×

ফিচার

এ হান্ড্রেড পার্সেন্ট চেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২১, ০৮:৫৬ এএম

পরাধীন ব্রিটিশ ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।

আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘এ হান্ড্রেড পার্সেন্ট চেঞ্জ ইন পাকিস্তান’ বলে মন্তব্য করেন। পণ্ডিত নেহেরুর এই উক্তি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সত্য বলে প্রমাণিত হলো।

১৯৫৬ সালের বহু বিতর্কিত শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো জাতীয় পরিষদ গঠনের জন্য একটি সাধারণ নির্বাচনের যাবতীয় উদ্যোগ চলতে থাকে। নির্বাচনের মাত্র ছয় মাসেরও কম সময় বাকি। জেনারেল আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী শাসনতন্ত্র, প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পরিষদকে পদাঘাত করে বীরদর্পে নিজ দেশ জয় করে সামরিক একনায়কতন্ত্রের যুগে প্রবেশ করল। জেনারেল আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখলকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ‘এ হান্ড্রেড পার্সেন্ট চেঞ্জ ইন পাকিস্তান’ বলে মন্তব্য করেন। পণ্ডিত নেহেরুর এই উক্তির সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যময় ফলাফল পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক নেতাদের গালাগালি, দলগুলোকে নিষিদ্ধ আর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেই তিনি স্বস্তি ফেলতে পারলেন না। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত কোনো স্তরের নির্বাচনে কোনো বিরোধীদল বা নেতা যাতে অংশগ্রহণ করতে না পারেন তার জন্য ‘প্রোডো’ এবং ‘এবডো’র মতো মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থি আইনগুলো সামরিক ফরমানে জারি করেন। আইয়ুব খান প্রথম দিকেই শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে তার ওপর ১৩টি মামলা ঝুলিয়ে দিতে ভুল করেননি। কেননা, জেনারেল আইয়ুব যখন পূর্ব পাকিস্তানে সেনাশাসক ছিলেন তখন থেকেই এই একরোখা, তেজদৃপ্ত, সাহসী যুবকটির কর্মকাণ্ডের রিপোর্টগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখেছিলেন। জেনারেল আইয়ুব ক্ষমতা দখলের সাড়ে তিন বছর পর ১৯৬২ সালের ১০ মার্চ একটি শাসনতন্ত্র উপহার দিলেন। গণতন্ত্রের নিয়ম এই যে, শাসনতন্ত্রের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এই শাসনতন্ত্র ছিল শুধু সরকার নয়, ব্যক্তি-বিশেষের নির্দেশে প্রণীত শাসনতন্ত্র। এ শাসনতন্ত্রের জন্য ছিল না কোনো জনপ্রতিনিধি সভা, না ছিল আইনগত ধারাবাহিকতা এবং বৈধতা। জেনারেল আইয়ুবের দেয়া শাসনতন্ত্রের বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়েও মতামত পেশ করা যায় যে, জেনারেল আইয়ুবের ক্ষমতা নিরঙ্কুুশ করার আইনগত বৈধ্যতা ভিন্ন এর অন্য কোনো লক্ষ্য ছিল না। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ছিল। জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকারগুলো কীভাবে অস্বীকার ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটা ছিল তার জঘন্য দলিল। আইয়ুবের শাসনতন্ত্রে মৌলিক অধিকারের অস্বীকৃতি এবং আইন প্রণয়নের নীতিগুলো ব্যক্তি-ইচ্ছা ও অভিব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। সংসদীয় গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকারের মূল দাবিগুলো লৌহ যবনিকার অন্তরালে ঢাকা পড়ে যায়। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা এমন এক স্বৈরাচারের উচ্চগ্রামে বেঁধে দেয়া হয়েছিল, যার বিরুদ্ধে ন্যূনতম জনমত প্রকাশের সব ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণের রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রত্যক্ষ ভোটাধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ভেবেছিলেন তার ফৌজ বাহিনী, আমলাতন্ত্র এবং দুই অঞ্চলের ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী দিয়ে তিনি নির্বিঘ্নে তার শাসন চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই তাকে অনুভব করতে হলো, পাকিস্তান বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর শাসন ও শোষণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দল গঠন অপরিহার্য, যার মূলনীতিই হবে ইসলামি আদর্শ ও মুসলিম জাতীয়তা। পরবর্তী সময়ে কনভেনশন ডেকে মুসলিম লীগ গঠন তার সেই অভিব্যক্তির প্রতিফলন। আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘সোহরাওয়ার্দীর গ্রেপ্তার : সামরিক চক্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App