×

সাহিত্য

বিকল্পপথ ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২১, ০৯:১৭ এএম

পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরপরই ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়, বাঙালি সামরিক জাতি নয়। সুতরাং সামরিক বাহিনীতে তাদের যথাযথ প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন ওঠে না। বাঙালিদের সেনাবাহিনীতে ভর্তির ব্যাপারে নানাভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ১৯৫৬ সালে শেখ মুজিব এর তীব্র প্রতিবাদ করেন।

পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোতে সামরিক বাহিনীর ভ‚মিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে শতকরা ৬০ ভাগ ছিল পাঞ্জাবি প্রতিনিধি, পাঠানদের ছিল শতকরা ৩৫ ভাগ এবং বাঙালিসহ অন্যান্যের ছিল শতকরা ৫ ভাগ মাত্র। সমগ্র সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে আর্মির সংখ্যা ছিল শতকরা ৯০ ভাগ।

১৯৬৩ সালে আর্মিতে বাঙালি অফিসারের সংখ্যা ছিল শতকরা মাত্র ৫ ভাগ। বাঙালি নৌ অফিসারের সংখ্যা ছিল শতকরা ১৯ ভাগ, টেকনিক্যাল এবং নন-টেকনিক্যাল ৯ ভাগ। নৌ সদস্যদের সংখ্যা ছিল শতকরা ২৮.৫ ভাগ। বিমানবাহিনীর শতকরা ১১ ভাগ ছিল পাইলট। ২৭ ভাগ নেভিগেটর, ১৭ ভাগ টেকনিক্যাল অফিসার, ৩১ ভাগ প্রশাসনিক অফিসার, ১৩ ভাগ

এডুকেশন অফিসার ছিল বাঙালি। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এই হিসাবের আনুপাতিক হারের তেমন হেরফের হয়নি। ১৯৭১ সালে ৪৮ জন মেজর জেনারেল এবং তদূর্ধ্বদের মধ্যে ১৭ জন ছিল পাঞ্জাবি, ১৯ জন উত্তরপশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের, ১১ জন রিফিউজি এবং ১ জন মাত্র ছিল বাঙালি। রাষ্ট্র পরিচালনায় ও রাষ্ট্র কাঠামোয় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর উত্তরোত্তর ক্ষমতা দখল এবং করায়ত্ত করার ক্ষেত্রেও বাঙালি সামরিক প্রতিনিধিত্ব ছিল অতি সামান্য। শুধু তাই নয়, ১৯৫০ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় রেভিনিউ বাজেটের শতকরা ৬০ ভাগ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয়। এর মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ টাকা ব্যয় হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব পাকিস্তানের ব্যয় হতো অতি অল্পই। বাঙালি জাতির প্রতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক শোষণ, বৈষম্য ও দমনপীড়নের ফলশ্রুতি সশস্ত্রবাহিনীর বিক্ষুব্ধ চিত্ত কতিপয় বাঙালি অফিসার ও সদস্যের মনে বিদ্রোহের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে তোলে।

আইয়ুব খানের লৌহশাসনে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের সব সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতিকে চিরদাসত্বের নিগড়ে বেঁধে ফেলার জন্য আইয়ুব খান প্রবর্তন করেছিলেন ‘মৌলিক গণতান্ত্রিক’ ব্যবস্থা। মুষ্টিমেয় গ্রামীণ টাউটদের অনুকম্পা ও উৎকোচ বিতরণ করে রাষ্ট্রক্ষমতায় পাকাপোক্তভাবে আসীন থাকার বিরুদ্ধে জনগণের প্রবল ঘৃণা ও প্রতিবাদ ছিল প্রকাশিত ও দৃশ্যমান। এই ব্যবস্থায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমেও ক্ষমতাসীন স্বৈর সরকারকে হটানো ছিল প্রায় অসম্ভব। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকা সত্তে¡ও ১৯৬৪ সালের মৌলিক গণতন্ত্রী ব্যবস্থাধীন নির্বাচনে আইয়ুব খানকে ক্ষমতাচ্যুত করা অসম্ভব মনে করে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি রাজনীতিবিদ ও কতিপয় সামরিক অফিসার ভীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়লেন। নিয়মতান্ত্রিক পথে বাঙালির হৃত অধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠা এবং প্রথাসিদ্ধ চাপিয়ে দেয়া অবিচার নিষ্ঠুর শোষণ ও শাসনের হাত থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি অর্জন সুদূর পরাহত বলেই মনে হলো।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘বিকল্প-পথ ভাবনা-২’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এ ছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App