×

জাতীয়

শাওনের মামলার প্রতিবাদে যা জানালেন বিশ্বজিৎ সাহা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২১, ০৮:০১ পিএম

শাওনের মামলার প্রতিবাদে যা জানালেন বিশ্বজিৎ সাহা

শাওন ও বিশ্বজিৎ সাহা

শাওনের মামলার প্রতিবাদে যা জানালেন বিশ্বজিৎ সাহা

জাতিসংঘে নিযুক্ত তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনকে উপহার দেন।

শাওনের মামলার প্রতিবাদে যা জানালেন বিশ্বজিৎ সাহা

চিত্রকর্মের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদে

জনপ্রিয় লেখক ও নির্মাতা প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের কোনো চিত্রকর্ম চুরি বা আত্মসাতের সঙ্গে নিজের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিত সাহা। এসময় ৪টি চিত্রকর্মসহ তিনি সব ছবির বিষয়ে বর্ণনা দেন।

ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মঙ্গলবার (২৯ জুন) হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চারটি ছবি আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। আসামিরা হলেন- রুমা চৌধুরী এবং রুমার প্রাক্তন স্বামী পুস্তক ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সাহা।

মামলার প্রতিবাদে চিত্রকর্মগুলোর বর্ণনা দিয়ে বিশ্বজিৎ সাহা জানান, হুমায়ূন আহমেদের ২৪টি চিত্রকর্মের মধ্যে ২০টি তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করেছি ২০১৩ সালে তার মিরপুরের বাড়িতে। একটি ছবি মেলার স্থান থেকে হারিয়ে যায়। যা জ্যামাইকার পুলিশ প্রিসিংকট জিডি করে, তাও হুমায়ূন আহেমদ এর মায়ের কাছে হস্তান্তর করি। হারিয়ে যাওয়া ছবি যদি কেউ কোথাও প্রদর্শনী করে সেই দায় ভার আমার না। যিনি এটি প্রদর্শণ করেছেন তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।

তিনি আরও জানান, ১টি চিত্রকর্ম হুমায়ূন আহমেদ জাতিসংঘে নিযুক্ত তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনকে উপহার দেন। আরেকটি বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে উপহার দেওয়া হয়। ২৪নং ছবিটি উপহার দেন হুমায়ূন আহমেদ নিউইয়র্কে নিযুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাব্বির আহমেদকে।

[caption id="attachment_293700" align="aligncenter" width="826"] জাতিসংঘে নিযুক্ত তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের হাতে চিত্রকর্ম উপহার হিসাবে তুলে দেন হুমায়ূন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত[/caption]

বিশ্বজিত সাহা বলেন, হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবি আত্মসাতের অভিযোগে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শাওন মামলা করায় আমি অবাক হইনি। অবাক হইনি মামলার নথিপত্রে তার মিথ্যাচার দেখেও। শাওন অভিযোগ করেছেন, ‌‌২০১২ সালে চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় থাকাকালে অবসরে হুমায়ূন আহমেদ বেশ কিছু ছবি আঁকেন। সে সময়েই নাকি তার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়! হুমায়ূন আহমেদ যেদিন বেলভিউ হাসপাতালে মৃতুবরণ করেন সেদিন সকালে ভয়েস আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও মিথ্যা বলেছিলেন শাওন। তিনি বলেছিলেন, হুমায়ূন আহমেদ সুস্থ হয়ে উঠছেন, তাকে বাসায় নিয়ে আসা হবে। সাক্ষাৎকারে তার এই কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের অকাল প্রয়াণ ঘটে।

বিশ্বজিত সাহা আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কখন আমার পরিচয় তা শাওনের জানার কথা নয়। ১৯৯৪ সাল থেকে যতবার হুমায়ূন আহমেদ নিউইয়র্কে এসেছেন, প্রধানত আমার সাংগঠনিকতায় মুক্তধারা নিউইয়র্ক ও নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলাকে ঘিরেই ছিল তার সকল আনন্দ-উদ্‌যাপন। শাওনের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয়েরও অনেক আগের ঘটনা সেটা। ১৯৮৫ সালে আমি যখন মোস্তফা জব্বার সম্পাদিত সাপ্তাহিক আননন্দপত্রে কাজ করি, তখন থেকেই হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে।

[caption id="attachment_293701" align="aligncenter" width="687"] চিত্রকর্মের সঙ্গে জনপ্রিয় লেখক ও নির্মাতা প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত[/caption]

তিনি বলেন, এ কথাও শাওনের জানা যে, চিকিৎসা নিতে নিউইয়র্কে এসে হুমায়ূন আহমেদ আমারই তত্ত্বাবধানে ছিলেন। বেঁচে থাকা অবস্থায় স্বজ্ঞানে তিনি হাসপাতালসহ সর্বত্র আমার ঠিকানাই ব্যবহার করেছেন। এমনকি তার মৃতুর আগে ও পরে বেলভিউ হাসপাতাল থেকে যে বিল এসেছিল তার অর্থ আমিই হুমায়ূন আহমেদের ডেথ সাটিফিকেটসহ জমা দিয়ে মওকুফ করার ব্যবস্থা করেছি। এসব কথা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেছেন শাওন!

তিনি আরও বলেন, হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবিগুলো আত্মাসাৎ করার যে লক্ষ্য তার ছিল তা আমি হতে দিইনি বলেই তার যত উষ্মা। হুমায়ূন আহমেদের মা আয়শা ফয়েজ জীবিত থাকাকালে মুহম্মদ জাফর ইকবাল সহ তার অন্যান্য পুত্র-কন্যাদের উপস্থিতিতে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মিরপুরের পল্লবীর বাসায় গিয়ে ১টি ছাড়া হমায়ূনের আঁকা অন্য সবগুলো ‍চিত্রকর্ম তার কাছে হস্তান্তর করি। আমার এই পদক্ষেপের কারণে শাওন হমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবিগুলো গ্রাস করতে পারেননি। সেটাই আমার অপরাধ। আমার লেখা হমুায়ূন ‌আহমেদের শেষ দিনগুলো' প্রকাশিত হওয়ায় নিউইয়র্কের বেলিভউ হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসায় যে কোনো অর্থব্যয় হয়নি সে খবর জানাজানি হয়ে যাওয়ায় মানুষের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করতে শাওনের অসুবিধা হয়ে পড়ে।

বিশ্বজিত সাহা বলেন, আমার লেখা বইটির প্রকাশনা রুদ্ধ করতে সেই ক্ষোভেই মরিয়া হয়ে শাওন মামলা করেছিলেন। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, নিউইয়র্কের পত্র-পত্রিকায় শাওনের বিভিন্ন কেলেংকারীর খবর প্রকাশিত হতে শুরু করে। বাংলাদেশের কয়েকজন লেখক-বুদ্ধিজীবীকে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সম্মান ক্ষুণ্ণ না করার অজুহাত তুলে তিনি এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

তিনি বলেন, আরও মর্মান্তিক ঘটনা হচ্ছে, চেয়ার থেকে পড়ে হুমায়ূন আহমেদের সেলাই খুলে যাওয়ার ঘটনা জানতে পেরে রুষ্ট হয়ে একজন হুমায়ূনপ্রেমী চট্টগ্রাম থেকে মামলা করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। অনেক অনুরোধ-উপরোধ করে তাঁকেও বিরত রাখা হয় হুমায়ূন আহমেদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে এ অজুহাত তুলে। আমি পরিস্কার ভাবে বলতে চাই, শাওনের হাতে না দিয়ে চিত্র প্রদর্শনীর সব ছবি হুমায়ূনের পরিবারের অভিভাবক হিসাবে তার মায়ের কাছে আমি নিজ হাতে হস্তান্তর করে এসেছি। যেহেতু হুমায়ূন আহমেদ এর দুই সংসারে সন্তানেরা রয়েছেন তাই আমার বিবেচনায় কোনো এক পক্ষের কাছে না দিয়ে তার মায়ের কাছে চিত্রকর্মগুলো দেওয়া শ্রেয় মনে হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App