×

সারাদেশ

দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ২০ কিলোমিটার সিংগাইরের খাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২১, ১০:১৬ পিএম

দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ২০ কিলোমিটার সিংগাইরের খাল

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে খালের জায়গা দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়ি। ছবি: মাসুদ পারভেজ আনিস

দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ২০ কিলোমিটার সিংগাইরের খাল
দখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ২০ কিলোমিটার সিংগাইরের খাল

হেমায়েতপুর-সিংগাইর-মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালটি দখল ও দূষণের কারণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। খালের পাশ ঘেঁষে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক স্থাপন, রাস্তা নির্মাণ, শিল্প কারাখানা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ প্রভাবশালীদের দখলের কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন খালটির পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরুপ প্রভাব ।

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পূর্ব পাশ দিয়ে ধলেশ্বরী নদী হতে পশ্চিমে বায়রা ইউনিয়নের গাড়াদিয়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার খাল আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ দিয়ে প্রবাহিত। খালটিতে আশপাশের লোকজন ফেলছেন ময়লা-আবর্জনা । পাশাপাশি অনেক স্থান দখল হওয়ায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে খালটি। বায়রা ইউনিয়নের গাড়াদিয়া মাওলানা ইয়াকুব খান বাড়ি নির্মাণ করেছেন খালের অংশ জুড়ে। তার দেখাদেখিতে হাসাননগর মাদ্রসাটিও খালের অংশ জুড়ে নিমার্ণ করা হয়েছে।

বাইমাইল বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে কালীনগর এলাকায় আমেনা নামের এক প্রবাসী নারী খালের দক্ষিণ পাশের অংশ জুড়ে নির্মাণ করছেন বাড়ি। তারই পূর্বপাশে আব্দুল আজিজ দেওয়ান খালের মধ্যে ঘর তুলে হোটেল ব্যবসা করছেন। ওই এলাকার দেওয়ান মুক্তা নূর তার বসতবাড়ির টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক নিমার্ণ করেছেন খালের মধ্যে। সানাইল মোল্লাপাড়াতেও খালের মধ্যে টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক নিমার্ণ করে দখল করা হয়েছে। তার পাশেই হানিফ মুন্সি খালের অংশ দখল করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

খোলাপাড়া খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে এএবি ও এবিসিসহ কয়েকটি ইটভাটা একাধিক রাস্তা নির্মাণ করেছেন ট্রাক চলাচলের জন্য। কাশিমনগর বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে আলী মুন্সি ও ছায়েদুর রহমান খালের অংশ জুড়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। তারই পশ্চিমে আব্দুর রশিদ খালের জায়গা দখল করে দেয়াল নির্মাণ করেছেন।

জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলী এলাকায় মাদ্রসা টয়লেটের সেপটিক ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে খালের মধ্যে। জয়মন্টপ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সেতু সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে মনোরঞ্জন ঘোষ দোকান ও আনোয়ার হোসেন বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ভাকুম মেসার্স- ই এন্ড এ এগ্রো ফার্ম এন্ড ফার্মেসি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে খালের ওপর বিশাল জায়গা জুড়ে। ভূমদক্ষিণ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করে ইটভাটার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া মেদুলিয়া থেকে গাজিন্দা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ও বাস্তা হতে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার বৈদ্যুতিক লাইনের খুঁটি নির্মাণ করা হয়েছে খালের মধ্য দিয়ে।

এ প্রসঙ্গে একাধিক খাল দখলকারীদের সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য মিলেছে। তবে বেশির ভাগ দখলদারা বলছেন, দৃশ্যত খাল হলেও এগুলো আমাদের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। আবার অনেকেই বলছেন,পজিশন অনুযায়ী, দখল করে আছেন তারা, পরে জেলা পরিষদের কাছ থেকে লিজ নিবেন। সে অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ এক হাজার করে টাকাও জমা দিয়েছেন তারা। তবে কেউ কেউ বলছেন, সব কিছু ম্যানেজ করেই দখলে আছেন।

সম্প্রতি উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, খাল,পুকুর ব্যক্তি মালিকানা হলেও সেগুলো প্রাকৃতিক জলাশয়। ইচ্ছে করলেই ভরাট বা দখল করা যাবে না। পানি আইনে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক বর্ষা মৌসুমে খাল বা নদী প্রবাহমান পানি থেকে ১৫ মিটারের মধ্যে কোনক্রমেই স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

খালটির রেকর্ড-পর্চা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন খালটি বায়রা ,বলধারা, সিংগাইর, জয়মন্টপ, ধল্লা ও জামির্ত্তা ইউনিয়নের বায়রা , দেহানাখিলা, সাহনাইল, খোলাপাড়া, সিংগাইর, গঙ্গামালঞ্চ,দেউলি, লক্ষীদিয়া, নীলটেক, ভাকুম, কামুড়া, মেদুলিয়া, গাজিন্দা,পূর্ববাস্তা, সুদক্ষিরা, ও ধল্লা মৌজার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। যার আয়তন প্রায় ৮৪ একর। এর মধ্যে ৪৩.৫৪ একরের মালিক মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক, ২০.৭১ একরের মালিক মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ এবং ১৯.০১ একরের মালিক ঢাকা জেলা বোর্ড।

গুরুত্বপূর্ণ এ খালটি দূষণ ও দখলমুক্ত করে সচল রাখার জন্য ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় তৎকালীন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার খালটি দখলমুক্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। সে অনুযায়ী, ওই সভায় অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে এ খাল উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর দীর্ঘ দুই বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়নি। ফলে দখলদারদের দৌরাত্ন আরো বেড়েই চলছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ও অব. কাষ্টমস কর্মকর্তা মো. কুদ্দুসুর রহমান বলেন, নদী এবং খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণের পূর্বেই আমাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। স্থাপনা নির্মাণ হয়ে গেলে তা উচ্ছেদ করতে সরকারের অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি রাখবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুনা লায়লা বলেন, খালটির বেশীর ভাগ জায়গাই জেলা পরিষদের এবং রেকর্ডে ব্যক্তি মালিকানাধীন। জেলা পরিষদের সঙ্গে কথা হয়েছে সম্মিলিতভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দূর-রে শাহ ওয়াজ বলেন, পুরোটা জায়গা আমাদের না। কিছু খাস আছে, লিজ দেওয়া আছে, আমাদেরও কিছু আছে। বিষয়টি নিয়ে আমি সার্ভেয়ারের সঙ্গে কথা না বলে মন্তব্য করতে পারছি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App