রাজধানীর খালে যুবক নিখোঁজ, ৯ ঘন্টার অভিযানেও মেলেনি সন্ধান
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ১০:২২ পিএম
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় ৭ নম্বর গলির উত্তর বাসাবো খালে বোতল টোকাতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া যুবকের সন্ধান মেলেনি। মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তর বাসাবো খালের ঝিলপাড় মসজিদের পাশে পড়ে তলিয়ে যান ওই যুবক।
ময়লার স্তুপ ও তীব্র পানির স্রোতের কারণে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা নিখোঁজ যুবককে উদ্ধার করতে পারেননি। পরে ৯ ঘন্টার উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করা হয়। আগামীকাল বুধবার সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
জানা গেছে, নিখোঁজ ওই যুবকের নাম আবুল। তিনি খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে ভাসমান জীবনযাপন করেন। নিখোঁজ ব্যক্তির বন্ধু পরিচয় দেয়া জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থলে এসে আবুলের ময়লা কুড়ানোর বস্তা দেখে সেটা চিনতে পারেন।
তিনি জানান, আবুল সকালে ওই বস্তা নিয়ে ময়লা কুড়াতে বেরিয়েছিলেন। তার স্ত্রী-সন্তান থাকলেও তারা আবুলের সঙ্গে থাকতেন না। আবুলের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর।
মো. রফিক নামের এক প্রত্যদর্শী জানান, তিনি সিটি করপোরেশনের হয়ে বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজ করেন। সকালে তিনি (রফিক) ময়লার ভ্যান নিয়ে কালভার্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন দেখেন আবুল খালে জমে থাকা ময়লার স্তুপ থেকে প্লাস্টিকের বোতল কুড়াচ্ছেন। হঠাৎ তিনি পা পিছলে পড়ে যান। তলিয়ে যাওয়ার একপর্যায়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন আবুল। তিনি ছুটে গিয়েছিলেন আবুলকে উদ্ধার করতে। কাছাকাছি গিয়ে দেখেন আবুলের হাত পানিতে ভাসছে। এরপরই তলিয়ে যান আবুল।
এদিকে, আবুল নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। কিন্তু ময়লার স্তুপ ও বৃষ্টির পানির কারণে খালে তীব্র স্রোত থাকায় উদ্ধার অভিযানে বেগ পেতে হয় তাদের। এক পর্যায়ে ভেকু মেশিন দিয়ে ময়লার স্তুপ পরিস্কারে কাজ শুরু করে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু তাতেও আবুলের খোঁজ মেলেনি। এ সময় খালের দুপাশে ভিড় করে উৎসুক জনতাও। খিলগাঁও থানাসহ পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান।
নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে খালে নামা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি মাসুদুল হক জানান, নর্দমাটি ১০ থেকে ১২ ফুট গভীর। তবে নিচে ময়লার স্তূপ জমে এখন গভীরতা ছয় থেকে সাত ফুট। নিচে ময়লার কয়েকটি লেয়ার থাকলেও ময়লার মধ্যে মানুষ আটকে থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ পানির অনেক স্রোত। আমার ধারণা, ওই ব্যক্তি স্রোতে ভেসে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, তারা নিখোঁজের খবরটি পায় ১০টা ৪ মিনিটে। এর ভিত্তিতে নিখোঁজ আবুলকে উদ্ধারে কাজ শুরু করে খিলগাঁও ফায়ার স্টেশনের দুই ইউনিট। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তর থেকে ডুবুরি দলও অভিযানে অংশ নিয়েছে।
ডুবুরিরা ধারাবাহিকভাবে তল্লাশি চালালেও নিখোঁজ যুবকের সন্ধান মেলেনি। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। বুধবার সকালে আবার উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, আসলে ওই যুবক যে খালে পড়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারছেন না। সবাই সন্দেহের উপর বলছেন।
খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলম বলেন, খালটি স্রোতমুখী এবং গভীরতা ১০-১৫ ফুট। এটি মান্ডা এলাকার বড় খালের সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। ময়লার স্তূপে খালটির পাড়ের দিকটা ভরাট হয়ে গেছে মনে হলেও ভাসমান ময়লার স্তূপের নিচে গভীর পানি। ডুবুরিরা যুবককে উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি তার আসল পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।