×

জাতীয়

ধৈর্যের সঙ্গে কর্মীদের কথা শোনা উচিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২১, ১০:১৩ পিএম

ধৈর্যের সঙ্গে কর্মীদের কথা শোনা উচিত
তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়ন করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ নিয়ে কথা বলেছেন রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক।

বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন সাখাওয়াত হোসেন শফিক। এ সময়ে বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কাযনির্বাহী কমিটির সদস্য হন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে রাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ও সহসভাপতি এবং ১৯৯৭ সালে কাউন্সিলারদের প্রত্যক্ষ ভোটে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচত হন। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি হিসেবে রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। রাবি ক্যাম্পাসে শিবিরের হাতে একাধিকবার নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন। দুইবার আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহসম্পাদক ও একবার সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। দলটির একুশতম জাতীয় সম্মেলনে তাকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। দেড় বছর সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে রংপুর বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন। গতকাল রবিবার রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে শফিক বলেন, চলতি বছরের ৩০ মার্চ দায়িত্ব পরিবর্তন করে আমাকে রংপুর বিভাগে দেয়া হয়েছে। চলমান লকডাউনেও সেখানে গিয়েছি। রংপুর বিভাগে মোট ৯টি সাংগঠনিক জেলা ইউনিট আছে। সেগুলো হলো- রংপুর জেলা ও মহানগর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা। উপজেলা ও থানা ইউনিট ৬৬টি। রংপুর মহানগরীতেও তিন থেকে চারটি থানা রয়েছে। বিগত জাতীয় সম্মেলনের পূর্বে ৬টি জেলা রংপুর জেলা ও মহানগর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার সরাসরি সম্মেলন হয়েছে। উপজেলা ও থানা সম্মেলন হয়েছে প্রায় ৯০ ভাগ। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই বাকি মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ও উপজেলা সম্মেলনগুলো সম্পন্ন করব। এই বিভাগে দায়িত্ব নিয়েই আমি কর্ম-পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছি। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, এরই মধ্যে ১৬ মাস ধরে না হওয়া কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করেছি। সেখানে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে কিছু জটিলতা ছিল। তাদের সঙ্গে নিয়ে বসে সেই জটিলতা সমাধান করে কমিটি করা হয়েছে।

তৃণমূলের দীর্ঘদিনের সমস্যা অভ্যন্তরীণ কোন্দল কীভাবে নিরসন করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রথমবার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া সাখাওয়াত হোসেন শফিক বলেন, তৃণমূল থেকে তুলে এনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে সরাসরি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় পুরস্কার। আমি মনে করি, তৃণমূলের প্রতি নেত্রীর যে আবেগ, সেটারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন তিনি। দলের সভাপতি আমার প্রতি যে আস্থা এবং বিশ্বাস রেখেছেন, যথাযথ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আমি তার প্রতিফলন ঘটাতে চাই। সংগঠনের জন্য নিজেকে সর্বোচ্চ বিলিয়ে দিতে চাই। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, নেতার আসন থেকে কেবল ধমকের সুরে নয়, ধৈর্য এবং সময় নিয়ে নিরপেক্ষ মানসিকতা নিয়ে কর্মীদের কথাও শুনতে হবে। এতে করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার প্রতি কর্মীদের আস্থা বাড়ে। তারা মন খুলে নিজেদের দলীয় সমস্যাগুলো নেতার কাছে বলার সুযোগ পান। তখন তারা নেতার নির্দেশনা আন্তরিকভাবেই মেনে নেন। এতে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়। তিনি বলেন, দেড় বছর আমি সিলেট বিভাগে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছি। করোনা মহামারির মধ্যেও সাতবার সেখানে গিয়েছি। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সফর করে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। স্থানীয় পর্যায়ের সাংগঠনিক জটিলতা ও সমন্বয়হীনতা দূর করার চেষ্টা করেছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে করোনা প্রতিরোধমূলক প্রচারণা চালিয়েছি। ঠিক একইভাবে রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় যাওয়ার বিষয়ে আমার কর্ম-পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেই আমি সেখানে যাব। স্থানীয় নেতাকর্মীদের কথা ধৈর্যসহকারে মনোযোগ দিয়ে শুনব। তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। শুধু জেলা ও উপজেলাই নয়, প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডকে পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের দিয়ে ঢেলে সাজাতে চাই। প্রবীণদের পাশাপাশি সাবেক পরীক্ষিত ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। এ বিষয়ে আমাদের দলীয় প্রধানের নির্দেশনা আছে।

দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে ঘাপটি মেরে থাকা অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের সম্পর্কে শফিক বলেন, সরকারি দলে কিছু সুযোগ-সন্ধানী থাকে। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী বা বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্য থেকে তারা অনুপ্রবেশ ঘটায়। এর কারণ কিছু কিছু এলাকায় সাংগঠনিক দুর্বলতা আর নেতৃত্বের অসম প্রতিযোগিতা। তবে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে তাদের আমরা দলে টানতে চাই। এই শ্রেণির মানুষ দলের জন্য ক্ষতিকর না। অন্যান্য সংগঠন থেকে যারা আওয়ামী লীগে এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছে বা আসার চেষ্টা করছে-তারা দলের জন্য কখনোই ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসে না। তারা আসে শুধু সুবিধা নিতে। এ বিষয়ে নেত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা আছে যাদের কারণে সরকার আর দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে চলেছে বা হয়েছে তাদের চিহ্নিত করা। এরা যেন আগামীতে দলের আর কোনো দায়িত্বশীল জায়গায় কোনোভাবেই ঠাঁই না পায়। এটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রত্যেকের সহযোগিতা থাকতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App