থের সম্পাদনায়। আওয়ামী লীগের মুখপত্র মাসিক ‘উত্তরণ’-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তিনি। দলটির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে ৩ বার দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিজ বিভাগ বরিশালের দায়িত্ব পালন করছেন। নিজ এলাকা পটুয়াখালীতে নানা সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজও করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-দুমকি-মির্জাগঞ্জ আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। সোমবার বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেন।

বরিশাল বিভাগে সংগঠনের কার্যক্রম কেমন চলছে- জবাবে এডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, বরিশাল বিভাগে মহানগর কমিটিসহ ৭টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিট আছে। এগুলো হলো- বরিশাল জেলা ও মহানগর, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনা। মোট উপজেলা ৪৭টি। থানা মর্যাদায় আছে জেলা সদরের ৫টি পৌরসভা। ইউনিয়ন মর্যাদায় ২৫ পৌরসভা ও ৩৫১টি ইউনিয়ন আছে। বিগত দায়িত্বপ্রাপ্তরা বরিশাল মহানগর, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠিতে সম্মেলন করেছিলেন। এসব জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়েছে। বরগুনা ও পিরোজপুরে সম্মেলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বেশ কিছু উপজেলায় সম্মেলন করেছি। এসব কমিটি পূর্ণাঙ্গের কাজ চলছে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ জেলায় সম্মেলন করব।

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা আপাতত সম্মেলন বা জনসমাবেশ করতে পারছি না। তবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছে। কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে। স্বজনরা যখন করোনায় মৃতদের লাশ দাফন না করে ফেলে রেখেছে, তখন আমাদের নেতাকর্মীরা দাফন বা সৎকার করেছে। এতে আমাদের অনেকেই করোনা সংক্রমিত হয়েছে, কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন। কর্মীদের এই ত্যাগ ও কর্মকাণ্ড দলকে আরো মহিমান্বিত করেছে।

দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়া জেলা ও উপজেলা প্রসঙ্গে এডভোকেট আফজাল বলেন, এরকম জেলা ও উপজেলা আমাদের বিভাগে খুব একটা নেই। গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত ও সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে নতুন নেতৃত্বকে তুলে আনতে সম্মেলনের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমাদের মেনে নিতে হবে। ভার্চুয়ালি কিছু কার্যক্রম হয়তো করছি, কিন্তু রাজনীতির মতো জনসম্পৃক্ততার কাজ ভার্চুয়ালি হয় না। গ্যালারি শূন্য রেখে ফুটবল খেলা যেমন জমে না। তেমনি স্বাস্থ্যবিধির নামে মানুষের সঙ্গে দূরত্ব রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করাও কঠিন।

বরিশাল বিভাগের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, কোন্দল না বলে সমস্যা বলতে চাই। সমস্যা কোথায় নেই? সমস্যা আছে বলেই সমাধান আছে। একই পরিবারের মধ্যেও মতের অমিল থাকে। ঝগড়া-বিবাদ থাকে। আওয়ামী লীগ বৃহৎ পরিবার। ভিন্ন মত থাকবে, চিন্তার ভিন্নতা থাকবে। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। আবার দলের গঠনতন্ত্রে সব সমস্যা সমাধানের পথ বাতলে দেয়া আছে। সেখানে কোন্দলের কোনো সুযোগ নেই। বরিশাল বিভাগে প্রবীণ নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে একটি বিভাগীয় উপকমিটি আছে। এই কমিটির প্রচেষ্টায় সেই অর্থে কোনো কোন্দল নেই।

দলে অনুপ্রবেশ বা হাইব্রিড ইস্যুতে জানতে চাইলে আফজাল বলেন, রাজনীতিতে হাইব্রিড শব্দটা ব্যবহার করতে আমি নারাজ। টানা এক যুগ ক্ষমতায়। এই সুযোগে কিছু ভিন্ন চিন্তার মানুষের অনুপ্রবেশ হয়েছে কথাটা সত্যি। তাদের তালিকা আমরা করেছি। আমাদের হাতে আছে। আওয়ামী লীগ করতে হলে এ দলের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও নিয়মনীতি অনুধাবন করতে হবে, ধারণ করতে হবে হৃদয়ে, মননে ও কর্মে। সুতরাং চিন্তা-চেতনায় আওয়ামী লীগার না হলে আওয়ামী লীগ করা যায় না। স্বার্থ হাসিল করতে আসা ব্যক্তিরা এমনিতেই একসময় কেটে পড়ে। তাদের সম্পর্কে আমরা সজাগ আছি। তবে বাতাসে ভর করে কেউ দলে অনুপ্রবেশ করে না। কোনো না কোনো নেতার আনুকূল্যে তারা দলে আসে। সুতরাং অনুপ্রবেশকারী ও তাদের প্রশ্রয়দাতা উভয়ের ব্যাপারেই সজাগ থাকতে হবে, আমরা সজাগ আছি। আমাদের কাছে সাম্প্রতিক চিত্র আছে। নির্বাচনে বা কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দেয়া হবে না। তবে মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ধারণ করে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও উদ্দেশ্য মেনে সংগঠন করতে আসাদের আমরা সব সময় স্বাগত জানাব।

কোন জেলায় বেশি সমস্যা মনে করেন এবং কেন- জবাবে তিনি বলেন, সমস্যা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জকে উপজীব্য করেই সংগঠন পরিচালিত হয়। বরিশাল বিভাগের সব জেলাতেই অত্যন্ত সুচারুভাবে দল পরিচালিত হচ্ছে। জননেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ এবং আবুল হাসনাতের মতো জাতীয় নেতারা বরিশাল বিভাগের সন্তান। সুতরাং এখানে কোনো সমস্যাই সমাধানের ঊর্ধ্বে নয়।

সংগঠনের কাজে নেতাকর্মীদের অনীহা আছে কিনা- জবাবে এডভোকেট আফজাল বলেন, আওয়ামী লীগ কর্মী নির্ভর রাজনৈতিক দল। কর্মীদের কারণেই আজকের আওয়ামী লীগ। এই সংগঠনে তৃণমূলের কর্মীদের অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। ক্ষমতায় থাকলে কর্মীদের সঙ্গে যেন দলের দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অভিমানী কর্মীদের বুকে টেনে নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।

নিজ বিভাগে কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা মনে হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে একমাত্র আমাকেই এবার দলের সভাপতি আমার নিজ বিভাগে দায়িত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় এখানে রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি, সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে আমি মোটামুটি অবগত। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ জানাশোনা আছে। সবার সহযোগিতায় যে কোনো সমস্যাই সমাধান করতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App