×

অর্থনীতি

করোনায় চলতি বছরের ৬ মাসে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২১, ১০:৪৩ পিএম

এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন এবং করোনা মহামারি সত্ত্বেও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। যদিও করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় ও বিতরণ আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংকের এসএমই খাতে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছিল, সেসব প্রতিষ্ঠান অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে এক হাজার ২০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের প্রথমার্ধে এই ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল এক হাজার সাত কোটি টাকা। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ২২৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ১৭৫ কোটি টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৪৭২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৩৪২ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ২৪৩ কোটি টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ১৫০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৯১ কোটি টাকা। সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক গত ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৮০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা করেছিল ৭০ কোটি টাকা। এবি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফাও গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। তবে এখনো হিসাব চূড়ান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, যদিও ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমাণ এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি, তবে আমাদের ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় বাড়বে। অবশ্য ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়ার পর এসএমই খাত থেকে ব্যাংকগুলোর আয় সবচেয়ে বেশি কমে গেছে। সিটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার পরিমাণও এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন।

কয়েক বছর চেষ্টার পর গত বছরের এপ্রিল থেকে আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ আর ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ঠিক হয় ৯ শতাংশ। শুরুতে ব্যাংকগুলো বলছিল, এই সুদহার কার্যকর করা কঠিন হবে। তবে এক বছর পর দেখা যাচ্ছে ঋণের গড় সুদহার এখন ৮ শতাংশেরও কম। ফলে আমানতের ৬ শতাংশ সুদও আর পাওয়া যাচ্ছে না। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, এখন আমানত আর ঋণের সুদহারের পার্থক্য ৩ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ ব্যাংক সুদ বাবদ ৪ টাকা ৩৬ পয়সা ব্যয় করে এই পরিমাণ আয় করেছে। এর সঙ্গে যোগ হবে ব্যবস্থাপনা ব্যয়। আবার সুদহারের পরে ঋণের সার্ভিস চার্জ আদায় করে ব্যাংকগুলো। অথচ যখন ঋণের সুদহার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ ছিল, তখনো ব্যাংকের এত বেশি মুনাফা থাকত না। তখনো ব্যবস্থাপনা ব্যয় আর সার্ভিস চার্জ ছিল সমান। কিন্তু আমানতের সুদহারেই ব্যাংককে ব্যয় করতে হতো বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি।

মহামারির বছরে ব্যাংকগুলো এবার গত বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করে শেয়ারধারীদের গত বছরের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ বিতরণ করতে পেরেছে। কীভাবে তারা বেশি মুনাফা করল এই প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বারবার বলছেন, ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণে যে ছাড় দেয়া হয়েছে, সে জন্য তাদের টাকা জমা রাখতে হয়নি। ফলে লভ্যাংশ বেড়েছে। তবে একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, তারা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছেন ঠিকঠাক মতোই। কারণ এখন না রাখলে পরে একসঙ্গে বেশি রাখতে হবে। সেটি ব্যাংকের ওপর চাপ তৈরি করত। সেই ঝুঁঁকি তারা নেননি।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হওয়ার পরে ব্যাংকের কোনো ক্ষতি হয়নি, সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমানতকারীদের বিষয়টা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ঋণ নেবে যারা তাদের কথা চিন্তা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ৯ শতাংশ সুদের ফলে ছোট উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ তাদের কেউ এই সুদে ঋণ দিতে চাইছে না। কিন্তু বড় উদ্যোক্তাদের ৯ শতাংশে থেকে কমে ৫/৬ শতাংশেও ঋণ দেয়া হচ্ছে। ফলে যারা অল্প আমানত রাখে, ক্ষুদ্র ঋণ নেয়, তাদের সমস্যা হয়েছে বেশি। তার মতে, বড় ঋণ আর ছোট ঋণের জন্য একক সুদহার হতে পারে না। তিনি বলেন, যিনি ১০০ কোটি টাকা নেবেন আর যিনি ৫০ হাজার টাকা নেবেন, দুজনের জন্য একই সুদহার নির্দিষ্ট করে দেয়া ঠিক না। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু লাভবান হয়েছেন বড় ব্যবসায়ীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App