×

সারাদেশ

সুবর্ণচরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২১, ০৯:০১ এএম

সুবর্ণচরে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশন

রবিবার মেয়েটি সকাল থেকে অনশন শুরু করে।

দুই বছর প্রেম করে আলা উদ্দিন ও মিতু (ছদ্মনাম)। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করেন প্রেমিক আলা উদ্দিন। সম্প্রতি বিশ্বস্ত সূত্রে কিশোরী জানতে পারেন প্রেমিক আলা উদ্দিন অন্যত্র বিয়ে করার প্রস্ততি নিচ্ছেন এমন খবর পেয়ে কোন অভিভাবক ছাড়া নিজেই সূদূর চাঁদপুর থেকে নোয়াখালী সুবর্ণচরে এসে বিয়ের দাবিতে অনশন করেছেন কিশোরী মিতু ১৭ (ছন্দনাম)। দাবি না মানলে আত্মহত্যার হুমকিও দেন তিনি। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে গ্রামপুলিশ কিশোরীকে প্রেমিক আলা উদ্দিনের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে চরজব্বার থানার এসআই দিপকসহ রাত ৮টার দিকে কিশোরীর গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

কিশোরী চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্তর্ব্যপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর মিজানুর রহমানের মেয়ে। রবিবার (২৭ জুন) ঘটনাটি ঘটে সুবর্ণচর উপজেলার ৩ নং চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের উরিরচর গ্রামের নুর ইসলামের বাড়িতে। এদিন সকাল ৯টা থেকে অনশন শুরু করে কিশোরী। খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে মুহুর্তেই শত শত এলাকাবাসী ভিড় করেন অভিযুক্ত প্রেমিক আলা উদ্দিনের বাড়িতে। অভিযুক্ত প্রেমিক আলা উদ্দিন (২১)  উরিরচর গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে।

কিশোরী অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালের শেষের দিকে আলা উদ্দিন চাঁদপুর হাজিগঞ্জের মোহাম্মদপুর গ্রামে আমার পাশের বাড়িতে টিউবয়েল বসানোর কাজ করেন, ওই বাড়িতে প্রাইভেট পড়ার সুবাধে আলা উদ্দিন প্রায় আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করলে আমার দোলাভাইয়ের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে। দীর্ঘদিন ফোনে কথা বলার পর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় চাঁদপুরের কয়েকটি হোটেলে নিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে এবং খাওয়ার জন্য কিছু ঔষধও কিনে দেয়।

সম্প্রতি তাকে বিয়ের জন্য তাগিদ দিলে আলা উদ্দিন আমাকে তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার জন্য বলে, পরে আলা উদ্দিনের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আমি আমার বাবাসহ তার বাড়িতে আসি। এসব ঘটনা শুনে আলা উদ্দিনের বাবা-মা আমাকে মেনে নিতে রাজি হয় না। তখন আলা উদ্দিন তার বোনের বাড়িতে লুকিয়ে থাকে। পরে আমার বাবাসহ ৩নং চরক্লার্ক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল বাসারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করলে ছেলে লুকিয়ে থাকায় চেয়ারম্যান ছেলেকে হাজির করবে মর্মে আমাদের উভয় পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নেন এবং ১ মাসের সময় নেন। পরে আমি আমার বাবাসহ চাঁদপুর হাজিগঞ্জে বাড়িতে চলে যাই। গত ২০ জুন আমি আলা উদ্দিনের গ্রামের কয়েকজনের কাছে জানতে পারি আলা উদ্দিন তার খালাতো বোনের সঙ্গে বিয়ের প্রস্ততি নিচ্ছেন। এমন খবর পেয়ে আর দেরি করিনি। গত ২৫ জুন আমি চাঁদপুর থেকে আলা উদ্দিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে সুবর্ণচর আসি। সুবর্ণচরে আসার পর আলা উদ্দিন সোনাপুর নামক স্থানে ডেকে নিয়ে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দেয়। এরপর আমাকে একাই তার বাড়িতে পাঠায়। পরে আমি আলা উদ্দিনের বাড়িতে এসে অবস্থান নিলে তারা আমাকে গালমন্দ করে বের করে দেয়। থাকার জায়গা না থাকায় পার্শ্ববর্তী বাড়ির এক মহিলাকে খালা ডেকে তার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। আলা উদ্দিন সাথে সাথে তার ব্যবহারিক মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।

উপায়ান্তর না দেখে আমি অনশনের সিদ্ধান্ত নিই এবং আজ সকালে তার বাড়িতে অবস্থান করি, আলা উদ্দিনকে তার পরিবার লুকিয়ে রেখেছে। তারা যদি আলা উদ্দিনকে এনে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না করে তাহলে আমি এখানেই আত্মহত্যা করবো।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলা উদ্দিনের মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দেওয়ার পরেও তাকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অভিযুক্ত আলা উদ্দিনের বাবা বলেন, আমার ছেলের সাথে মেয়ের সম্পর্ক আছে এটা আগে জানতাম না। মেয়ে তার বাবাসহ আসার পর আমরা চেয়ারম্যানের কাছে যাই। চেয়ারম্যান ১ মাসের সময় দিয়েছে, ছেলে কোথায় আছে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। ছেলেকে এখনো বিয়ে পড়ায়নি, এখন মেয়েটির কাছ থেকে শুনেছে , আমরা জানিনা।

চরক্লার্ক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আবুল বাসার বলেন, ১০/১২ দিন আগে মেয়েটি তার বাবা সহ আমার কাছে এসেছিলো, যেহেতু ছেলেটি পলাতক তাই আমি উভয় পক্ষে মুচলেকা নিয়ে এক মাসের মধ্যে ছেলের বাবাকে হাজির হওয়ার কথা বলেছি, ছেলের বিয়ে হয়েছে এমন খবর শুনিনি।

চরজব্বার থানার এসআই দিপক বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই, তখন পরিষদের গ্রাম পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে ব্যাকের বাজার নিয়ে আসে, সেখানেই মেয়ের মুখ থেকে সব শুনি। যেহেতু মেয়ের সাথে ছেলের যে ঘটনার অভিযোগ সেটি চাঁদপুর, ঘটনা যে থানার অধীনে সে থানায় অভিযোগ করলে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে মেয়েটি। পরে আমরা মেয়েটিকে ঐ থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়ে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য সহায়তা করি।

চরজব্বার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউল হক তরিক খন্দকার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App