×

ফিচার

সোহরাওয়ার্দী-মীর্জা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২১, ০৯:২০ এএম

পরাধীন ব্রিটিশ ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।

পূর্ব পাকিস্তানে এক ইউনিটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র এবং পাঞ্জারের সমর্থন ছিল সোহরাওয়ার্দীর প্রতি। আওয়ামী লীগে ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী বিরোধের সুযোগ নিয়ে ইস্কান্দার মীর্জা সোহরাওয়ার্দীকে বরখাস্ত করেন।

এই পরস্পর স্বার্থ-সম্পূরক হিসেবে সোহরাওয়ার্দী-ইস্কান্দার মীর্জার আঁতাত।  সোহরাওয়ার্দীর প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণের ফলে মার্কিন ঘেঁষা পররাষ্ট্রনীতি, শূন্যতত্ত্ব ও সংখ্যাসাম্যনীতির প্রতি সমর্থনের কারণে আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়ে। মওলানা ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি নামে দল গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী এইচ এস সোহরাওয়ার্দীর কর্মকাণ্ড যেভাবে পরিচালিত হোক না কেন, শেখ মুজিব দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অবিরত বলতে থাকেন ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান শাসনতন্ত্রে পূর্ববঙ্গের গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্ত হয়েছে, পূর্বাঞ্চলকে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি উপনিবেশে পরিণত করা হয়েছে এবং পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের দাবি অস্বীকৃত হয়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই পূর্ববঙ্গকে শতকরা ৯৮ ভাগ অটোনমি দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর এই মন্তব্য ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। শেখ মুজিব তার ব্যক্তিগত এই মন্তব্য মেনে নিতে সক্ষম হননি। যদিও মুজিবের উপর সোহরাওয়ার্দীর ব্যক্তিগত প্রভাব ছিল প্রশ্নাতীত। পরবর্তীকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সংখ্যাসাম্যনীতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে, এটা প্রশাসনিক, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, মূলধন, বিনিয়োগ সর্বত্রই এই নীতি মানা হবে। শেখ মুজিব সব সময়ই এই সংখ্যাসাম্য বা এক ইউনিটের বিরুদ্ধে ছিলেন পরবর্তী কার্যক্রমে তার প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে এক ইউনিটের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। আওয়ামী লীগে মওলানা ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী বিরোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা সোহরাওয়ার্দীকে বরখাস্ত করলেন। কেননা ইস্কান্দার মীর্জা দেখতে পেলেন মার্কিন সমর্থন সোহরাওয়ার্দীর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। পাঞ্জাবের একটি প্রভাবশালী মহলও সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে আঁতাত করে ফেলেছে। প্রাদেশিক পরিষদও মীর্জার চক্রান্তের বাইরে ছিল না। রাজনৈতিক নেতা ও দলকে জনগণের সামনে হেয় করার মানসে মীর্জা একের পর এক চাল দিতে থাকেন। পূর্ববঙ্গের আবু হোসেন সরকারের মন্ত্রিত্বকালে একবার এবং আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিত্বের সময় আরেকবার খাদ্য সরবরাহ ও সীমান্তের চোরাকারবার রোধের নামে পূর্ববঙ্গের শাসনব্যবস্থা সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে তিনি দেখাতে চাইলেন প্রাদেশিক সরকার কেন্দ্রের হাতে পুতুল মাত্র। জনগণের রায় বড় কথা নয় : প্রেসিডেন্ট মীর্জার এই ধরনের স্বৈরাচার ও স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ শেখ মুজিব মন্তব্য করলেন ‘আজকের দিনে পাকিস্তানের সর্বপ্রথম সমস্যা হলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা।’ ইতোমধ্যে আই, আই, চুন্দ্রীগড়কে সরিয়ে পাঞ্জাবের জমিদার নন্দন মালিক ফিরোজ খান নুনকে প্রধানমন্ত্রিত্বে বসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ ফিরোজ খান নুনের মন্ত্রিসভায় যোগদান না করে তাকে সমর্থন জানিয়েছে অবিলম্বে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার শর্তে। আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘এ হান্ড্রেড পার্সেন্ট চেঞ্জ’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এ ছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App