×

সারাদেশ

অক্সিজেন সিলিন্ডারে এমপির শুভেচ্ছা পোস্টার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২১, ১১:৪৫ পিএম

অক্সিজেন সিলিন্ডারে এমপির শুভেচ্ছা পোস্টার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা

অক্সিজেন সিলিন্ডারের গায়ে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার শুভেচ্ছা পোস্টার। ছবি: ভোরের কাগজ

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেনের ব্যাপক সংকট দেখা দেওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. ক. ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০টি অক্সিজেন দিয়েছেন। তবে এসব অক্সিজেন সিলিন্ডারের গায়ে লাগানো এমপি বাদশার শুভেচ্ছা পোস্টার নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বলা হচ্ছে, মহামারিতে আবার শুভেচ্ছা কীসের। এটি মোটেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন, সহহযোগিতা করবেন এটাই তো স্বাভাবিক। এখানে অক্সিজেন সিলিন্ডারের গায়ে শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়ে আত্মপ্রচারের কী দরকার?।

ভারতীয় সীমান্তবর্তী বৃহত্তম উপজেলা দৌলতপুরে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে একজন রোগীর অক্সিজেন খুলে আরেকজন রোগীকে দেয়া হয়। এছাড়া সংকটের কারণে বেশিরভাগ রোগীকে কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়। অক্সিজেন সংকটের এ ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বের হওয়ায় বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ. ক. ম সরওয়ার জাহান বাদশা। তিনি নিজের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করলেও দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন সংকটের খবরে তাৎক্ষণিকভাবে ২০টি অক্সিজেন পাঠানোর ঘোষণা দেন।

সেই মোতাবেক শনিবার (৩ জুলাই) দুপুরে সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশার দেয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো হস্তান্তর করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এমপির পক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে এই অক্সিজেন হস্তান্তর করেন।

এদিকে এসব অক্সিজেন সিলিন্ডারের গায়ে লাগানো এমপি বাদশার শুভেচ্ছা পোস্টারকে কেন্দ্র করে এলাকার সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, যে কোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা ও সহযোগিতায় সবার পাশে থাকবেন এটাই তো স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে অক্সিজেন সিলিন্ডারেও পোস্টার লাগিয়ে আত্মপ্রচার করতে হবে কেন?। মহামারিতে আবার শুভেচ্ছাই বা কীসের জন্য। এটি কোনো উৎসব নাকি যে, পোস্টারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাতে হবে? ইত্যাদি প্রশ্নও সসালোচনার সঙ্গে উঠে আসছে। এমপি বাদশাহ্ ব্যক্তিগত অর্থায়নে অক্সিজেন সরবরাহের ঘোষণা দেয়ার পরপরই তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তা ব্যাপকভাবে প্রচার করেন তার সমর্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মীরা, এটিই যথেষ্ট ছিল। অক্সিজেন সিলিন্ডারে পোস্টার সাঁটিয়ে আত্মপ্রচারের দরকার ছিল না বলে অনেকে মনে করছেন।

সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সস্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, এমপি সেখানে ২০০টি অক্সিজেন দেন। তবে ওইসব অক্সিজেন সিলিন্ডারের গায়ে এভাবে পোস্টার লাগানোর প্রয়োজন হয়নি। এমনিতেই মানুষজন বুঝে গেছেন সেগুলো ছিল মাহবুবউল আলম হানিফের ব্যক্তিগত অনুদানের অক্সিজেন।

সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ফলে এই পোস্টার সম্পর্কিত ঘটনায় তার মন্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, দলের অতিউৎসাহী বা তোষামোদকারীদের কেউ হয়তো সংসদ সদস্যের হয়ে তার দেয়া অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলোয় মহামারির মাঝেও শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়ে দিয়েছেন। যার মাধ্যমে কেবল অজ্ঞতারই প্রকাশ ঘটানো হয়েছে, ইতিবাচক কিছু হয়নি। বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও এমপির ছবিসহ এই পোস্টারের মাঝখানে লেখা রয়েছে, 'করোনাকালীন শুভেচ্ছা' এবং নিচে লেখা রয়েছে, 'সৌজন্যে, সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ (এমপি)।

পোস্টার সস্পর্কিত বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টাা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। অক্সিজেন হস্তান্তরের সময় উপস্থিত থাকা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওয়াসিম কবিরাজ বলেন, এমপি সাহেব এই পোস্টারের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। এ রকম পরিস্থিতিতে পোস্টার লাগানোর বিষয়টি পুরোপুরি বেমানান। এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি। কুষ্টিয়া থেকে অক্সিজেন রিসিভ করে দৌলতপুরে আনার পর তাতে পোস্টার লাগানো হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যার কুষ্টিয়া জেলার বৃহৎ আয়তনের উপজেলা দৌলতপুর। এখানকার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের সাপোর্ট দেয়ার মতো পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। এখানে বর্তমানে ভর্তি থাকা ৪৫ জন রোগীর মধ্যে ২৫ জনই করোনা আক্রান্ত। আর ২০ জন অন্যান্য রোগী। এদের মধ্যে নিয়মিত অক্সিজেন সাপোর্ট লাগছে ৩৫ থেকে ৪০ জনের। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৭ জন কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে কাজ করছেন। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই আসছে নতুন রোগী, খুব বেশি গুরুতর না হলে রাখা হচ্ছে রোগীর বাড়িতেই। আর আশঙ্কাজনক রোগীদের পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে কুষ্টিয়া করোনা হাসপাতালে। দৌলতপুর উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭ শতাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের।

দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন অক্সিজেন সরবরাহে সরকারের পাশাপাশি এলাকার বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছেও সহযোগিতা কামনা করেছেন। ডা. তৌহিদুল হাসান তুহিন সাংবাদিকদের বলেন, সবাই যদি সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন তাহলেই কেবল আমরা করোনা রোগীদের প্রাথমিক সাপোর্ট দিতে পারবো। নইলে যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত আরো ১শ সিলিন্ডারের ব্যবস্থা না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App