×

সারাদেশ

বইয়ের আদলে কলেজের নজরকাড়া প্রবেশদ্বার   

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২১, ০৪:১৫ পিএম

বইয়ের আদলে কলেজের নজরকাড়া প্রবেশদ্বার   

ফটকটির সামনে প্রতিদিনই পথচারী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের সমাগম। ছবি: ভোরের কাগজ

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া আদর্শ কলেজের পঞ্চাশটি বইয়ের আদলে নির্মিত দৃষ্টি নন্দন প্রবেশদ্বার জেলায় সাড়া ফেলেছে। বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যিকদের রচিত পঞ্চাশটি বইয়ের আদলে দৃষ্টিনন্দন ফটকটি নির্মাণ করা হয়েছে। ফটকটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা।

লালমনিরহাট জেলা থেকে ৫০কিলোমিটার ও হাতীবান্ধা উপজেলার শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দইখাওয়া আদর্শ কলেজ। হাতীবান্ধার দইখাওয়া সড়কের পাশেই চোখে পড়বে বইয়ের আদলে গড়ে তোলা দইখাওয়া আদর্শ কলেজের প্রধান ফটকটি। এমন দৃষ্টিনন্দন ফটকটি মন কাড়ছে সবার। ফটকটির সামনে প্রতিদিনই পথচারী ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষের সমাগম।

জানা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারির দিকে দৃষ্টিনন্দন ফটকটি নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কমিটি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় দশ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যিকদের রচিত পঞ্চাশটি বইয়ের আদলে ফটকের দুইটি পিলার সজ্জিত করা হয়। বই পড়লেই পৃথিবীকে জানা সম্ভব-অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেনের এই চিন্তাধারা থেকেই প্রধান ফটকের ওপরে হাতের মুঠোয় পৃথিবীর মানচিত্র (গ্লোব) তৈরি করা হয়েছে।

নির্মিত ফটকের বামে সবার ওপরে স্থান পেয়েছে ‘মা’ বইটি। যা লিখেছেন রংপুরের সন্তান আনিসুল হক। ফটকের ডানে সবার ওপরে রয়েছে ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মাদার’ বইটি।

প্রধান ফটকের পাশাপাশি কলেজে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারও নির্মিত হয়েছে বইয়ের আদলে। দূর থেকে শহীদ মিনারে চোখ পড়লে মনে হয় যেন একটি বই পড়ার জন্য খুলে রাখা হয়েছে। আর সেই বইয়ে ভাষা আন্দোলনের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কলেজ অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ১৯৯৯ সালে তিন একর ১০ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত এই কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং স্নাতক পর্যায়ে এখন প্রায় ১৩শ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন।

উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার কলেজটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত পরিবারের, অনেকেই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে পারেন না। তাই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যান্টিন তৈরি করে দুপুরে মাত্র ১০ টাকায় খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নেন। গত দুই বছর ধরে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দুপুরে ১০ টাকায় খাবার খেতে পারেন।

কলেজ সূত্র জানায়, কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রধান ফটক নির্মাণের কাজ করেছেন সাবেক শিক্ষার্থী গৌরাঙ্গ রায়। সার্বিক সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নেভাল আর্কিটেক্চার বিভাগের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান শাকিল। বইয়ের মোড়কে গেট তৈরি হওয়ায় বই পড়া নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থী ও সাধারনের মাঝে।

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘এই বইগুলো কলেজের লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ে অনেক ভালো লাগছে। সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে জানতে পারছি।’

দইখাওয়া আদর্শ কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘প্রধান ফটকটি বইয়ের আদলে গড়ার প্রধান লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণির মানুষকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তোলা।’

অধ্যক্ষ মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করতে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বইয়ের আদলে প্রধান ফটক নির্মাণের করা হয়।’

হাতীবান্ধা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সামিউল আমিন বলেন, ‘দইখাওয়া আদর্শ কলেজে বইয়ে আদলে সুন্দর দৃষ্টি নন্দন ফটক নির্মাণ হয়েছে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App