১৯৬৩ সালে ভাসানী-আইয়ুব সাক্ষাতে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে মওলানা ভাসানী চীন গমন করেন। মাও সেতুংয়ের উপদেশে সংগ্রামী মওলানা নিশ্চুপ হয়ে মুরীদানের খেদমতে নিজেকে ব্যাপৃত রাখলেন।
সামরিক শাসনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত করে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের জারিকৃত সংবিধান সম্পূর্ণ অগ্রহণীয় এবং সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে ৯ নেতা বিবৃতি দেন। শেখ মুজিব ছিলেন তাদের মধ্যমণি। ৯ নেতার বিবৃতি গণতান্ত্রিক মহলে বিশেষ আশার সঞ্চার করে। আইয়ুবী স্বৈরতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র বাতিল, নতুন শাসনতন্ত্র ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আউটার স্টেডিয়ামে বিরাট জনসভা ১৯৬২ সালের ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জনসভায় শেখ মুজিবসহ নেতারা সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা প্রদান করেন। আইয়ুব-মওলানা আঁতাত : জনগণের দাবি ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় ১৯ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী বন্দিদশা হতে মুক্ত হন। ইতোমধ্যে শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ছাত্রসমাজ জেল, নিপীড়ন, গুলি-গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলে। কুখ্যাত শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের আন্দোলন বৃহত্তর পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রূপলাভ করে। এইচ এস সোহরাওয়ার্দী ২৯ সেপ্টেম্বর এনডিএফ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট) এর ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমাদের সামনে প্রশ্ন হলো, আমরা গণতন্ত্র চাই কিনা? তিনি বলেন, সব সমস্যার শাসনতান্ত্রিক সমাধানের পূর্বে প্রয়োজন ‘সবার আগে গণতন্ত্র।’ কিন্তু অসুস্থ সোহরাওয়ার্দীর বিদেশ গমনের ফলে এনডিএফ কার্যকর ভ‚মিকা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলো। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যু এনডিএফ-কে অকেজো করে তোলে।
পাশাপাশি ১৯৬৩ সালের ২২ জুন ভাসানী-আইয়ুব সাক্ষাৎকারে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন মোড় ও মাত্রা যোগ করে। ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর আইয়ুব খানের সরকারি প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে মওলানা ভাসানী চীনে গমন করেন। চীন হতে ফিরে আসার পর পল্টন ময়দানের পূর্বঘোষিত আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচি তিনি বাতিল ঘোষণা করেন। ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব’ মাও সেতুংয়ের উপদেশে সংগ্রামী মওলানা নিশ্চুপ হয়ে মুরীদানের খেদমতে নিজেকে ব্যাপৃত রাখলেন।
আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘মুজিবের কৌশল’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এ ছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।