×

মুক্তচিন্তা

ভোগান্তির শেষ কোথায়!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ১২:৫০ এএম

ভোগান্তির শেষ কোথায়!

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে উন্নত ও নির্ভরযোগ্য চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক)। নানা সমস্যা হাসপাতালটিকে আজ আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে। করোনাকালে তারই বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে দালালদের কাছে পুরো হাসপাতাল যেন জিম্মি। বর্তমানে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘিরে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। হাসপাতালের গেট থেকে শুরু করে প্রতি ধাপে দালালদের টাকা না দিলে রোগী ভর্তি করানো প্রায় অসম্ভব। এই চক্রের অপতৎপরতা ওপেন-সিক্রেট হলেও তাদের দৌরাত্ম্য থামাতে কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের বারান্দায়, রোগী ভর্তির কাউন্টারে কিংবা আউটডোরে সর্বত্রই দালালদের বিচরণ। এক শ্রেণির চিকিৎসক থেকে শুরু করে নার্স, ওয়ার্ড মাস্টারসহ প্রশাসনের সবার সঙ্গেই রয়েছে তাদের ভালো সখ্য। চিকিৎসা নিতে আসা নিরীহ, দরিদ্র ও অসহায় যাদের বেশিরভাগ গ্রাম থেকে আসেন, চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানেন না তাদের টার্গেট করে আপনজনের মতো ব্যবহার করে কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অস্ত্রোপচার করিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বেসরকারি কোনো ক্লিনিকে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করায়। এভাবে গরিব-অসহায় রোগীর স্বজনদের নানা অজুহাত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারি হাসপাতালে স্বল্প মূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে রোগীদের। এতে করে স্বল্প মূল্যে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। বেশি মুনাফার লোভে রোগীদের পরিচিত ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধের দোকানে নিয়ে গিয়ে ওষুধ কেনানোর কাজটিই মূলত দালাল চক্র করে থাকে। আর এদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তির শিকার হতে হয় রোগীদের। অনেক সময় ভুল চিকিৎসায় জীবনহানির মতো ঘটনাও ঘটে। কোনো রোগীর মৃত্যু হলে স্বজনদের বড় ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিশেষ করে হত্যা বা আত্মহত্যার ক্ষেত্রে মৃতের স্বজনদের হয়রানির শেষ থাকে না। মৃত রোগীকে নিজ গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতালের ভেতরে ড্রাইভারদের যে সিন্ডিকেট আছে তার বাইরে অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স কিংবা মাইক্রোবাসে মৃত ব্যক্তির মরদেহ নিতে দেয়া হয় না। স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া বেশি দিয়ে রোগীকে মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যেতে হয়। এমনকি হাসপাতাল থেকে মৃতের ছাড়পত্র পেতেও গুনতে হয় টাকা। এদিকে হাসপাতালকে কেন্দ্র করে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক, চেম্বার, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রামেক হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা এসব অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘিরে রোগী ধরা দলাল চক্রের দৌরাত্ম্য চরমে। দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সরকারি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে তাদের প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো যেতে হচ্ছে। এছাড়াও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসা শেষে ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হলেই প্রেসক্রিপশনের (ব্যবস্থাপত্র) ছবি তোলার জন্য চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। ছবি তুলতে না দিলে কখনো প্রতিনিধিদের অযাচিত বেপরোয়া আচরণের শিকার হতে হয় রোগীদের। এরা মূলত ডাক্তারদের কাছে নিজেদের কোম্পানির ওষুধ না লেখার কৈফিয়ত চাওয়া, নিজেদেরটা লিখতে চাপ প্রয়োগের মতো অনৈতিক কাজ করে থাকে। প্রতিনিধিদের এমন উপস্থিতি স্বাস্থ্যসেবার জন্য আসা রোগীদের হয়রানির কারণ। চিকিৎসাসেবা হলো মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে উন্নতম। রাষ্ট্র কর্তৃক সব নাগরিকের জন্য চিকিৎসাসেবা সুনিশ্চিত করার সুষ্ঠু অঙ্গীকার থাকলেও কিছু অসাধু দালাল ও মানব পরিচয় ধারণকারী পশুদের বেআইনি ও অমানবিক কাজের দরুন প্রতিনিয়ত সাধারণ জনতার ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও বিঘ্নিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষের যথাযথ দৃষ্টি ও তদারকি কামনা করছি এই দুরবস্থা থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়ার জন্য।

মো. আব্দুল হাকিম জুবাইর : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App