×

জাতীয়

নেতৃত্বের সংকটে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২১, ০৯:০৪ এএম

গুরুত্বপূর্ণ ৫০ পদ শূন্য

দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ পদ। যারা পদে বহাল আছেন তাদের কেউ নিষ্ক্রিয়, কেউ বা বয়সের ভারে ন্যুব্জ। নেতৃত্বের সংকটে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে সময়মতো কর্মসূচি দিতে পারছে না দলটি। অনেক ইস্যুতে সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতেও হিমশিম খাচ্ছে দলটি। এমন অবস্থায়ও শূন্যপদ পূরণের কোনো উদ্যোগ নেই। দলীয় কাউন্সিল করারও কোনো প্রচেষ্টা নেই। এ অবস্থায় দিন দিন নেতৃত্ব শূন্যতার দিকে যাচ্ছে বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দলকে শক্তিশালী করতে তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে দলটির নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা দরকার।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের শর্তানুযায়ী দলের সর্বস্তরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে তৎপর হয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে শূন্য পদগুলোতে অধিক সংখ্যক নারী নেত্রীদের নেয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ১২ জুন ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের চিঠির সূত্র ধরেই নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি করতে উপায় নিয়েও মতামত দেন সদস্যরা। পরে শীর্ষ নেতৃত্বের পরামর্শে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমানকে দিয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। শূন্যপদ পূরণে এই কমিটি দুয়েক দিনের মধ্যেই বৈঠকে বসবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করে বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ কমিটিই দায়িত্ব পালন করে। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চারজন মারা গেছেন। তারা হলেনÑ তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। ২০১৯ সালে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেয়া হয়।

অন্যদিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে নির্বাহী কমিটির আর কোনো সভা হয়নি। প্রায় দুই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি। এছাড়া ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যান পদের মধ্যে আটটি ফাঁকা রয়েছে। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭(খ) (৬) উপধারায় চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ‘ক্ষমতা ও দায়িত্ব’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিসমূহের শূন্যপদ পূরণ করতে পারবেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও নেতৃত্বের কম উপস্থিতির কারণে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নানা কাজে ব্যস্ত কিংবা অসুস্থতার কারণে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন না ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সদস্য। সব মিলিয়ে নিয়মিত ৫০ শতাংশের মতো সদস্য নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বেগ পেতে হচ্ছে হাইকমান্ডকে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে এখনো ৫টি পদ ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও আইনি জটিলতাসহ পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে তার রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য তারেক রহমান লন্ডনে অবস্থান করছেন। মামলা জটিলতায় সালাহউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন ভারতের শিলংয়ে। অসুস্থতার কারণে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে থাকতে পারেন না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি অনেক ক্ষেত্রেই এক ধরনের নেতৃত্ব শূন্যতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ও লন্ডনকেন্দ্রিক নেতৃত্ব মিলে দলে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া দূর থেকে দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন কাজ। বয়সের কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মাঠে সক্রিয় না থাকায় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সাধারণ নেতাকর্মীরাও অংশ নেন না। এমন বাস্তবতায় দলটির উচিত অবিলম্বে জাতীয় কাউন্সিল করা।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, দলের অনেক পদ শূন্য হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেতারা মারা যাওয়ায় এসব পদ শূন্য হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদে নতুনদের জায়গা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যগুলোতেও পদায়ন হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইলে কাউন্সিল ছাড়াও এসব পদায়ন করতে পারবেন।

বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির উচিত খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাস্তায় নামা। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না। বর্তমানে যারা বড় পদে আছেন অথচ ১ ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়াতে পারেন না, তাদের দিয়ে হবে না। বিএনপিতে অনেক দক্ষ ও চৌকস নেতা আছেন। শূন্যপদগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পূরণ করে সেখানে তাদের দায়িত্ব দেয়া উচিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। শূন্যপদ পূরণের এখতিয়ার তার হাতে। তিনি সুস্থ হলে বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যখন চাইবেন এসব পদ পূরণের উদ্যোগ নেবেন। এসব বিষয়ে আলোচনা চলছে।

সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির শূন্যপদের জন্য যোগ্য নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুলাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এডভোকেট জয়নুল আবেদীন, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নাম আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া দলের বিভিন্ন পর্যায় থেকে স্থায়ী কমিটির একটি পদে জিয়া পরিবারের সদস্য ও তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের অন্তর্ভুক্তির দাবি উঠেছে। কিন্তু এ বিষয়ে তারেক রহমানের আগ্রহ নেই বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বৈঠকে যত বেশি নেতা উপস্থিত থাকবেন, তত বেশি মতামত ও পরামর্শ আসবে। স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণের এখতিয়ার চেয়ারপারসনের। তবে মনে হচ্ছে, শূন্যপদ পূরণে করণীয় নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আমরাও চাই শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণ হোক।

বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এই মুহূর্তে আমরা কাউন্সিলের কথা ভাবছি না। করোনায় বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত। অনেক নেতাকর্মী অসুস্থ, মারাও গেছেন অনেকে। এ অবস্থায় দল পুনর্গঠনের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App