×

জাতীয়

টিকা নিতে রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পদে পদে ভোগান্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২১, ০৮:৫৮ পিএম

ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিদেশে যাওয়ার টিকিট পাওয়ার জন্য রাত জেগে বসে থাকতে হয়, টিকার দাবিতে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে মিছিল করতে হয়। গত বছরের শেষ দিকে ছুটিতে কুয়েত থেকে দেশে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কামাল হোসেন। তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে আকামাও বাতিল হয়েছে। এক বছরের জন্য নতুন আকামা নিয়েছেন সেটিও শেষ হওয়ার পথে। এখন ফাইজারের টিকা নিতে না পারলে যেতে পারবেন না তিনি দেশটিতে। এই টিকার জন্যই হন্যে হয়ে ঘুরছেন তিনি। লকডাউনের বাধা ঠেলে বাঞ্ছারামপুর থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া এসেছেন। কিন্তু নানা জটিলতায় টিকার জন্য নিবন্ধনই তিনি করতে পারেননি।

যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে ছুটিতে দেশে এসেছেন তাদের অনেকেরই ফেরার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। টিকা নিতে না পারার কারণে যেতে পারছেন না কর্মস্থলে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কুয়েত প্রবাসীরা। দেশটি যে চারটি টিকার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশে শুধু ফাইজারের টিকা রয়েছে। ফলে এখন টিকাটি পেতে উদ্বিগ্ন সময় কাটাচ্ছেন তারা। কুয়েত সরকার জানিয়েছে, যাদের ফাইজারের টিকা নেওয়া থাকবে তাদের দেশটিতে গিয়ে কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে না, সরাসরি কাজে যোগ দিতে পারবে। এরপর থেকেই ফাইজারের টিকা পেতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেন বাংলাদেশে থাকা কুয়েত প্রবাসীরা।

বৃহস্পতিবার থেকে ফাইজারের টিকা পেতে আগ্রহী প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে। এখানেও ভোগান্তি। এক্ষেত্রে আগে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। এরপর সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিএমইটি থেকে নিবন্ধন পেতেই হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা।

ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, যাদের পাঠানো অর্থে আমাদের রিজার্ভ সমৃদ্ধ হচ্ছে তাদের প্রতি আমাদের নূন্যতম মমত্ববোধ নেই। কোন কিছুতেই তাদের অগ্রাধিকার নেই। বাংলাদেশের সব নাগরিক শুধু সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেই টিকা নিতে পারছেন। অথচ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দুইবার রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। কেন এটা হবে? সুরক্ষা অ্যাপে ব্যবস্থা করলেই তো হয়?

হাসান বলেন, টিকা না নিলে বিদেশে যাওয়া যাবে না। এটা অনেক আগেই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু এর জন্য কারও প্রস্তুতি ছিল না। এপ্রিলে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ফাইজারসহ নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের টিকা না নেওয়া থাকলে টাকা খরচ করে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এক পর্যায়ে তাদের টিকার অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হলো। কিন্তু জেলা হাসপাতালগুলো থেকে প্রবাসীদের ফিরিয়ে দেওয়া হলো। তারা কষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় এলেন। এরপর বলা হলো, ১ জুলাই থেকে সাত হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। এরপর বলা হলো, রেজিস্ট্রেশন করে আসতে হবে। এভাবে কেন বারবার তাদের দুর্ভোগে ফেলা হচ্ছে? প্রশ্ন তার।

তবে শ্রমিকদের দুর্ভোগের কথা মানতে রাজি নন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহিদুল আলম তিনি বলেন, আমরা তো শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। এ কারণেই তো তাদের টিকা দিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এখন বিএমইটি থেকে তারা রেজিস্ট্রেশন না করলে কিভাবে বোঝা যাবে তারা শ্রমিক। তাদের সুবিধার জন্যই এই ব্যবস্থা। ভাগ না থাকলে রেজিস্ট্রেশন উন্মুক্ত করলে তারা তো টিকাই পাবে না। আমরা তো ফাইজারের টিকা বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্যই বরাদ্দ রেখেছি।

জানা গেছে, বিদেশগামীদের টিকার নিবন্ধন শুরু হয় শুক্রবার সকালে। তবে অ্যাপে নিবন্ধন করতে না পেরে তারা ভিড় করেন ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে। সার্ভার জটিলতায় শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন ছাড়াই ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে। শুক্রবার যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি তারা বিক্ষোভ করেছেন ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ঢাকা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সামনে। লকডাউনে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ, তারপরও ঢাকার বিভিন্ন উপজেলা থেকে কর্মীরা এসেছিলেন নিবন্ধন করতে। সার্ভার জটিলতায় নিবন্ধন করতে না পেরে বিক্ষোভ করে তারা ফিরে গেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আশ্বাস নিয়ে।

এদিকে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। বিদেশগামীদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদের গন্তব্যে দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী টিকা দেওয়ার সমস্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী কর্মীদের জন্য ফাইজারের টিকা বরাদ্দ করেছেন। কারিগরি ত্রুটি এখন আর থাকবে না। বিএমইটিতে নিবন্ধিত হওয়ার পর সুরক্ষায় নিবন্ধিত হলে কর্মীরা টিকা পাবেন।

প্রবাসী শ্রমিকদের দ্রুত টিকা দিতে না পারলে মধ্যপ্রচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজার টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন অভিবাসন খাত বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের মধ্যে আমাদের দেশেই প্রথম সরকার শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এটা ভালো দিক। কিন্তু শ্রমিকদের হয়রানির মধ্যে না ফেলে দ্রুত তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে মধ্যপ্রচ্যে শ্রমবাজারের খালি জায়গাগুলোতো আমাদের জন্য বসে থাকবে না।

এদিকে, টিকা নেওয়া না থাকলে সৌদি আরবে সাত দিন হোটেলে কোয়ারান্টিনে থাকতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে কর্মীপ্রতি ২৫ হাজার টাকা ভর্তুকি বাবদ দিচ্ছে সরকার। অন্যান্য দেশে যাওয়া কর্মীদেরও ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে কোয়ারন্টিনে। ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন, মডার্না ও অক্সফোর্ডের টিকা নেওয়া থাকলে কোয়ারান্টিনের বাধ্যবাধকতা নেই।

গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কোয়ারান্টিনের খরচ বাঁচাতে ১ জুলাই থেকে ঢাকার সাতটি হাসপাতালে সৌদি ও কুয়েতগামীদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে। এরপর অনেকেই ঢাকায় ছোটেন লকডাউনের মধ্যেই। সূত্র: ডয়চে ভেলে

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App