বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তিন শুভঙ্করের ফাঁকি: সিপিডি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ১০:০১ পিএম
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
বাজেট পেশ ও পাশসহ পুরো প্রক্রিয়াকে নাটক বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।
সিপিডি জানায়, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিপুল অর্থের এ বরাদ্দে রয়েছে তিন শুভঙ্করের ফাঁকি। এ সময় করোনা সুযোগ নিয়ে সংসদে বাজেট আলোচনাকে আসলেই অর্থহীন করে ফেলা হয়েছে বলে স্বীকার করেন রাশেদ খান মেনন।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সিপিডি, অক্সফাম ও নাগরিক প্লাটফর্মের উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চুয়াল সাড়ে তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষে লাখ-কোটি টাকার বরাদ্দ নিয়ে ফাঁকিগুলো তুলে ধরেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ‘করোনাকালীন এ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের জন্য কি আছে’শীর্ষক এক অনলাইন সংলাপে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
করোনার এ সময়ে প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে আগের বছরের চেয়ে মাত্র ১৩ শতাংশ বরাদ্দ বেড়েছে। নতুন করে ১৪ লাখ মানুষকে এর আওতায় আনা হয়েছে।
বাজেটে ফাঁকিগুলো তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, প্রথম ফাঁকি হলো- প্রণোদনাকে সামাজিক সুরক্ষা বলা হয়। সামাজিক সুরক্ষা খাতে পেনশন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদি মিলিয়ে প্রথম শুভঙ্করের ফাঁকি হলো, এটা যা না তার চেয়ে অনেক বেশি বলা হয়। যা এ সঙ্গার মধ্যে পড়ে না। অর্থাৎ বরাদ্দ যা নয় তার চেয়ে বেশি করে বলা। দ্বিতীয়টি হলো গরিবদের যে অনুপাতে পাওয়ার কথা, সেই অনুপাতে পাচ্ছে না। আর তৃতীয় ফাঁকি হলো, যেটি দেওয়া হয় সেটি যাদের পাওয়া উচিত, তারা পায় না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, বলা হয় ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। তাহলে তাতে গরিবদের হিস্যা কেনো বাড়বে না?
সভায় সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সংসদে বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া একটি নাটক মঞ্চস্থের মতো। সংসদে বাজেট নিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল আলোচনা হয় না। তিনি আলোচনা সভায় উপস্থিত দুজন সংসদ সদস্যকে প্রশ্ন করেন বাজেট আলোচনায় কতক্ষণ সময় পেয়েছেন?
তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কী ধরনের রাজনীতি চলছে। কিন্তু তারপরেও সংসদ সদস্যদের জনগণের কথা মাথায় রেখে অর্থমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দায়বদ্ধ করা উচিত। আমার মনে হয়, বাজেট নিয়ে যারা আলোচনা করছেন তার সিংহভাগ এটাও জানেন না কেনো তারা অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন।
এসময় বাজেট তৈরি এবং বাস্তবায়নে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা না থাকার কথা স্বীকার করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, আসলে সংসদে অমাদের কথা বলতে হয় বলে বলছি। রেহমান সোবহানের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেট আলোচনায় সময় পেয়েছি ১০ মিনিট।
মেনন আরও বলেন, স্যার নাটক বলেছেন। তবে আমি বলব নাটক না, স্টেটম্যানেজ। সংসদে বাজেট নিয়ে যে আলোচনা হয় তা অর্থহীন। কথা বলতে হয় বলে বলি।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, তিনি গরিব আর নতুন গরিব মানেন না। গরিব তো গরিব। সরকার তাদের পুনরুদ্ধারে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এমন বিষয়ে রেহমান সোবহান বলেন, গরিব আর নতুন গরিব এটি পরিসংখ্যানগত ধুম্রজাল। এ পরিসংখানগত বিতর্কে না গিয়ে কারা প্রকৃত গরিব তাদের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে কাঠামোগত ও বিতরণে সমস্যা আছে।
সংলাপে সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, জিডিপির অংশ অনুযায়ী ২ দমমিক এক থেকে আমাদের চলমান যে বাজেট আছে, রিভাইস বাজেট সেটা থেকে এক দশমিক ৯ শতাংশ এটা কমে গেছে। এটাই বাস্তবাতা।
এ সময়ে সারাদেশে শতাধিক বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি নিজ নিজ এলাকায় করোনাকালে কাজ হারানো মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা খোলা চোখে যা দেখতে পাচ্ছি, অর্থমন্ত্রী তা দেখছেন না এবং বাজেটেও এর প্রভাব পড়েছে। জেলাগুলোতে যে চাহিদা আছে, তা নিয়ে কোনো বাজেট করা হয়নি। যারা প্রণোদনার অর্থ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে তারাই এ থেকে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে।
এ সময় প্রান্তিক মানুষকে আর্থিকভাবে স্বস্তি দিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি।