×

জাতীয়

মাউশির ভুলে বঞ্চিত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২১, ০৮:২১ পিএম

মাউশির ভুলে বঞ্চিত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জেষ্ঠ্যতা নির্ধারণ, পদোন্নতি, সিনিয়র শিক্ষকদের পদায়ন, শিক্ষকদের টাইম স্কেল কিংবা সিলেকশন গ্রেড ইত্যাদি নানা জটিলতায় বেশ কয়েকটি মামলা আদালতে চলমান থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমিক শাখা শিক্ষক বান্ধব হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আদালতের আদেশের উল্টো পিঠে গিয়ে কাজ করছে মাউশি। এর ফলে প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষকরা। তবে এসব বিষয়ে মাউশির কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সহকারি প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলেও তাতে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখা হয়। রায়ে বলা হয়, নিয়োগকালীন শর্তানুযায়ী যারা ৫ বছরের মধ্যে বি.এড ডিগ্রী অর্জন করতে পারেনি তাদের আদৌ চাকুরীতে রাখা সমীচীন নয়। তবে মানবিক কারণে তাদের পদোন্নতি তাদের বি.এড পাশের তারিখ হতে দেয়া যেতে পারে। কিন্তু এই আদেশের উল্টো গিয়ে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় শর্ত ভঙ্গকারি শিক্ষকদেরকেও যোগদানের তারিখ হতে জ্যেষ্ঠতা গণনা করে ৪২০ জন সহকারি প্রধান শিক্ষক কিংবা সহকারি জেলা শিক্ষা অফিসার পদোন্নতি দেয়া হয়, যাদের মধ্যে দেড় শতাধিক শিক্ষক পদোন্নতির যোগ্য ছিলেন না। চাকুরী আচরণ বিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, চাকুরীতে কর্মরত অবস্থায় যোগদানের পূর্বে কোনো প্রশিক্ষণ অথবা কোনো ডিগ্রি অর্জন করে এবং সেই তথ্য গোপন করে কোনো অনৈতিক সুবিধা বা পদোন্নতি নেয়া হলে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবু মাউশি থামছে না।

এরকম পরিস্থিতিতে ২০০৮ সালের মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি পরিপত্র অনুযায়ী শুধু সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ থেকে কর্মরত শিক্ষকদের বিএড ডিগ্রি অর্জনে বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে অনেকেরই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রি অর্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারপরও এসব অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকেই বিএড করেছেন এবং গ্রেডেশন তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।  যাদের ফাজিল ও কামিল যথাক্রমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমমান নয় তারাও বিএড করে কিভাবে এতে অন্তর্ভুক্ত হলেন তাতেও অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ রকম বহু শিক্ষককে বিধিবহির্ভূতভাবে মাউশি গ্রেডেশনে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং যোগদান থেকে জ্যেষ্ঠতা দিয়ে পদোন্নতির জন্য সব ব্যবস্থা করছেন।

জ্যেষ্ঠতার আইনের ধারা অনুযায়ী এ সম্পর্র্কিত কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে পিএসসির পরামর্শ নিয়ে জ্যেষ্ঠতা সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত দিবে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু দেরিতে বিএড করা শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়া যাবে কিনা- গত মার্চে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়েই কেবল মতামত নিয়েছে। অথচ তাদের জ্যেষ্ঠতা কোন সময় থেকে হবে- তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন জনপ্রশাসনে পাঠায়নি মাউশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, কুমিল্লা জিলা স্কুলে ১৯৯৯ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মুখতারুল হক ২০১৯ এর অক্টোবরে প্রকাশিত খসড়া গ্রেডেশনে নাম ছিল না কিন্তু ২০২০ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জনের পর ২০২১-এ প্রকাশিত খসড়া গ্রেডেশনে তাকে ১৯৯৯ সালের যোগদানের তারিখ থেকে জ্যেষ্ঠতা দেয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতি হলে তিনি পদোন্নতি পেতেন না এবং সহকারী শিক্ষকই থেকে যেতেন। কিন্তু ৪র্থ বার গত ২১ জানুয়ারি তারিখে প্রকাশিত গ্রেডেশনে তাকে যোগদান থেকে জ্যেষ্ঠতা দেয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আদেশ অনুযায়ী ১৯৮৫ সাল থেকে দাখিলকে এস.এস.সি.-এর সমমান এবং ১৯৮৭ সাল থেকে আলিম-কে এইচ.এস.সি.-এর সমমান দেয়া হয়। ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের আদেশ অনুযায়ী ২০০৬-২০০৭ ও ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে যথাক্রমে ফাজিল ও কামিলকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমমান দেয়া হয়। কিন্তু দেখা যায়, গ্রেডেশনে প্রায় ২শ জন শিক্ষক ১৯৮৫ সালের আগের দাখিল পাশকে এস.এস.সি. এবং ১৯৮৭ সালের পূর্বের আলিম পাশকে এইচ.এস.সি.-এর সমমান দেখিয়ে তারা নিজেরাই পিডিএস পূরণ করেছেন- যা তথ্য গোপন করার শামিল। এসব বিষয়ে একাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষক গ্রুপ লিখিত অভিযোগ জানালেও মাউশি আমলে নেয়নি। শুধু তাই নয় ২০১৮ সালে এসব তথ্য গোপন করে ৩৪ জন শিক্ষক সহকারী প্রধান শিক্ষক কিংবা সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি নিয়েছেন। তথ্য গোপানকারী এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাদের পদানবতি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অন্যান্য শিক্ষকরা দাবি জানিয়েছেন।

শিক্ষকরা বলেছেন, ২০১৪ সালে প্রকাশিত ২য় শ্রেণির সহকারী শিক্ষক পদে গেজেটভূক্ত হন নাই তাদেরকেও প্রথম শ্রেণির সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য রাখা হয়েছে। বিধি সম্মত চূড়ান্ত গ্রেডেশন প্রকাশিত না করে পদোন্নতি দেয়া হলে ভবিষ্যতে সরকারি মাধ্যমিকে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা যাবে বলে আশঙ্খা শিক্ষকদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App