×

সারাদেশ

এখন তাদের চাওয়া ভূমির মালিকানা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২১, ০৯:২০ এএম

এখন তাদের চাওয়া ভূমির মালিকানা

ঘর পেয়ে খুশি শ্রীমঙ্গলের খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দারা। ছবি: ভোরের কাগজ

পাহাড়ের ওপর ৩০টি পরিবার। পাহাড়ের ওপাশেই ভারতের মেঘালয়। অন্যদিকে ১২ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল শহর। মূল লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন এ জনপদ ছিল আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থেকে অনেক দূরে। অসুস্থ কোনো ব্যক্তিকে ডাক্তার দেখাতে পায়ে চলা দুর্গম পথ বেয়ে ‘ভারে’ করে শ্রীমঙ্গল নিয়ে যেতে হতো। ছিল না বিজলি বাতির আলো। অন্ধকার পাহাড়ে কেরোসিন কুপিই ছিল সম্বল। শিক্ষাও ছিল অন্ধকারেরই নামান্তর। মাতৃভাষায় শিক্ষা ছিল সুদূরপরাহত। এজন্য অনেকেই সীমানার কাঁটাতার পেরিয়ে চলে যেতেন মেঘালয় রাজ্যে, মাতৃভাষায় পড়াশোনা করতে। এখন আর কাউকে মেঘালয় কিংবা শিলং যেতে হয় না। ভারে করে রোগী কিংবা পানের বোঝা মাথায় করে সর্পিল পথ বেয়ে শ্রীমঙ্গল যেতে হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাস্তা করে দিয়েছেন। ব্রিজ করে দিয়েছেন। এখন চান্দের গাড়িতে চেপে বসলেই শ্রীমঙ্গল। মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার জন্য বই দিয়েছেন। রয়েছে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা ওখানেই মাতৃভাষায় পাঠ নেয়।

মাথায় নিয়ে দুর্গম, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে শ্রীমঙ্গল যেতেন পান বিক্রি করতে। এখন আর তাকে মাথায় বোঝা নিয়ে হাঁটতে হয় না বলে খুশি। অক্ষরজ্ঞানহীন বেলি সুরং নিজের নামটিও লিখতে জানেন না বলে দুঃখবোধ হলেও তার একমাত্র মেয়ে স্কুলের শিক্ষক, যা তার জন্য অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। বললেন, আগে পায়ে চলার মতো ছোট্ট একটি রাস্তা ছিল। এখন প্রধানমন্ত্রী একটু বড় রাস্তা করে দিয়েছেন। দুটি ব্রিজ করে দিয়েছেন। দুর্গম পাহাড়ে বিদ্যুৎ দিয়েছেন। আমাদের কষ্টের দিন শেষ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানিয়েছেন, এই কর্মসূচির আওতায় ৩ হাজার ৫৫৪টি বসতঘর নির্মাণ বাবদ মোট বরাদ্দ ৬ হাজার ৪৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২ হাজার ৬৭২টি বাইসাইকেল বাবদ বরাদ্দ ২০০ কোটি ৪ লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষাবৃত্তি বাবদ বরাদ্দ ৪৫০ কোটি ২৫ লাখ টাকা, শিক্ষা উপকরণ বাবদ বরাদ্দ ১৫২ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বেতন বাবদ বরাদ্দ ৩৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। আটটি বিভাগের ৪৬টি জেলার ২০৭টি উপজেলার জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৩০০ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

তিনি জানান, এ কর্মসূচির আওতায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে প্রত্যেককে এককালীন ২৫ হাজার টাকা করে মোট ৬ হাজার ২৫ কোটি টাকা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। এরই মধ্যে অনলাইন ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে ৪ হাজার ৯৯৪ আবেদন গৃহীত হয়েছে।

এসএসসির ৪০ শতাংশ এবং এইচএসসির ৬০ শতাংশের ফলাফল আমলে নিয়ে যোগফলের ওপর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

খাসিয়াপুঞ্জির জনগোষ্ঠীর দাবি, চা বাগানের মালিকরা যদি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে, তাহলে তাদের আর থাকার জায়গা থাকবে না। তারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছেন। এখন ভূমির মালিকানা চান তারা। বেলি সুরং বলেন, ৩০ বছর ধরে এখানে আছি। আমরা যেন সারা জীবন এখানে থাকতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটিই চাওয়া।

শিক্ষার্থী রোনাল্ড বলেন, আমাদের বসবাসের জন্য কোম্পানিকে ট্যাক্স দিতে হয়। আমরা যেন কোনো প্রকার ট্যাক্স ছাড়াই বসবাস করতে পারি, প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেবেন। শ্রীমঙ্গলের ৬নং হোসনাবাদ খাসিয়াপুঞ্জি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আর্ণিকা সুরং বলেন, নিজ মাতৃভাষায় পড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমাকে আমার ভাষায় পড়াশোনা করার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শিলংয়ে যেতে হয়েছে। আর এখন আমি আমার শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় পাঠদান করছি।

এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আর্ণিকা। সেসঙ্গে ভূমির মালিকানার জন্য সুনজর চান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App