×

মুক্তচিন্তা

আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাধান কোথায়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২১, ১২:১০ এএম

আত্মহত্যা কোনো সমাধান না হলেও সারা বিশে^ই কম-বেশি আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে তার একেবারে নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৯ সালে সারাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ। গত ১১ বছরের মধ্যে দেশটিতে গত বছর করোনাকালে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করে। তবে ব্যক্তি ও পরিস্থিতি ভেদে আত্মহত্যার কারণ ভিন্ন। কেউ সব কিছু পেয়ে আত্মহত্যা করছে আবার কেউ কিছু না পাওয়ার ক্ষোভে আত্মহত্যা করছে। আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তি এমন এক মানসিক অবস্থা পৌঁছে যায় যখন সে বাস্তব যুক্তিতর্কের বিবেচনা হারিয়ে ফেলে। আমাদের দেশে আত্মহত্যা করার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। আত্মহত্যা একটি অপ্রত্যাশিত এবং অমীমাংসিত সমাধান। যদিও সাময়িকভাবে আত্মহত্যাকরীরা তাদের জীবনের নানামুখী সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নেয় তথাপি তারা নিজেদের সরিয়ে নিয়ে পরিবার-পরিজনদের আরো বেশি চাপের ভেতর ফেলে দেয়। নিজেকে ধ্বংস করার ভেতর যে কোনো বীরত্ব নেই বরং তা নিজ পরিবারের জন্য হতাশাদায়ক। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাংলাদেশে আত্মহত্যা করার পেছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণ রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এবং দূরত্ব তৈরি হওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল না করা, কাক্সিক্ষত জিনিস না পাওয়া, বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে, ঋণ থেকে মুক্তি পেতে, মানসিক সমস্যাজনিত কারণে, মাদকদ্রব্যে আসক্ত ইত্যাদি ছোট-বড় বহু কারণ রয়েছে। সামান্য মানসিক উদ্বিগ্নতা তৈরি হলেই মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। যে সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত সহজ সে সমস্যার জন্যও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে যে কারণেই আত্মহত্যা করুক না কেন তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আবার শুধু আত্মহত্যার চেষ্টা করে তা থেকে বেঁচে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক বেশি। আত্মহত্যার প্রবণতা ক্রমেই একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছেলে বা মেয়ে তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যা করছে। মা-বাবার ওপর রাগ করে বা তার পছন্দের জিনিস না পেয়ে হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করছে। মোট কথা, আত্মহত্যার কারণ বিভিন্ন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যা একটি মহাপাপ। নিজের জীবন শেষ করার ভেতর কোনো সমাধান লুকিয়ে নেই। আজকাল অনেকেই রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করছে অনেকে। প্রশ্ন হলো, আমাদের এই প্রজন্মের এসব মেধাবী ছেলেমেয়ে যদি আত্মহত্যার মতো অপ্রত্যাশিত অপরিমাণদর্শী চিন্তাভাবনার পথ বেছে নেয় তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে আমরা কোথায় দাঁড়াব। একেকজন একেক কারণে জীবনের এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আজকাল মানসিক চাপকে অনেকেই দোষারোপ করছেন। বর্তমান প্রগতির যুগে অবশ্যই তরুণ প্রজন্মের ওপর মানসিক চাপ বাড়ছে, কিন্তু আত্মহত্যা মানসিক চাপ কমানোর যে কোনো সমাধান নয় বরং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ সে কথা বুঝতে হবে। নিজেকে শেষ করে কোনো সমস্যার সমাধান আশা করাটা বোকামি বরং সমস্যার মাঝে থেকে বাধাকে অতিক্রম করতে হয়। এটাই নিয়ম। নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিলে কোনো সমাধান হয় না। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাধান কোথায়? কীভাবে এই সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আত্মহত্যার পেছনের কারণগুলো অনুসন্ধান করতে হবে। তারপর সেসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। জীবনে হতাশ হওয়ার যেমন কারণ রয়েছে তেমনি জীবনকে ভালোবাসার মতো কারণও রয়েছে প্রচুর। বর্তমান সমাজে হতাশা নামক ব্যাধি খুব সহজেই মানুষের মনে বাসা বাঁধছে। এই হতাশা কাটাতেই অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন হালকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব হতাশ মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সামাজিক অস্থিতিশীলতা, চাকরির বাজারের অস্থিরতা, সম্পর্কের টানাপড়েন, বিশ^াস ও মূল্যবোধের অভাব, ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাবোধের অনুপস্থিতি, মাদকদ্রব্যের বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়া, সন্তানের বেড়ে ওঠায় একাকিত্ব এসব কিছুই তার ব্যক্তি জীবনের ওপর শ্রদ্ধাবোধ আলগা করতে ভূমিকা রাখে। জীবনকে ভালোবাসার চেয়ে ভালো আর কোনো কিছুই হতে পারে না। প্রথমে নিজের জীবনকে ভালোবাসতে হবে। মানসিক শক্তি বাড়াতে হবে। জীবন একটি ঘটনায় থেমে থাকে না। প্রত্যেকেরই কিছু করার সুযোগ থাকে। এভাবে মনকে দায়িত্বশীল করে তুলতে হবে। কোনো চাহিদা পূরণ না হলেও জীবন শেষ না করে বরং নতুন করে আবার শুরু করা যায়Ñ এমন অনুভূতিই পারে আত্মহত্যার এ মিছিল থামাতে। অলোক আচার্য কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App