×

মুক্তচিন্তা

আগে তো বাঁচতে হবে!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২১, ১২:২২ এএম

চাঁদপুর সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় আমাদের সময়কালে (১৯৮৭-৮৮) সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহর ‘লাল সালু’ উপন্যাস পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং আমার শ্রদ্ধেয় আবু ইসহাক স্যার পরম যত্নে খুব মজা করেই এ উপন্যাসটি আমাদের পড়াতেন। এমনভাবে রসিয়ে রসিয়ে আমাদের পড়াতেন যে আজ এত বছর পরও তার বেশ কিছু কথা এখনো স্মৃতিপটে জাগরূক হয়ে আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলোÑ রহিমার সংলাপ ‘ধান ধান দিয়া কী হইবো মানুষের জান যদি না থাকে’ এবং ‘তুমি এত দয়ালু খোদা, তবু তুমি কী কঠিন’ আর মজিদের সংলাপ ‘তোমার দাড়ি কই মিঞা’ এবং ‘কিন্তু যার অন্তরে খোদা রসূলের স্পর্শ লাগে না, তার কি আর দুনিয়াদারি ভালো লাগে।’ এমনি আরো অনেক সংলাপে উপন্যাসটি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আমার আলোচনার উপজীব্য সে উপন্যাস নয়, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির একটি সময়োপযোগী বক্তব্য নিয়ে। গত রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারা মুক্তি দিবস উপলক্ষে স্বপ্ন ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘পরীক্ষা এক বছর না দিলে এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না।’ তিনি বলেছেন, আপনাদের সুস্থতা এবং জীবন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে কী করা যায় আমরা সেগুলো নিয়েও ভাবছি। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না, ভুলপথে যাবেন না। নিজেরা নিজেদের বাড়িতে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য কাজ করুন, কোনো খারাপ কিছুতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলবেন না। ভয়ের কোনো কারণ নেই, পরীক্ষা দিতে হবে কি না সেটি পরের কথা। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা সুস্থ থাকুক। পরীক্ষা এক বছর না দিলে জীবনে এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না।’ আমি সরকার এবং শিক্ষামন্ত্রীর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত এবং সঠিক পদক্ষেপ বলেই মনে করি যদিও আমার সন্তানও আগামীতে এসএসসি পরীক্ষার্থী, সেও দীর্ঘদিন ক্লাস থেকে বঞ্চিত। অনেকে হয়তো আমাকে ভুল বুঝতে পারেন, বিশেষ করে যারা বুঝে না বুঝে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন বা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। করোনার যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে তা খুবই ভয়ংকর বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। সুতরাং শিক্ষাকাল থেকে শিক্ষার্থীদের জীবনকালের গুরুত্ব প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে অবশ্যই অনেক বেশি যেমনিভাবে সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। কোনো অভিভাবকই চাইবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে তার সন্তান করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাক। আর যদি মারা যায়ও তখন সব দায়ভার এসে সরকারের ওপর বর্তাবে এবং সরকারও তখন এর দায় এড়াতে পারবে না। এখন যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে সরকারের সমালোচনায় মশগুল তারাও তখন গলা ছেড়ে সরকারের সমালোচনা করতে পিছপা হবে না। এমন তো না যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে সরকারকে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বোনাস দিতে হচ্ছে না। অথচ সরকার শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, ঈদ বোনাস অবিরতভাবে সরকার দিয়ে যাচ্ছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। শুধু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে সরকারের কোনো লাভ নেই। সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে। আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রম আর সুযোগ্য নেতৃত্বের গুণে করোনাকালের শুরু থেকে যেভাবে তিনি বিচক্ষণতা ও দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে আসছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে সীমিত সম্পদ ও সীমিত আয়তনের ভূখণ্ডের এ দেশে আঠারো কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা অব্যাহতভাবে গতিশীল রেখে অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সমান তালে চালিয়ে নেয়ার যে নেতৃত্ব গুণ তিনি দেখিয়েছেন তা পৃথিবীতে বিরল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এক সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার অবজ্ঞার সঙ্গে যে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে আরো উত্তরোত্তর অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তাই বেঁচে থাকলে শিক্ষা-চাকরি, উদ্ভাবন সবকিছুই অর্জন সম্ভব হবে, শুধু সময়ের ব্যবধান ঘটবে। আর সে শিক্ষা অর্জন করতে গিয়ে যদি প্রাণে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়ায় তাহলে সে শিক্ষা কি জীবনে আদৌ কোনো মূল্য বা পরিপূর্ণতা বয়ে আনবে? মো. আনোয়ার হাবিব কাজল সাংবাদিক ও কলাম লেখক [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App