×

অর্থনীতি

তিন মাসে খেলাপি ঋণ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২১, ১১:২৫ এএম

নানাবিধ সুবিধা আর উদার হাতে ছাড় দিয়ে ডিসেম্বর মাসে খেলাপি ঋণ কিছুটা কম রাখা সম্ভব হলেও তিন মাসের ব্যবধানে তা আবার বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত প্রান্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত তিন মাসে ব্যাংকের খেলাপি বেড়ে প্রায় ৬ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে দেশের ৫৯টি ব্যাংকের মোট বিতরণকৃত ঋণ ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। ওই অঙ্ক ছিল মোট বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের মার্চ মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ১২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে গৃহীত বিবিধ পদক্ষেপের কারণে গত বছরে ঋণের কিস্তি না দিয়েও নতুন করে কোনো ঋণখেলাপি হয়নি। ফলে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে আসে। কিন্তু চলতি বছর এ সুবিধা রাখা হয়নি। যার ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ব্যাংক খাত বিশেষজ্ঞ মো. নুরুল আমিন বলেন, আমার কাছে মনে হয়, ঋণখেলাপিরা অপেক্ষা করছেÑ আর কত ছাড় পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি সব সময় ঋণের কিস্তির ওপরে নির্ভর করে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ৯১ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৭ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা। একই সময়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা বা ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ২ হাজার ৪৫৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এসব ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫৯ হাজার ৫৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর। এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৪ হাজার ৮৬ কোটি ৪ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩০ লাখ ৫৯২ কোটি টাকা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর ভোরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকিং খাতের ওপর করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।

এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব মোকাবিলায় খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে আরো এক দফা ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এবার মেয়াদি ঋণের সুদ পরিশোধ ও বাণিজ্যিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ঋণের মেয়াদ। ফলে ঋণ পরিশোধের সীমা বেড়েছে। একই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে ঋণখেলাপি না করার মেয়াদ। এর মধ্যে তলবি ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২১ মাস বেড়েছে। চলমান ঋণের মেয়াদ বেড়েছে ১৫ মাস। চলমান, তলবি ও মেয়াদি ঋণের মার্চ পর্যন্ত বকেয়া পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিন মাস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App