×

সারাদেশ

সরকার ভোমরা স্থল বন্দর থেকে রাজস্ব হারিয়েছে হাজার কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২১, ০৭:৫৩ পিএম

সরকার ভোমরা স্থল বন্দর থেকে রাজস্ব হারিয়েছে হাজার কোটি টাকা

সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরের শুল্ক স্টেশন।

দ্বৈত নীতির প্রভাবে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দর রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। এই নীতির কারণে দুই অর্থ বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। চলতি অর্থ বছরে (১১ মাসে) ৩শ ৬৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি হয়েছে। এর আগে গত অর্থ বছরে ঘাটতি হয়েছে ৬শ ২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে তিন মাস আমদানি-রপ্তানি বন্ধ ছিল। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলেও ভোমরা স্থল বন্দরে শুধু মাত্র দ্বৈত নীতির প্রভাব বিস্তার করায় ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর ছেড়ে মাত্র ৫৩ কিমি দূরে যশোর বেনাপোল বন্দরে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। পাশ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরে সুযোগ সুবিধা বেশি থাকায় দেশের অপর সম্ভাবনাময় সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দর গত ও চলতি অর্থ বছরে মোটা অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

বেনাপোল ও ভোমরার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি ট্রাকে আঙ্গুর (২৫ টনের হিসাব) থাকে সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার ক্যারেট। প্লাষ্টিকের ক্যারেটের ওজন (আঙ্গুর বাদে) দেড় কেজি। ক্যারেটের ওজন বাদ দিলে নিট আঙ্গুর থাকে সাড়ে ২৩ টন (কমবেশি)। এক হাজার ক্যারেটের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ট্রাকে ৭ শতাংশ টিআর বাবদ দেড় টন বাদ যায়। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের বেনাপোল বন্দরে সরকারি শুল্ক দিতে হয় সাড়ে ২৩ টনের।

এদিকে ভোমরা স্থল বন্দরের ব্যবসায়ীরা নিট সাড়ে ২৩ টনের ১১ লাখ ৮২ হাজার টাকা শুল্ক দিলেও বেনাপোল বন্দরের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করে ২০ টন ২ শ ৫০ কেজির ১০ লাখ ৮২ হাজার টাকা শুল্ক দিয়ে, প্রতি ট্রাক আঙ্গুরে দেড় লাখের অধিক টাকা, সরকারের বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে লুটতরাজ করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সমন্বয়ে তৈরি সিন্ডিকেট।

টমেটোর ক্ষেত্রেও একই দুর্নীতি লক্ষ্য করা যায়, যেমন এক ট্রাক টমেটো (২৫ টন) প্লাষ্টিকের প্রতি ক্যারেটের ওজন ১ কেজি ৫ শ গ্রাম (কমবেশী)। সে অনুযায়ী, ৭ শতাংশ টি আরে ব্যবসায়ীরা ছাড় পাবে দেড় টনের একটু বেশি। সেদিক দিয়ে লক্ষ্য করা যায়, বেনাপোল বন্দরে ২৫ টনের এক ট্রাক টমেটোর ২০ শতাংশ টিআরে ব্যবসায়ীরা ২০ টনের শুল্ক দিচ্ছে ৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। পক্ষান্তরে ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ীরা প্রায় সাড়ে ২৩ টনের ৭ শতাংশ টিআরে শুল্ক দিচ্ছে ৫ লাখ সাড়ে ৯৪ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে হিসাব করে দেখা যায়, বেনাপোল বন্দরে টমেটোর প্রতি ট্রাকে সাড়ে ৮৮ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পকেট ভারি করছে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।

এভাবে প্রতিদিন ভারত থেকে যশোর বেনাপোল বন্দর দিয়ে বিভিন্ন কাঁচামাল নিয়ে ৪০ থেকে ৫৫ ট্রাক, মাসে ১২শ থেকে দেড় হাজার, বছরে ১২ থেকে ১৪ হাজার ট্রাক (মৌসুমে এর দ্বিগুণ) বিভিন্ন প্রকার কাঁচামাল আমদানি করে ব্যবসায়ীরা। এক ট্রাক (২৫ টন) আঙ্গুর, টমেটো উল্লেখিত পরিমাণ টাকা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা যদি পকেটে ভরে তাহলে, বছর জুড়ে শুধুমাত্র কাঁচামালের সবগুলো পণ্যের উপর একই চিত্রে হাজার হাজার কোটি টাকা, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য, বেনাপোল স্থল বন্দরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেট লাগামহীনভাবে লুটতরাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীরা কাচামালের বিভিন্ন পন্যের উপর ৩ কেজি ৩ শ গ্রামের কমবেশি টিআর পাচ্ছে। প্রতি ক্যারেটের ওজন দেড় কেজি সে হিসাবে ব্যবসায়ীরা ৭ শতাংশ টি আর পাবে। দ্বিগুনের বেশী টিআর দেওয়ায় সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলার সঙ্গে সঙ্গে বলেন, কিভাবে টিআর দিচ্ছে সবকিছু দেখাশুনা করেন সহকারি কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ভাল বলতে পারবেন। আমি জানি না।

সহকারি কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান নিশ্চিত করে জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত কাচামালের ট্রাক প্রতি ৮০ থেকে ৮৯ শতাংশ শুল্ক ব্যবসায়ীরা পরিশোধ করে। আমদানিকৃত কাচামালের খালি ক্যারেটের ওজন হিসাব করে ব্যবসায়ীরা ৭ শতাংশ টিআর পাবে। নিট ৭ শতাংশ টিআর বাকি ৪ শতাংশ কোথায় জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রতিবেদক ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।

সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, আমি শুনেছি, বেনাপোল বন্দরে প্রতিটি কাঁচামালে ব্যবসায়ীদের ২০ শতাংশের কম বেশী টিআর দিচ্ছে। যেটা অনেক বড় দুর্নীতি। এটা দেশের ক্ষতি আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকার। এই ধরনের দুর্নীতি বন্ধ হওয়া উচিত।

ভোমরা স্থল বন্দরের কাস্টমস কমিশনার সামছুল আলম বলেন, আইন অনুযায়ী বন্দর চলবে। সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসায়ীরা বন্দরে ব্যবসা করবে। আমি যত দিন দায়িত্বে আছি ততদিন কোন প্রকার দুর্নীতির আশ্রয় দেওয়া হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App