বর্ষা এলে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে পাহাড়ধস আতঙ্ক দেখা দেয়। প্রতি বছর ভারি বর্ষণের সময় প্রশাসনের তৎপরতা চোখে পড়ে। গত সোমবার চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় পাহাড় থেকে ৩৭০টি অবৈধ বসতি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। কিন্তু পাহাড়ের ঢালুতে বসবাসকারীদের স্থায়ী সমাধানের দিকে কেন আমরা যেতে পারছি নাÑ সেটা বারবার প্রশ্ন উঠছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতি বছর পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ২০০৭ সালের ১১ জুন টানা বর্ষণে কয়েক ঘণ্টায় ১২৯ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৭ সালের ১২-১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসে ১১০ জন, চট্টগ্রামে ২৩ জনসহ ১৫৬ জন মারা যান। এমন মৃত্যুতে কি আমাদের কোনোই দায় নেই। স্বাভাবিকভাইে প্রশ্ন আসবে, এর প্রতিকারে কী করতে পেরেছি আমরা? প্রশাসনের তরফে দৃশ্যমান যে তৎপরতা তা বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালু এলাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিয়ে নেয়ার চেষ্টায় সীমাবদ্ধ। এর কিছু সুফল অবশ্যই পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যা করা যায়নি বা যাচ্ছে না তা হলোÑ এসব প্রাণহানির ঘটনায় কাউকে দায়ী করা, ঝুঁকি নিয়ে যে দরিদ্র মানুষ ওই রকম পাহাড়ের ঢালুতে বাস করছে তাদের নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। আর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা পাহাড়ধস ঠেকানোর ব্যবস্থা গ্রহণে। কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার কারণেই পাহাড় তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা না গেলে পাহাড়ধসে প্রাণঘাতী বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। বর্ষায় প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। নির্বিচারে পাহাড় কেটে অসংখ্য ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। এমনকি সরকারি উদ্যোগেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নামে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড়ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড়ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ।