×

সারাদেশ

অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতছানি দিচ্ছে মুজিবনগর স্থল কাস্টম স্টেশন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ০৮:১০ পিএম

অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতছানি দিচ্ছে মুজিবনগর স্থল কাস্টম স্টেশন

মুজিবনগর

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর স্বপ্ন পূরণ হলো মুজিবনগর তথা মেহেরপুরবাসীর। মুজিবনগরকে স্থল কাস্টম স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এখন শুধু অপেক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার। আন্তঃসীমান্ত যাত্রী চলাচল ও পণ্য আমদানি-রপ্তানির উদ্দেশ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগরকে স্থল কাস্টমস স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৭ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদেশ ক্রমে সিনিয়র সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপন গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

গেজেটে বলা হয়েছে, এস.আর.ও নং-১৩৮-আইন/২০২১/১২৩/কাস্টমস। কাস্টমস এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৯ ধারার ক্ষমতাবলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার মাঝপাড়ার ৩০.৩০ একর জমির ওপর স্থল কাস্টমস স্টেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সূতিকাগার মেহেরপুরের মুজিবনগর (তৎকালীন বৈদ্যনাথতলা) থেকে ভারতের নদীয়া পর্যন্ত ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সড়কের বাংলাদেশের অংশটুকু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। যে সড়ক ধরে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল জাতীয় চার নেতা মুজিবনগরের আম্রকাননে এসে শপথ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সরকারের। জাতীয় চার নেতার সঙ্গে এই সড়ক ধরে এসেছিলেন অসংখ্য বিদেশি সংবাদকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে হলেও মুজিবনগর-কলকাতা ‘স্বাধীনতা সড়ক’ ও স্থল কাস্টমস স্টেশন পেয়েছে মুজিবনগর তথা মেহেরপুরবাসী।

এই স্থল কাস্টমস স্টেশন চালু হলে একদিকে যেমন দু-দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে, তেমনি মেহেরপুরবাসীর জন্য উন্মেচিত হবে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত। বিশেষ করে মুজিবনগর সীমান্ত এলাকার মানুষের জন্য খুলবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে আছে এই এলাকার মানুষ। কৃষিনির্ভর এই এলাকার অর্থনীতির মুল উৎস হলো কৃষি। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও কম না। তাই স্থল কাস্টম স্টেশনকে ঘিরে একগুচ্ছ কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন এই এলাকার বেকাররা। এটিকে ঘিরেই নতুন দিনের সম্ভাবনা দেখছেন মেহেরপুরের মানুষ।

নবঘোষিত স্থল কাস্টম স্টেশনের পাশেই বাড়ি ৭০ বছরের বৃদ্ধ ছাবদার আলীর। মুজিবনগরে জাতীয় চার নেতার আগমন ও মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী তিনি। ছাবদার আলী বলেন, আমরা কখনো ভাবিনি এখান দিয়ে স্থল কাস্টমস স্টেশন হবে। এখন সেটি হচ্ছে, দেখে খুবই ভাল লাগছে। নতুন প্রজন্মের জন্য এটি সুখবর।

মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইদুর রহমান, রিপন আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, এই স্থল কাস্টমস স্টেশনটি চালু হলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হবে। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরে হলেও উন্নয়নের আলো জ্বলতে যাচ্ছে আমাদের এলাকায়। এটিকে ঘিরে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন তারা।

মুজিবনগর উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, মুজিবনগরকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। খুব অল্প দিনের মধ্যেই আশা করছি কাজ শুরু হবে। এর মধ্যে স্বাধীনতা সড়ক ও স্থল কাস্টমস স্টেশন আমাদের জন্য বড় সুখবর। দেশি বিদেশিদের আগমনে মুখরিত থাকবে মুজিবনগর। বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত তৈরি হতে যাচ্ছে।

স্থল কাস্টম স্টেশন ঘোষণার পরপরই এলাকার জমির দাম বেড়েছে কয়েক গুন। মুজিবনগরের মাঝপাড়ার মাঠান জমি হিসেবে ৪-৫ লাখ টাকা বিঘা বিক্রি হতো যেসব জমি, সেগুলো এখন ৪-৫ লাখ কাঠা দাম হাকানো হচ্ছে। আধুনকি হোটেল রেস্তোরাঁ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য আগাম জমি কিনছেন অনেকেই।

মেহেরপুর চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম রসুল বলেন, মেহেরপুর সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে তেমন কোনো শিল্পকারখানা গড়ে ওঠেনি। বেকার যুবকরা কর্মসংস্থানের সন্ধানে অন্য জেলায় পাড়ি জমায়। সেক্ষেত্রে মুজিবনগরে স্থল কাস্টম স্টেশনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেলে অনেক বেকার সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। নতুন নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি হবে। সে হিসেবে স্থল কাস্টম স্টেশনকে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের অপার সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, স্থল কাস্টমস স্টেশন চালু হলে সেবা খাতের উন্নতি ঘটবে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। শুধুমাত্র এলাকার মানুষের কৃষি খাতের ওপর যে নির্ভরতা সেটাতো কমবেই, সেই সাথে বহুমুখী অর্থনীতির রূপান্তর ঘটবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App