×

জাতীয়

টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করছে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২১, ০৯:০৪ এএম

দেশের একাধিক ফার্মাসিউটিক্যালস টিকা উৎপাদনে আগ্রহী।

ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ওষুধ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। দেশে বিশ্বমানের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থাকার পরও কেন করোনা প্রতিরোধী টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না- তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় টিকা উৎপাদনে সক্ষমতা ছিল বাংলাদেশের। সময়মতো যুগোপযোগী উদ্যোগ না নেয়ায় সেই সক্ষমতা হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই এক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। করোনার মহামারি রোধে বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাইসহ এক্ষেত্রের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।

১৭ মে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোর টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা খতিয়ে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

ইনসেপটা, পপুলার, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দাবি করছে সরকারের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলে তারা টিকা উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত। ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রোগের ১৪টি টিকা উৎপাদন করছে বলে দাবি করা হয়। বলা হয়, করোনার টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা প্রতি মাসে ৮০ লাখ ডোজ। আশুলিয়ার জিরাবোতে ইনসেপটার প্ল্যান্ট পরিদর্শনও করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রতি মাসে ২০ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও সরকারের সহযোগিতা পেলে তা ৫০ লাখে নেয়া সম্ভব। এক বছর আগে টিকা উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, সরকার চাইলে তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। মডার্নার টিকা আনতে আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠিও দিয়েছে রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালস। তারাও রয়েছে সরকারের অনুমতির অপেক্ষায়। রাশিয়ার কাছে টিকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস। তাদেরও টিকা তৈরির সক্ষতা রয়েছে। এর আগে বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপনও টিকা তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যদি বেক্সিমকো দেশে টিকা উৎপাদন করতে পারে, তাহলে তা দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারটিও কিছু শর্ত পূরণ করলে টিকা তৈরিতে সক্ষম হবে। তারা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন এবং বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশে অন্তত তিন থেকে চারটি ঔষুধ কোম্পানি রয়েছে যারা টিকা বানাতে সক্ষম। বিশ্বমানের কোম্পানিও রয়েছে কয়েকটি। করোনার টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূলত কিছু বিষয়ে সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে উচ্চমানসম্পন্ন প্রযুক্তি এবং টিকা তৈরির কাঁচামাল। টিকা তৈরির যে কাঁচামাল সেটি বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। এমনকি সেগুলো ভারতেও উৎপাদিত হয় না। এই কাঁচামালগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই সহযোগিতা পাওয়ার পর আসে দাম নির্ধারণের বিষয়টিও।? তবে কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে টিকা উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত না করে যেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে তাদেরই এই কাজে সম্পৃক্ত করা এবং একাধিক দেশ বা প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদনে যাওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে চেষ্টা চালানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ একসময় টিকা উৎপাদন করলেও এখন সেই ক্ষমতা হারিয়েছে। অথচ যেসব দেশের টিকা বানানোর সক্ষমতা ছিল না, তারা এখন টিকা বানাচ্ছে। ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডে করোনার টিকা তৈরি হচ্ছে। কিউবা বা ইরানের মতো দেশ বিশ্ব থেকে নানা কারণে বিচ্ছিন্ন থাকার পরও নিজেরা টিকা উৎপাদন করেছে এবং নাগরিকদের টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেছে। আর আমরা ৫০ বছর আগে যা পারতাম, এখন তা পারছি না। উচিত ছিল আমাদের টিকা তৈরির সক্ষমতাকে আধুনিকায়ন করা। তা না করে আমরা তা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন বেসরকারি যে কোনো প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে টিকা উৎপাদন করতেই পারে। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে যে টিকা যেহেতু প্রাণ রক্ষার উপাদান, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। রাষ্ট্রের দায়িত্ব চলমান মহামারি ও ভবিষ্যতের যে কোনো মহামারি মোকাবিলায় টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় বিনিয়োগ ও জনবল তৈরি করা।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীব বিজ্ঞানী, সার্স ভাইরাসের কিট উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে করোনা প্রতিরোধী টিকা তৈরি করা খুব কঠিন বিষয় নয়। কারণ করোনা ভাইরাসের একটা চরিত্র আছে। তা হলো এটা খুব দ্রুত বেড়ে যায়। বিএসএল৩ ক্যাটাগরির পরীক্ষাগার থাকলে সেখানে ভাইরাসকে দ্রুত বাড়িয়ে হিট ও ক্যামিকেল দিয়ে নিষ্ক্রিয় করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেই পদ্ধতিতে যদি টিকা তৈরি করা যায় এবং তা করা সম্ভব। বাংলাদেশ এটা ইচ্ছা করলেই করতে পারবে। বাংলাদেশে বিএসএল৩ পরীক্ষাগার কয়েকটা আছে। আইসিডিডিআরবিতে একটা আছে। মহাখালীতে আরেকটা পরীক্ষাগার আছে। নীতিনির্ধারকরা যদি মনে করেন, এই কাজটা করা উচিত, তাহলেই এটা করা সম্ভব। এটা কোনো রকেট সায়েন্স না। এটা খুব সাধারণ সায়েন্স। আমি মনে করি বাংলাদেশে খুব অভিজ্ঞ একটা দল আছে। মন্ত্রণালয় আছে, উপদেষ্টা কমিটি আছে। কমিটিতে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম আছেন। তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ। তার নেতৃত্ব বা একটা টিম করে কাজ করলে বিষয়টা খুব সহজে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App