×

খেলা

আগে গ্র্যান্ডমাস্টার তারপর বিশ্বকাপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২১, ০৮:২১ এএম

আগে গ্র্যান্ডমাস্টার তারপর বিশ্বকাপ

আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান।

উপমহাদেশে বাংলাদেশ দাবায় ১৯৮৭ সালে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার পায়। ভারত পায় ১৯৮৮ সালে। নিয়াজ মোর্শেদের পর ভারতের বিশ্বনাথ আনন্দ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার গৌবর অর্জন করে। নিয়াজ মোর্শেদ বিশ্ব দাবায় প্রভাব রাখতে না পারলেও ভারতের আনন্দ ২০০৭ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে রেখেছিলেন শিরোপা। নিয়াজের পর আরো চারজন গ্র্যান্ডমাস্টার পেয়েছে বাংলাদেশ। এরা হলেন জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, আব্দুল্লাহ আল রাকিব ও এনামুল হোসেন রাজিব। অথচ ভারতের এখন গ্র্যান্ডমাস্টারের সংখ্যা ৬০ জন। আর বাংলাদেশ এখন ষষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের সন্ধানে ব্যস্ত। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন। ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশে দাবার ভবিষ্যৎ এবং নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান।

দাবায় ফাহাদের হাতেখড়ি পাঁচ বছর বয়সে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ফাহাদ যখন ঢাকায় আসে, তখন সে সবে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদ্বন্দ্বী ভুল চাল দিলে তর্ক-বিতর্ক হয়। রাগ করে ফাহাদ দাবার বোর্ড উল্টে দেয়। বাবা বোঝান, ‘প্রতিযোগিতার খেলায় রাগ করতে নেই। রেফারি আছে, তিনি ভুল ধরিয়ে দেবেন।’

সে খেলায় ফাহাদ শুধু জেতেনি, হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন। পুরস্কার হিসেবে তাকে স্বর্ণপদকও দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সাল থেকে ফাহাদ দাবায় নিয়মিত। ২০১১ সালে মাত্র আট বছর বয়সে ন্যাশনাল সাব-জুনিয়র চ্যাম্পিয়নও হয় সে। ২০১২ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত অল এশিয়ান স্কুল চেস ডাবল চ্যাম্পিয়ন্সে দুটি স্বর্ণপদক ও একটি ব্রোঞ্জ পদক জেতে। ২০১৩ সালে থাইল্যান্ডে আয়োজিত এশিয়ান এন্ড অ্যাজ গ্রুপ চেজ চ্যাম্পিয়নে একটি স্বর্ণ ও একটি রৌপ্য পদক জয় করেন। ২০১৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ চেজ প্রতিযোগিতায় হয় রানার আপ। দাবাড়ু ফাহাদ রহমান ২০১৯ সালে বয়স মাত্র ১৬ বছর বয়সেই দাবা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। ফাহাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ভারতের বিশ্বনাথ আনন্দের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া।

সম্প্রতি ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবায় পুলিশের আন্তর্জাতিক মাস্টার মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফাহাদ অর্জন করেছেন ২৫ রেটিং পয়েন্ট। আগে ছিল ২৩১৪। এ মুহূর্তে ফাহাদের রেটিং ২ হাজার ৩৩৯। অর্থাৎ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। দাবার সর্বশেষ এবং সর্বোচ্চ আনুষ্ঠানিক খেতাব হলো গ্র্যান্ডমাস্টার (জিএম)। ২ হাজার ৫০০ এর বেশি রেটিং এবং এর সঙ্গে অন্যান্য গ্র্যান্ডমাস্টার আছেন এমন বিভিন্ন টুর্নামেন্টে তিনটি নর্ম লাভ করলে তাকে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব দেয়া হয়। এটি একজন দাবাড়ুর জন্য সর্বোচ্চ সাধারণ খেতাব। দাবায় ২০০০-২২০০ রেটিং থাকলে তাকে বলা হয় ক্যান্ডিডেট মাস্টার। ২২০০-২৩০০ রেটিং থাকলে ফিদে ক্যান্ডিডেট মাস্টার (সিএম)। ২৩০০-২৪০০ রেটিং থাকলে ফিদে মাস্টার (এফএম। রেটিং ২৪০০-২৫০০ হলে তিনি আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম) নর্ম অর্জন করবেন। আর ২৫০০-২৭০০ রেটিং থাকলে তিনি গ্রান্ডমাস্টার (জিএম)। ২৭০০ বা এর ঊর্ধ্বে যাদের রেটিং তাদের বলা হয় সুপার গ্রান্ডমাস্টার।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক রেটিং দাবার শিরোপার জয়ী ফাহাদ ভোরের কাগজকে জানান, এ মুহূতে আমার ভাবনাজুড়ে রয়েছে একের পর এক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে রেটিং বাড়ানো। ৫ জুলাই থেকে আরেকটি টুর্নামেন্ট শুরুর কথা রয়েছে। এ টুর্নামেন্টটি বেশ বড় পরিসরে হওয়ার কথা। এ টুর্নামেন্টেও শিরোপা জিততে চাই।

আপনি কী বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেন? ফাহাদের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর স্বপ্ন কে না দেখে? হ্যাঁ আমিও দেখি। আমার ভাবনাজুড়ে এ মুহূর্তে রয়েছে আগে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার তার পর বিশ্বকাপ শিরোপা জয়। দেশ-বিদেশে এ পর্যন্ত কয়টি শিরোপা জিতেছেন তা সঠিক করে বলতে পারেননি ফাহাদ। যার সাফল্যের পাল্লা এত ভারি তার কাছে সাফল্যে হিসাব থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। স্পন্সর সংকটে ভোগা আগামীর গ্র্যান্ডমাস্টার ফাহাদ রহমান ভোরের কাগজকে জানান, আমাদের দেশে স্পন্সর পাওয়া কঠিন। দাবা খেলে ক্যারিয়ার গড়া বা জীবন চালানো তো প্রায় অসম্ভব।

দাবাড়ুদের সব সময় রুটি-রুজি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। কারণ, চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। অথচ ভারতে শুধু স্কুল দাবায় ১ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। সেখানে দাবাড়ুদের চাকরির নিশ্চয়তা আছে। এ মুহূর্ত আমার কোনো স্পন্সর নেই। স্পন্সর থাকলে ইউরোপ-আমেরিকার বড় বড় টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া সহজ হতো।

দাবায় সম্মান আছে, সম্মানী নেই। এ সম্পর্কে ভোরের কাগজকে ফাহাদ জানান, আমাদের প্রাইজমানি বাড়ানো উচিত। একটি টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতলে যে প্রাইজ মানি দেয়া হয় তা যথেষ্ট নয়। অনেক সময় দেখা যায়, টুর্নামেন্টের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে তা দিয়ে টুর্নামেন্ট চালানোই কঠিন। বর্তমানে দাবা ফেডারেশনে যারা আছেন তারা দেশের দাবার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় তারা কতটুকু সফলকাম হন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App