×

শিক্ষা

মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২১, ০৭:৫৭ পিএম

মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ

ফাইল ছবি

সাভারের মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রী কলেজের মো. মোহসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির নানান অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তার দুর্নীতির তদন্ত ও অপসারণ দাবি করেছেন। এজন্য তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করে এর অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠিয়েছেন।

এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় মহসীন এক দশক আগে জার্সি বদলে আওয়ামী লীগের যোগ দিয়ে অধ্যক্ষ এডভোকেট আজম কে ল্যাং মেরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেও এখনো ভারমুক্ত হতে পারেননি।

১৭ জুন করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ৫ এপ্রিল মিথ্যা ভার্চুয়াল সভা দেখিয়ে গোপনে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক মো. আব্দুল মালেক খানকে মনোনয়ন দিয়ে রেজুলেশন করে কতিপয় শিক্ষককে দিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ ধরনের কোন ভার্চুয়াল মিটিং কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়নি। উক্ত শিক্ষককে শিক্ষকগণ নির্বাচিত করেননি। তারা শিক্ষক সভার মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রকৃত শিক্ষক প্রতিনিধি মনোনয়নের অনুরোধ করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সরকার ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাশ দিলে তিনি শিক্ষার্থীদের ৬৫ হাজার টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। রশিদ বইয়ের মাধ্যমে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে রশিদের কলেজ অংশে কম এবং ছাত্র অংশে তাদের দেয়া টাকা উল্লেখ করে বাড়তি টাকা নিজের পকেটে নেন। দৈনন্দিন আয় মনিটরিং নিজেই করেন। ছাত্র ভর্তি ফরমপূরণ ও উন্নয়নের নামে প্রতি বছর বিপুল অংকের টাকা কামিয়ে নিয়ে থাকেন। তিনি প্রকৃত ব্যয়ের চেয়ে অধিক খরচ দেখিয়ে নিজেই সব উন্নয়ন কাজ করেন। কলেজের হিসাব দেখার কেউ নেই। কোনো অডিট কমিটি না থাকায় অডিট হয় না।

এজন্য তিনি ইচ্ছে মতো খরচ করতে পারেন। কলেজের সকল কর্মকাণ্ড তিনি সকল শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে একা গোপনে করে থাকেন। কলেজের বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল সম্প্রতি সময়ে ২৯ % থেকে ৩৬%। তুলনামূলকভাবে যা সাভারের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল। কারণ সকল শিক্ষকদের পাশ কাটিয়ে ও মতামতকে অগ্রাহ্য করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ প্রদান এবং বাড়ি থেকে ডেকে এনে অনৈতিকভাবে টাকার বিনিময়ে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে থাকেন তিনি।

এদিকে কলেজের টাকায় পুকুরে মাছ চাষ হলেও সেই মাছ কোথায় যায় তা কেউ বলতে পারেন না। পুকুরের মাছ এবং গাছের ফল নিজেই আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কলেজ পরিচালনার স্বার্থে শিক্ষকদের নিয়ে বিভিন্ন কমিটি থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা উপেক্ষিত। পকেট কমিটি দেখিয়ে তিনি তার অবৈধ কাজ বৈধ করেন। কলেজের সকল সিদ্ধান্ত ও আয়-ব্যয় তিনি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন।

অন্যদিকে করোনাকালে তিনি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির এসাইনমেন্ট দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করেছেন। এই টাকা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় ও শিক্ষকরা প্রাপ্য হলেও কাউকেই দেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিদিন কলেজের টাকায় ভাড়া গাড়িতে করে কলেজে আসা-যাওয়া করে থাকেন।

অপরদিকে গত ৩ নভেম্বর মাউশি'র টিম পরিদর্শনে গেলে সব শিক্ষকদের আড়ালে রেখে তিনি তা ফেস করেন এবং কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট করেন। এজন্য তিনি খরচের বিল করেন। ডিগ্রী পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উপবৃত্তি প্রদান এবং উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন।

অবাক করার বিষয় হচ্ছে, টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের প্রশংসাপত্র দেয়া হয়ে থাকে এবং সেই টাকা তার পকেটে যায়। ট্রান্সফার সার্টিফিকেটে (টিসি) ভর্তি টিসি নিয়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকেন তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি বারো থেকে পনের হাজার টাকা নেয়া হলেও কলেজ ফান্ডে নামমাত্র টাকা জমা দেয়া হয়ে থাকে।

তিনি নিয়মের তোয়াক্কা না করে সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (চ.ঋ) কলেজ প্রদত্ব বাড়ি ভাড়ার উপর প্রদান করেন। সেখান থেকে তিনি দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন। কারণ তার সরকার প্রদত্ত মূল বেতন অন্যান্য শিক্ষকদের সমান হলেও বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধা অন্য শিক্ষকদের চেয়ে দ্বিগুণ বাড়ি ভাড়ার উপর প্রভিডেন্ট ফান্ড নিচ্ছেন।

প্রতি বছর শিক্ষক বেতন (ইনক্রিমেন্ট) বৃদ্ধির কথা থাকলেও অব্যবস্থাপনার কারণে তিনি বলছেন, কলেজের ফান্ড শূন্য । শিক্ষক/কর্মচারীদের বেতন দিতে ব্যর্থ। শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কলেজের আপদকালীন ফিক্সড ডিপোজিট পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে। অথচ সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে কয়েক কোটি টাকা ফান্ড থাকার কথা। ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত তথ্য কেউ অবগত নয়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মো. মহসীন দাবি করেন, সব অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো। তিনি গভর্নিং বডির সভাপতি, সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সব ডকুমেন্টস দেখিয়েছেন। তিনি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App