×

খেলা

অর্থনৈতিক সংকটে হ্যান্ডবল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২১, ১০:২৮ পিএম

অর্থনৈতিক সংকটে হ্যান্ডবল

আসাদুজ্জামান কোহিনূর

হ্যান্ডবল একটি প্রাচীন খেলা। গ্রিক কবি হোমারের ওডিসি মহাকাব্যে এ খেলার বর্ণনা রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব যুগে নীল নদের উপত্যকায় বল নিয়ে যেসব খেলা প্রচলিত ছিল, তার সবগুলোই ছিল হাতের খেলা। কেউ কেউ মনে করেন আধুনিক আউটডোর হ্যান্ডবল খেলার জন্ম জার্মানিতে। ১৯০৪ সালে ডেনমার্কের ক্রীড়াশিক্ষক হোলজার নিয়েলসেন ‘হ্যান্ড বোল্ড’ নামে একটি খেলা প্রবর্তন করেন। ১৯৭৪ সাল থেকে এশিয়ায় হ্যান্ডবল জনপ্রিয়তা পেতে থাকে। একই বছর তেহরানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস উপলক্ষে সমবেত ক্রীড়া সংগঠকদের উদ্যোগে এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে কুয়েতে ফেডারেশন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কুয়েতে ফেডারেশনের সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে হ্যান্ডবল খেলার প্রচলন ঘটে ১৯৮৩ সালে।

১৯৮৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অফিসের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত ক্রীড়ামোদিদের এক সভায় বাংলাদেশ হ্যান্ডবল অ্যাসোসিয়েশেন প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনে রূপান্তরিত হয়। বাংলাদেশ হ্যান্ডবল রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশনও গঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। বাংলাদেশ হ্যান্ডবল অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসছে। ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হংকং আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মহিলা আনসার দল অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে কমনওয়েলথ ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের দল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ৩০ বছরে বাংলাদেশ অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বেশ সাফল্য অর্জন করেছে।

আসাদুজ্জামান কোহিনূর ১৯৯১ সালের ১ এপ্রিল বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই থেকে ৩০ বছর ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল কোহিনূরের ২৫ বছর পূর্তি হওয়ায় দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে ওইদিন হ্যান্ডবল ফেডারেশন তাকে নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওইদিন ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলী হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম ক্রীড়াঙ্গনে সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বড় মিলনমেলায় রূপ নিয়েছিল।

১৯৯৬ সালের আগে ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোয় নির্বাচনের পদ্ধতি ছিল না। অ্যাডহক ভিত্তিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফেডারেশনের কমিটি গঠন করা হতো। ১৯৯১ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। তার অনুমোদন ক্রমেই কোহিনূর হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হন। সেই মাহবুবুর রহমান ২০১৬ সালে কোহিনূরকে মূল্যায়ন করেছিলেন এভাবে, ‘হ্যান্ডবল এখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিষ্ঠিত খেলা। এর পেছনে কোহিনূরের অবদান অনস্বীকার্য। শুধু হ্যান্ডবল নয় আনসার ভিডিপির ক্রীড়া প্রাতিষ্ঠানিক রূপের পেছনেও কোহিনূরের ভূমিকা রয়েছে।’ ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনূর দেশে হ্যান্ডবলের সম্ভাবনা ও অন্তরায় নিয়ে জানিয়েছেন নানা কথা। দীর্ঘদিন ধরে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবলে বিচরণ করলেও এখন পর্যন্ত বড় কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। সাফল্য বলতে এসএ গেমসে ঘুরে ফিরে রৌপ্য আর ব্রোঞ্জ। স্বর্ণপদক এখনো যেন সোনার হরিণ। এসএ গেমসে ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশকে টেক্কা দিয়ে স্বর্ণপদক জয় করে আসছে।

এসএ গেমসে বাংলাদেশ কেন স্বর্ণপদক জিততে পারে না। এ সম্পর্কে আসাদুজ্জামান কোহিনূর জানান, ভারত-পাকিস্তান হ্যান্ডবলে সাফল্য পাওয়ার পেছনে মূল কারণ হলো তাদের বিশাল ফান্ড রয়েছে। তাদের সরকার হ্যান্ডবলের উন্নয়নে ব্যাপক সহায়তা দিয়ে আসছে। তারা নিদিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা একটা জেনারেশনকে নিয়ে পাঁচ-সাত বছরের পরিকল্পনা করছে। তারা দেশ-বিদেশে নানা টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে। ট্রেনিং খাতে তাদের বরাদ্দ অনেক। আমরা যদি তাদের মতো সরকারি সাহায্য-সহায়তা পাই, আমাদের প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয় এবং বড় স্পন্সর পাওয়া যায়, তা হলে আমরাও এগিয়ে যেতে পারব। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমরা পিছিয়ে রয়েছি।

অল্প সময়ে আরচারি বেশ জনপ্রিয়তা ও সাফল্য পেয়েছে। এখানে কি কোনো ম্যাজিক কাজ করেছে? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আরচারির ভাগ্য ভালো তারা বড় স্পন্সর পেয়েছে। তীরে মতো বড় কোম্পানি তাদের স্পন্সর হয়েছে। আরচারি ব্যক্তিগত খেলা, এখানে পাঁচ-সাতজন খেলোয়াড়কে নার্সিং করলে সফলতা পাওয়া যায়। আরচারি জার্মান কোচ নিয়োগ দিয়েছে। তাছাড়া আরচারি বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে সাফল্য পেয়েছে। একবার সাফল্য পেলে স্পন্সর পাওয়া সহজ। এ মুহূর্তে আরচারির ফান্ডে কয়েক কোটি টাকা জমা আছে। অন্য দিকে হ্যান্ডবলে যারা স্পন্সর হচ্ছে, তারা নামমাত্র অর্থে স্পন্সর হচ্ছে। আমরা স্পন্সর থেকে যে অর্থ পাচ্ছি, তা দিয়ে অনেক সময় টুর্নামেন্ট আয়োজনেই হিমশিম খেতে হয়।

সামনে কোনো বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা নেই বলে জানান আসাদুজ্জামান কোহিনূর। তিনি বলেন, দিন দিন দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। মৃত্যুহার হঠাৎ করে বেড়েছে। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে সাহস পাচ্ছি না। গত বছর করোনার মধ্যেও বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছি। করোনার কারণে যেসব খেলোয়াড়, কোচ-কর্মকর্তা কাজ হারিয়ে সমস্যায় পড়েছেন, তাদের ফেডারেশনের পক্ষ থেকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App