×

রাজনীতি

দায়িত্বপ্রাপ্তদের তৃণমূলে কোন্দল মেটাতে দরকার নির্মোহ ভূমিকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২১, ১১:৫৭ পিএম

দায়িত্বপ্রাপ্তদের তৃণমূলে কোন্দল মেটাতে দরকার নির্মোহ ভূমিকা
তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই নির্দেশনা কীভাবে বাস্তবায়ন করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এ নিয়ে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ স্বপন।

ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের। রংপুরে স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের মিছিলে যাওয়া শুরু। নওগাঁ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, পরে সাধারণ সম্পাদক। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ও সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন আওয়ামী লীগ উপকমিটির সহসম্পাদক। ২০০৯ সালে দলটির জাতীয় সম্মেলনে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। পরপর চারবার এই পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এরই মাঝে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করছেন। রয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বে। এর আগে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন স্বপন। শনিবার চট্টগ্রাম বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

চট্টগ্রাম বিভাগের সার্বিক সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পর আমি দুটি বিভাগে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি। প্রথম দেড় বছর রংপুর বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছি। চলতি বছরের ৩০ মার্চ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি আমাকে চট্টগ্রাম বিভাগে কাজের সুযোগ দেন। চলমান লকডাউনের মধ্যেও মাত্র ৩ মাস সেখানে কাজ করছি। চট্টগ্রাম বিভাগের দুটি মহানগরসহ মোট ১৫টি সাংগঠনিক জেলা আছে। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা মহানগর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, চট্টগ্রাম উত্তর, কুমিল্লা দক্ষিণ, কুমিল্লা উত্তর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। উপজেলার সংখ্যা মোট ১০৩টি। এছাড়া সদর পৌরসভাসহ থানা ইউনিটের সংখ্যা ২৬টি। বিগত সময়ে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনি ৮টি জেলার সম্মেলন করেছেন। এখন সম্মেলন করতে হবে ৭টির। উপজেলা, থানা ও সদর পৌর মিলে মোট ৫৯টি ইউনিটের সম্মেলন হয়েছে। নতুন করে ৭০টির সম্মেলন করতে হবে। জুন মাসে চট্টগ্রাম জেলা, মহানগর এবং কুমিল্লা উত্তর জেলার বর্ধিতসভা আমরা করেছি। লকডাউনের কারণে থমকে আছে। তিনি বলেন, করোনাকালে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের গতি কিছুটা কম। তবে নেতাকর্মীরা সরাসরি মানবসেবার অপূর্ব সুযোগ পেয়েছেন, তারা সেটি করছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি অধিকতর গণমুখী হচ্ছে। যখনই করোনার প্রকোপ সহনীয় থাকছে, সীমিত পরিসরে বিভিন্ন সভা করে সাংগঠনিক তৎপরতা আমরা চালাচ্ছি। এছাড়া ডিজিটালি জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু কাজ করছি। সম্মেলন না হওয়া ইউনিটগুলোর সম্পর্কে স্বপন বলেন, মূলত কিছু নেতার অলসতা ও উদাসীনতায় কিছু ইউনিটে নিয়মিত কাউন্সিল হয় না, স্থানীয় কোন্দলও একটি কারণ। এর মধ্যেও কাউন্সিল করা অসম্ভব নয়। দেড় বছর যাবত করোনার কারণে আমরা খুব একটা কাউন্সিল করতে পারছি না। প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, প্রকোপ কমলেই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সীমিত পরিসরে মেয়াদ উত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর কাউন্সিল করা হবে। আমাদের টার্গেট, আগামী বছরের মধ্যে সব মেয়াদ উত্তীর্ণ কাউন্সিল করব।

কোন্দল নিরসনের পদক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর যে প্রান্তে ন্যূনতম তিনজন বাঙালি আছেন, সেখানেই দুইটি উপদলের প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য অস্তিত্ব রয়েছে। বাঙালির আপন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে কিছু কিছু কোন্দল থাকবে না, এমনটা আশা করা এক ধরনের বোকামি অথবা সত্য স্বীকার না করার মানসিকতা। কোন্দল নিরসনের প্রধান উপায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কার্যকর নিরপেক্ষ ও নির্মোহ ভ‚মিকা পালন, পরস্পরবিরোধী পক্ষের অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনা, আস্থাহীন পক্ষগুলো নিয়ে একসঙ্গে বসে আলোচনা করে বাস্তবসম্মত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাধান করা। সবচেয়ে বড় বিষয়, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগে সব পর্যায়ে কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে কমিটির সব নেতাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা। একসঙ্গে সবাই বসে কমন সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করা- যা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়মিত প্রতিপালন করা হয়। এই প্র্যাকটিস সব পর্যায়ে নিশ্চিত করতে পারলে কোন্দল নব্বই শতাংশ কমে আসবে। আমরা সেই নীতিতে এগিয়ে চলছি।

দলে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, কোনো গোপন ও মৌলবাদী সংগঠন নয়। জাতির পিতার আদর্শ, আওয়ামী লীগের নীতি ও কর্ম এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ-নেতৃত্বে বিশ্বাসী বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক এ দলে যোগ দিতে পারেন। ক্ষমতাসীন দলে কিছু আবর্জনা ঢুকে সব সময়ই অবৈধ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে। এটি চিরায়ত। কিছু ব্যক্তি সব সময়ই সরকারি দল করতে চান। তারা রাজনৈতিক দল নয়, সরকারি দল করতে আগ্রহী। এই অশুভ ব্যক্তিরাই আবর্জনা, এরাই বড় সমস্যা। দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের অবস্থান, কোনো সুযোগ সন্ধানীকে দলে না নেয়া। এরপরেও তৃণমূলের কিছু নেতা সরল বিশ্বাসে অনেককে দলে নিচ্ছেন, যা বুমেরাং হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কাজ করছি। দেশে অগণিত ভালো মানুষ থাকতে আবর্জনা লালনের কোনো প্রয়োজন নেই। ভালো মানুষের দলে স্বাগত জানাতে হবে। তারা দলে এলে আকারে ইঙ্গিতে বা রূপক শব্দ চয়নের মাধ্যমে তাদের অপমানিত বা তিরস্কার করা যাবে না। নবাগত ভালো মানুষের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রশিক্ষিত করে বঙ্গবন্ধুর অমর রাজনৈতিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

কোনো কোনো জেলায় বেশি সমস্যা? এ প্রশ্নের জবাবে স্বপন বলেন, কমবেশি সব জেলায় কিছু সমস্যা আছে। এগুলো সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে সমাধানই একমাত্র পথ। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক কর্মে অধিকতর নিয়োজিত এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করতে পারলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। সাংগঠনিক কাজে কর্মীদের কোনো অনীহা নেই। নেতাদের অলসতা ও উদাসীনতাই সমস্যা। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো সমস্যা ফেস করি না। যখন যে বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছি নিজেদের মধ্যে বিভেদ থাকলেও সবাই আন্তরিকভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App