×

মুক্তচিন্তা

চাকরির পরীক্ষায় প্রবেশসীমা ৩২ করা সময়ের দাবি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২১, ১২:৪৫ এএম

বর্তমানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৯১ সালে যখন গড় আয়ু ছিল ৫৫ বছর তখন চাকরিতে প্রবেশের বয়স ছিল ২৭ আর অবসরের বয়স ছিল ৫৭ বছর। ১৯৯১ সালে সেশনজটের পরিস্থিতি বিবেচনা করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২৭-এর পরিবর্তে করা হলো ৩০ বছর। আর তখন ১৯৯১ সালে গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। এরপর ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯ আর মহান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের এই ২-৩ বছর বাড়ার কারণে এ সময় তেমন চাকরির বিজ্ঞপ্তিও হয়নি। ১৯৯১ থেকে ২০২১- এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বেড়ে ৭৩ বছর হয়েছে। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়েনি। ঠিক আগের অবস্থানে বহাল রয়েছে। এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় উপলব্ধি করা যায়। আর সেটি হচ্ছে বৈষম্যের শিকার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কারণ চিকিৎসকদের শিক্ষাজীবন বেশি দিনের হওয়ার কারণে তাদের আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর করা হয়েছে। কোটায় আওতাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্যও চাকরির বয়সসীমাও ৩২ বছর। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সম্মান কোর্স ৩ বছরের স্থলে ৪ বছর করা হলেও চাকরিতে আবেদনের প্রবেশকাল বৃদ্ধি করা হয়নি। তাহলে কি এমন পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা বৈষম্যের শিকার বলতে পারি না? প্রশ্ন থেকে যায়। এছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক লেখাপড়ার সঙ্গে চাকরির প্রস্তুতিমূলক লেখাপড়ার কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। আমরা যদি একটু পর্যালোচনা করে বলি তাহলে দেখা যাবে, ইতিহাস বিভাগ থেকে পাস করে ব্যাংক কর্মকর্তা, আবার প্রকৌশলী হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হচ্ছেন অনেকেই। চাকরির প্রস্তুতির জন্য যে লেখাপড়া করতে হয়। তার জন্য অবশ্যই আলাদা করে প্রস্তুতিমূলক সময়ের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে যদি কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়ভিত্তিক লেখাপড়া মনোযোগ দিয়ে করেন, তাহলে তিনি চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার কোনো সময়ই পান না। তাহলে এসব বিষয় বিবেচনা করে চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কেন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না সেটাও নিয়েও প্রশ্ন। আমরা যদি অন্য দেশগুলোর চাকরির প্রবেশের বয়সসীমা পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে আমাদের দেশের চাকরির বয়সসীমা ৩০ বছরের থেকে তাদের প্রবেশসীমা ঊর্ধ্বে। শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়াতে সরকারি চাকরি প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪৫। এছাড়াও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও চাকরির ক্ষেত্রে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর। পৃথিবীর যত উন্নয়নশীল দেশ রয়েছে, প্রত্যেক রাষ্ট্র বা দেশে চাকরির বয়সসীমা ৩০ ঊর্ধ্বে হওয়ার কারণেই তারা এত উন্নত। তাহলে অন্য দেশগুলোর থেকে আমরা কেন চাকরির বয়সসীমার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকব? আমাদের দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০-এর ঊর্ধ্বে করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনসহ চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। বরং শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। তাই চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, করোনাকালীন সরকারের সব প্রণোদনার পাশাপাশি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে আমরা বেকার যুবকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘প্রণোদনা স্বরূপ’ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩২ বছর করার জন্য দাবি জানাই। সুতরাং আমরা চাই কেবল করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীদের কথা না ভেবে, বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি যেন বৈষম্যহীন ও সর্বজনীন হয়। বেকারত্ব হ্রাস করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। তাই জাতীয় স্বার্থে, বেকার মুক্ত দেশ গড়তে, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মেধাকে মূল্যায়ন করতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

মু. সায়েম আহমাদ : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App