×

সারাদেশ

মাজার শরীফে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ১১:৪৯ এএম

মাজার শরীফে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি

ওড়াউড়ি ও কিচিরমিচির শব্দে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা চড়ুই পাখিগুলো। ছবি: ভোরের কাগজ

মাজার শরীফে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি

সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি এসে বকুল গাছে আশ্রয় নেয়।

মাজার শরীফে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি

সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি এসে বকুল গাছে আশ্রয় নেয়।

মাজার শরীফে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি

প্রকৃতিতে তখন গোধুলী বেলা। এরই মাঝে শুরু হয়ে যায় এদিক-ওদিক ওড়াউড়ি ও কিচিরমিচির শব্দ। এক ঝাঁক উড়ে যায় তো আরেক ঝাঁক এসে বসে। এভাবে কিছুক্ষণ ছুটাছুটির পর আশ্রয় নেয় বকুল গাছের ডালে আর পাতায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরশহরের খরমপুর মাজার শরীফ এলাকায় এভাবেই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি।

খরমপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় বছর দশেক আগে হঠাৎ করে মাজার চত্বরের এই বকুল ফুল গাছটিতে কিছু চড়ুই পাখি এসে আশ্রয় নেয়। কেউ তাদের বিরক্ত করে না। নিরাপদ ভেবেই হয়তো আস্তে আস্তে পাখি বাড়তে থাকে।

মাজার শরীফ এলাকায় প্রায় ১২ বছর ধরে চা-স্টলের ব্যবসা করছেন পৌরশহরের কুমারপাড়ার বাবুল মিয়া। তিনি জানান, সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি এসে বকুল গাছে আশ্রয় নেয়। তাদের ওড়াউড়ির দৃশ্য ও কিচির শব্দে মন ভরে যায়। তিনি আরো জানান, আমার দোকানে বসে অনেকই চায় খেতে খেতে পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও ওড়াউড়ির দৃশ্য উপভোগ করে।

কথা হয় উপজেলার চানপুর গ্রামের সৌদিআরব প্রবাসী ফরহাদ ভূঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, চড়ুই পাখির দুষ্টমি আর কিচিরমিচির শব্দ তাকে আকৃষ্ট করে। সময় পেলেই নাকি তিনি ছুটে আসেন মাজার এলাকায়। দুষ্টমি আর কিচিরমিচির শব্দ শুনে তিনি মুগ্ধ হন। মাজার এলাকায় ঘুরতে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার হাবিবুর রহমান নামের এক পথচারী বলেন, বকুল গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে শুধুই চড়ুই পাখি। বর্তমান সময়ে এতো চড়ুই পাখি আর কোথাও দেখা যায় না। দৌঁড় ঝাঁপ আর কিচিরমিচির শব্দে মন ভরে উঠে।

নোয়াখালির চাটখিল থেকে আসা সাদেক সরকার বলেন, অনেক ঝামেলার মধ্যে দিন যাচ্ছিল। তাই খরমপুর আসলাম মাজার জিয়ারত করতে। এখানে আসলে এমনিতেই মন ভালো হয়ে যায়। তাছাড়া পাখির কলরবে মন প্রফুল্ল হয়ে উঠে।

[caption id="attachment_291251" align="aligncenter" width="687"] ন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি এসে বকুল গাছে আশ্রয় নেয়।[/caption]

আখাউড়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরশহরের খরমপুর গ্রামের বাসিন্দা কাজী হান্নান খাদেম জানান, মাজার চত্বরের এই বকুল ফুলের গাছটি অনেক চাওড়া। গাছে পাতা ও ডালপালাও অনেক বেশি। সন্ধ্যা হলে ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই এই গাছে এসে আশ্রয় নেয়। গাছটি মাজার এলাকায় হওয়ায় এখানে ছেলে বুড়ো কেউ তাদের জীবন চক্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। হয়তো এই কারণে পাখিগুলো এখানে অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করে। তিনি আরো জানান, একটু প্রশান্তি পেতে অনেক মানুষই এখানে ছুটে আসে। পাখিদের কলরব ও চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে তারা মুগ্ধ হন। আমি নিজেও চড়ুই পাখির কিচিরমিচির রেকর্ড করে মোবাইলে রিং টোন হিসাবে অনেক দিন ব্যবহার করেছি।

খরমপুর শাহপীর কল্লা শহীদ মাজার পরিচালনা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা হাসান খান খাদেম বলেন, মাজার এলাকায় তাদের কেউ বিরক্ত করে না। ঝাঁক বেঁধে পাখিদের উড়াউড়ির দৃশ্য আর কিচিরমিচির শব্দে সবারই মন ভরে যায়।

ইন্টারনেট দুনিয়া ঘুরে জানা যায়, পৃথিবীতে মোট ৪৮ জাতের চড়ুই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। তবে আমাদের দেশে মাত্র দুই জাতের চড়ুই বেশি দেখা যায়। জীব বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এদের আদি নিবাস ইউরেশিয়া অঞ্চল এবং আফ্রিকা মহাদেশ ছিল। কৃষিকাজ বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে এরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চড়ুই হলো একমাত্র পাখি যার বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি। আদুরে প্রকৃতির এই পাখি মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে। এ জন্যই এদের ইংরেজী নাম ‘হাউস স্প্যারো’ অর্থাৎ‘ গৃহস্থলি চড়ুই’।

খড়কুটো, শুকনো ঘাস পাতা কড়িকাঠে কার্নিশে বাসা বেঁধে এরা বসবাস করে। এরা মাটি থেকে পোকামাকড় ও শস্য খুঁটে খায়। চড়ুই একাধিকবার প্রজনন করে। প্রতিবার ৪ থেকে ৬ টি ডিম দেয়। ডিম থেকে ছানা প্রায় ৭০ ভাগ বেঁচে থাকে। আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার বছর আগে চড়ুই মানুষের সান্নিধ্যে আসে। মানববসতির আশে-পাশে সহসাই চড়ুইয়ের দেখা মিলে। যে কোনো পরিবেশে এরা নিজেদের স্বাচ্ছন্দে মানিয়ে নিতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App