×

জাতীয়

স্বাধীনতা স্তম্ভে দিনে দশ হাজার দর্শনার্থীর প্রত্যাশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২১, ০৬:২০ পিএম

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পে প্রতিদিন দশ হাজার দর্শনার্থী আসবেন এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য প্রতিদিন দশ হাজার মানুষ এ প্রকল্প দেখতে আসবেন। প্রাথমিকভাবে আমরা আশা করছি পাঁচ হাজার দর্শনার্থী আসবেন। যাদের মধ্যে থেকে দুই হাজার দর্শনার্থীকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিজস্ব পরিবহনে আনা হবে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্যই স্বাধীনতা স্তম্ভ তৈরি করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ মানুষের প্রত্যাশা অনুসারেই চূড়ান্ত করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) গণপূর্ত ভবনের সম্মেলন কক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় চলমান কার্যক্রম অবহিতকরণ ও উদ্যানকে সবুজায়নের বিষয়ে উদ্ভিদবিদ, পরিবেশবিদ, স্থপতি, প্রকৌশলী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয়ে মতবিনিময় কর্মশালায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়ার সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভায় উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামিম আকতার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবুসহ অন্যরা।

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতা স্তম্ভ প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিশেষ একটি কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হবে। যার আওতায় রমনা পার্ককেও এনরিচ করা হবে।

বিশাল এ প্রকল্পে খুব সহজেই পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় কাটাতে পারবেন দর্শনার্থীরা। যার জন্য টয়লেটের সুব্যবস্থাসহ ফুড কিয়স্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে কোনো খাবার তৈরি করা হবে না। সুতরাং এখানে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। এটা রেইন সেড হিসেবেও ব্যবহার করা হবে।

গাছ কাটা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সর্বমোট ১০০টি গাছ কাটার কথা ছিল। তবে গাছ কাটা হয়েছে ৬০ থেকে ৭০টি। আর বৃক্ষ নিধন হবে না। হলেও সর্বোচ্চ ১০টি গাছ কাটার প্রয়োজন হতে পারে। তবে প্রচুর বৃক্ষ রোপন করা হবে।

সভায় ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, উদ্যানে আরো কিভাবে গাছপালা বাড়ানো যায় এবং সেখানে যাতে বিদেশি কোন গাছ লাগানো না হয় সেদিক খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় গাছ লাগানো হোক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, নকশায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনাগুলো ফুটে উঠেনি। আর রেস্টুরেন্টসহ এ ধরনের যা কিছু মাটির নিচেই হওয়া উচিত।

অধ্যাপক জসীম উদ্দিন বলেন, প্রকল্প হওয়ার বিষয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু স্থাপনা যাতে কম থাকে সেদিকে ও পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে।

অধ্যাপক ড. মো. আজমল হোসেন ভুইয়া বলেন, নকশা দেখে মনে হচ্ছে এটি পার্কেরই পরিবর্তিত রুপ। এটি কোনোভাবেই বিনোদন কেন্দ্র হওয়া উচিত নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে পরিবেশ ঠিক রেখে নকশা সংশোধন করা প্রয়োজন। আমরা স্বাধীনতা স্তম্ভ চাই তবে সেটা পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ধ্বংস করে নয়।

মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, প্রকল্পের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য না থাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের উচিৎ পরিস্কার করে বলা ঠিক কতগুলো গাছ কাটা হবে। পরিবেশ-জীবন ও ইতিহাস সমন্বয় করে দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, একটা ফুল ছিড়লেও পরিবেশ নষ্ট হয়। এটা খেয়াল রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ সেরা স্থপতিদের নিয়ে নকশা সংশোধন করা উচিত। ফুড কিয়স্ক, টয়লেটের মতো এ ধরনের যেসব স্থাপনা মাটির নীচেই করা হোক।

সভায় অন্য বক্তারা বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঢাকা শহরে ফুসফুসের মত কাজ দিচ্ছে। এখানকার পরিবেশ প্রতিবেশ অক্ষত রেখেই স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে এবং স্থাপনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, আত্মসমর্পনের স্থানসহ রমনা কালী মন্দিরে শহীদদের স্মৃতিচিহ্ন রাখার পরামর্শ।

সভায় ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি জানানো হয়। সভায় জানানো হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য ২য় দফায় দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রাপ্ত ভাস্কর্য মডেলসমূহ হতে চূড়ান্ত বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৬ই ডিসেম্বরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানে ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য ২য় দফায় দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে প্রাপ্ত ভাস্কর্য মডেলসমূহ হতে চূড়ান্ত বাছাই সম্পন্ন হয়েছে।

৫০০ গাড়ির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ কার পার্কিংয়ের ভৌত অগ্রগতি  ৮০ শতাংশ, ওয়াটার ফাউন্টেইন নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ, ০৭টি ফুড কিয়স্ক মহিলা, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক টয়লেট ফ্যাসিলিটিসহ নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ৭৫শতাংশ, ওয়াকওয়ে নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ২৫শতাংশ এবং মসজিদ নির্মাণের ভৌত অগ্রগতি ৮০ শতাংশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App