×

জাতীয়

গত বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই করোনার উর্ধ্বগতি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২১, ১২:২৪ এএম

গত বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই করোনার উর্ধ্বগতি

ফাইল ছবি

গত বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই করোনার উর্ধ্বগতি
গত বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই করোনার উর্ধ্বগতি
গত বছরের তুলনায় এবার আগেভাগেই করোনার উর্ধ্বগতি

গত বছর জুন, জুলাই আগস্ট জুড়ে ছিলো করোনার সংক্রমণের ব্যপকতা। মৃত্যুর গ্রাফটাও ছিলো উর্ধ্বগামী। আগষ্টের পর থেকে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এসে শনাক্ত ও মৃত্যুর গ্রাফে আবারো উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জুন মাসের শেষের পাঁচ দিন একের পর এক শনাক্ত রোগী ও মৃত্যুর আগের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড হয়েছে।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিলো গত বছরের ৮ মার্চ। আর প্রথম মৃত্যু হয়েছিলো রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর, ১৮ মার্চ। এরপর থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৮২টি। রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২০ হাজার ৯২১ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪৬ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৪১৫ জন এবং নারী ৪ হাজার ২৩১ জন।

[caption id="attachment_293980" align="aligncenter" width="687"] মোট পরীক্ষা[/caption]

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে মার্চ মাসে ১ হাজার ৬০২টি নমুনা পরীক্ষায় ৫১ জন রোগী শনাক্ত হয়। সুস্থ হয় ২৫ জন এবং ৫ জনের মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে নমুনা পরীক্ষা, শনাক্ত রোগী, সুস্থতা ও মৃতের সংখ্যা। এপ্রিলে ৬৩ হাজার ৬৪টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ৭ হাজার ৬১৬ জন। সুস্ঞ হয় ১৩৫ জন আর ১৬৩ জনের মৃত্যু হয়। মে মাসে ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪ টি নমুনা পরীক্ষায় ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন রোগী শনাক্ত হয়। মৃত্যু হয় ৪৮২ জনের। সুস্থ হয় ৯ হাজার ৬২১ জন। জুন মাসে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩০টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৮ হাজার ৩৩০ জন রোগী শনাক্ত, ৪৯ হাজার ৪৮৩ জন রোগী সুস্থ এবং ১ হাজার ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়। জুলাই মাসে ৪ লাখ ১০ হাজার ৩৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় ৯২ হাজার ১৭৮টিতে। সুস্থ হয় ৭৫ হাজার ৫১২ জন, ১ হাজার ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়। আগস্ট মাসে ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়। রোগী শনাক্ত হয় ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন। সুস্থ হয় ৬৯ হাজার ৭৫১ জন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ১৭০ জনের। সেপ্টেম্বরে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ৫০ হাজার ৪৮৩টিতে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। সুস্থ হয় ৭০ হাজার ৬০০ জন আর ৯৭০ জনের মৃত্যু হয়। অক্টোবরে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ৪৪ হাজার ২০৫ জন। সুস্থ হয় ৪৮ হাজার ৬৫৮ জন আর মৃত্যু হয় ৬৭২ জনের। নভেম্বর মাসে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৯টি নমুনায় রোগী শনাক্ত হয় ৫৭ হাজার ২৪৮ জন। সুস্থ হয় ৫৬ হাজার ৫৬৬ জন। আর প্রাণহানী ঘটে ৭২১ জনের। ডিসেম্বর মাসে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৮৯৭টি নমুনা পরীক্ষায় ভাইরাসের উপস্থিতি মিলে ৪৮ হাজার ৫৭৮টিতে। সুস্থ হয় ৭৬ হাজার ৭৮৪ জন। মুত্যৃ হয় ৯১৫ জনের।

[caption id="attachment_293981" align="aligncenter" width="687"] মোট মৃত্যু[/caption]

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪ লাখ ২৪ হাজার ১২৪ টি নামুনা পরীক্ষা হয়। রোগী শনাক্ত হয় ২১ হাজার ৬২৯ জন। সুস্থ হয় ২২ হাজার ২৮৫ জন। মারা যায় ৫৬৮ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৩০৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১ হাজার ৭৭ জন রোগী শনাক্ত হয়। সুস্থ হয়ে উঠে ১৭ হাজার ১৮০ জন। মৃত্যু হয় ২৮১ জনের। মার্চ মাস থেকে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে মৃত্যুও। মার্চে ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৪৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়। রোগী শনাক্ত হয় ৬৫ হাজার ৭৯ জন, সুস্থ হয়ে উঠে ৪৫ হাজার ৪৭৫ জন, মৃত্যু হয় ৬৩৮ জনের। এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ১২৮টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩৭ জন। ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু ও ১ লাখ ৩৯ হাজার ২৭ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠে। মে মাসে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮০৯টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় ৪১ হাজার ৪০৮ জন। সুস্থ হয় ৫৮ হাজার ৯৪৬ জন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ১৬৯ জনের। জুন মাসে নমুনা পরীক্ষা হয় ৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১৪টি। সংক্রমণের উপস্থিতি মিলে ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ টিতে। সুস্থ হয়ে হয়ে ৭৫ হাজার ৮৭৮ জন রোগী। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৮৮৪ জনের। জুলাইয়ের প্রথম দিন ৩২ হাজার ৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৩০১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৬৬৩ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১৪৩ জনের।

দেশে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষা ও রোগী শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৩০ জুন। ওই দিন ৩৭ হাজার ৮৬টি নমুনা সংগ্রহ হয়। পরীক্ষা হয় ৩৫ হাজার ১০৫টি। আর রোগী শনাক্ত হয় ৮ হাজার ৮২২ জন। সর্বোনিম্ন নমুনা সংগ্রহ হয় গত বছরের ৫ এপ্রিল। ওই দিন ৩২০ টি নমুনা সংগ্রহ হয়। সর্বোনিম্ন রোগী শনাক্ত হয় ২১ মার্চ ৩৬ জন। সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৩০ মার্চ। ওই দিন ১ জন রোগী শনাক্ত হয়। সবচেয়ে বেশি রোগী সুস্থ হয় গত বছরের ১৫ জুন আর কম রোগী সুস্থ হয় গত বছরের ১ এপ্রিল। ১৫ জুন ১৫ হাজার ২৯৭ জন আর ১ এপ্রিল ১ জন রোগী সুস্থ হয়। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয় ১ জুলাই। ওই দিন মৃত্যু হয় ১৪৩ জনের। সবচেয়ে কম রোগী মারা গেছে গত বছরের ১৮ মার্চ। ওই দিন ১ জন রোগীর মৃত্যু হয়। শনাক্তের হার সর্বোচ্চ ছিলো গত বছরের ৩ আগস্ট আর সর্বোনিম্ন ছিলো ওই একই বছরের ৩০ মার্চ। ৩ আগস্ট শনাক্তের হার ছিলো ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ আর ৩০ মার্চ ছিলো শূণ্য দশমিক ৬৫ শতাংশ। সুস্থতার হার বেশি ছিলো চলতি বছরের ২১ মে। আর সবচেয়ে কম ছিলো গত বছরের ২ মে। ২১ মে এই হার ছিলো ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ আর ২ মে ছিলো ২ দশমিক শূণ্য ১ শতাংশ।

মাসিক শনাক্তের হার সবচেয়ে বেশি ছিলো গত বছরের জুলাই মাসে। ওই দিন এই হার ছিলো ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত বছর মার্চে ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, এপ্রিলে ১২ দশমিক শূণ্য ৮ শতাংশ, মে মাসে ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, জুন মাসে ২১ দশমকি ৪৯ শতাংশ, জুলাইয়ে ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ, আগস্টে ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ, অক্টোবরে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ নভেম্বরে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ১০ দশকি ৬৮ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শনাক্তের হার ছিলো ৫ দশমিক ১০ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ২ দশমিক ৮২ শতাংশ মার্চে ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ, এপ্রিলে ১৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, মে মাসে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ জুনে ১৭ দশমিক শূণ্য ৪ শতাংশ।

[caption id="attachment_293982" align="aligncenter" width="687"] মাসিক শনাক্তের হার[/caption]

কমে গিয়ে আবার কেনো করোনার সংক্রমণ বাড়ছে এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার সংক্রমণ কমে গেলেও সেটি আবার বাড়ার পরিপূর্ণ আশঙ্কা থাকে। সারাবিশ্বেই তা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ একেবারে শূন্যের কোটায় যেতেই পারিনি। দেশে সংক্রমণের হার খুব বেশিদিন ৩ শতাংশের নিচে ছিল না। এখন আবার সেটি ২৬ শতংশে পৌছে গেছে। দেশে করোনার সংক্রমণ এখন ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ হচ্ছে। ফলে সংক্রমণের হার বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ যদি সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকে তাহলে বোঝায় যে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আর নেই। তখন হয়ে যায় গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ বা ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন। কিন্তু, যদি আবার সংক্রমণের হার বেড়ে পাঁচের বেশি হয়ে যায়, তখন আবার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলে ধরা হয়।

জনস্বাস্থ্যবিদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, এই যে সংক্রমণ কমছে, আবার বাড়ছে, বৈজ্ঞানিকভাবে এর ব্যাখ্যা দেয়াটা বেশ কঠিন। তা এখনই দেয়া যাবে না। এর জন্যে আরও অপেক্ষা করতে হবে কিংবা আরো পরীক্ষা করতে হবে।

এদিকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোতে জোর দিচ্ছে সরকার। আর তাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সারা দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পরীক্ষার ফি দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একই পরিবারের একাধিক সদস্যের করোনা সনাক্তকরণ পরীক্ষা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় করোনা প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুধুমাত্র চলতি জুলাই মাসের জন্য বিনামূল্যে করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, গত বছর মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হলো। কিন্তু, মে-জুন-জুলাইয়ে যখন আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি গরম পড়ছিল, তখনই আমরা দেখেছি যে সংক্রমণ বেড়েছে। এবারই সেই ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে ভারত, নেপালসহ গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে। শীতের সময় বাংলাদেশসহ উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে করোনার সংক্রমণ কমে গিয়েছিল। কিন্তু, শীতপ্রধান দেশগুলোতে এ সময়ে সংক্রমণ বেড়েছিল। একটা বিষয় আমরা জানি যে, শীতপ্রধান দেশগুলোতে শীতকালে ইনফ্লুয়েঞ্জা বেড়ে যায়। আর গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে বাড়ে গরমকালে। এছাড়া দ্রুত ছড়ায় এমন ভ্যারিয়েন্টও দেশে শনাক্ত হয়েছে। তাই আমাদের ভ্যাকসিন নেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মানতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App