×

মুক্তচিন্তা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ১২:৩২ এএম

গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে অদ্যাবধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। এইচএসসি পরীক্ষা ছাড়াই পরীক্ষার ফল ঘোষণা হয় জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার গড় নম্বরের ভিত্তিতে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পাশর্^বর্তী দেশের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় অনার্স প্রথম বর্ষের অটোপাস দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গতবারের এইচএসসি অটোপাস দেয়ায় সরকার বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার শিকার হয়ে বর্তমানে বিকল্প পন্থা খুঁজছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষার গতি সচল রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট ব্যবস্থা এখনো চলমান ঠিক কিন্তু এই পদ্ধতি কতটুকু কাজে আসছে তাও মূল্যায়নের সময় এখন আসছে। কাজের কাজ কী হয়েছে সেটাও দেখার বিষয়। অনলাইন ক্লাসের জন্য গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনেকের মোবাইল ও ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় বিশাল একটা অংশ অনলাইন ক্লাস থেকে রীতিমতো বঞ্চিত হয়েছে এবং হচ্ছে, অন্যদিকে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিও হুবহু কপি সিস্টেম হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার চেষ্টা ছাড়াই গুগল সার্চ দিয়ে উত্তর লিখে খাতা জমা দিয়ে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হাতে সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট পৌঁছার আগেই গুগলের একাধিক সাইটে সাবমিট হয়ে যাচ্ছে সেই অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা হুবহু কপি করছে। আবার শিক্ষার্থীদের জমাকৃত সেই খাতা মূল্যায়নের মানদণ্ডের কতটুকু মূল্যায়িত হচ্ছে সেটাও দেখা দরকার। মাধ্যমিকে বর্তমান শিক্ষাবর্ষের সপ্তম অ্যাসাইনমেন্ট চলছে আর কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট শুরু হচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থী অনলাইন বা গুগল সার্চ দিয়ে হুবহু কপি করে খাতা জমা দিচ্ছে তাদের আদৌ এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সতর্ক বার্তা দেয়া হয়নি বা হচ্ছে না। সপ্তাহ শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হচ্ছে নতুন আরেকটি অ্যাসাইনমেন্ট আর শিক্ষার্থীরাও দেদার গুগল সার্চ দিয়ে লিখে খাতা জমা দিয়ে দিচ্ছে। এ যেন এক ধরনের দ্বিপক্ষীয় দায়সারা প্রক্রিয়া। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বলছেন নতুন কোনো প্রক্রিয়া উদ্ভাবনের বিষয়ে সরকারের শিক্ষা বিভাগ ভাবছে। হয়তো অনলাইন ক্লাস ও অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতির অসাড়তার বিষয় উঠে আসায় নতুন উপায় খুঁজছে শিক্ষা কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি আসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার। শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি, মানববন্ধন, মিছিল, মিটিং করছে। রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলোও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। অভিভাবকরা কোনোভাবেই তাদের ঘরে আটকে রাখতে পারছেন না। অভিভাবকরাও তাদের নিয়ে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ সময় প্রতিষ্ঠান বন্ধের সুবাধে আড্ডা-খেলাধুলায় খুব বেশি মগ্ন হয়ে পড়ছে। অনেক শিক্ষার্থী মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। অধিকাংশ অভিভাবকের অভিযোগ বাচ্চাদের মাঝে চরম একগুয়েমি ভাব চলে আসছে। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে বাচ্চাদের মানসিকতার ওপর চরম প্রভাব পড়বে। প্রায় অভিভাবকের বক্তব্য হলো যেখানে সহপাঠীদের সঙ্গে সারাদিন আড্ডা-ঘোরাঘুরি করছে তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সমস্যা কোথায়? ১৩ জুন তারিখের নতুন ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক মহল। সবাই ভাবছিলেন এই দফায় প্রতিষ্ঠান খুলে দেবেন। কিন্তু নতুন করে ৩০ জুন পর্যন্ত আবার বন্ধ বাড়ানোতে এবারো সবাই হতাশ হলো। আবারো সর্বমহলে দাবি উঠছে প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার। সর্বোপরি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখাপড়া, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঁচানোর লক্ষ্যে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ মনিটরিং জোরদার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।

আনোয়ার আল ফারুক : শিক্ষক ও লেখক, দাউদপুর, ফেনী থেকে। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App