×

সম্পাদকীয়

পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা জরুরি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২১, ১২:২০ এএম

বাল্যবিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও সমস্যাটি রয়ে গেছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে বাল্যবিয়ের হার আরো বেড়ে গেছে। বিষয়টি উদ্বেগের। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসন উদ্যোগ নিচ্ছে। সেই সঙ্গে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সচেতন হতে হবে। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়; করোনা মহামারির সময় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর দায় যেমন রাষ্ট্রের, তেমনি সমাজেরও। করোনায় স্কুল বন্ধ, মা-বাবা চাকরি হারাচ্ছেন, লকডাউনে বাড়ছে সহিংসতা আর ধর্ষণ। এসব কারণে মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবে মা-বাবা তাদের নাবালক মেয়েদের জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন। গতকাল ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম, নাটোর, যশোর, কুষ্টিয়া, নরসিংদী ও ঝালকাঠি জেলায় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মেয়েদের ওপর। অভিভাবকদের কর্মহীনতা, সন্তানের স্কুল খোলার নিশ্চয়তা না থাকা এবং নিরাপত্তাবোধ থেকে দেশে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ের হার। দেশে আগের তুলনায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে ১৩ শতাংশ। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই এ হার সবচেয়ে বেশি। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বলছে- সংঘাত, দুর্যোগ কিংবা মহামারির সময় বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়ে। আমাদের দেশের ২০ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, করোনার কারণে আরো ২০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। বাল্যবিয়ের ঝুঁকি এসব পরিবারেই বেশি। বর্তমানে ৪৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছরের নিচে। বাংলাদেশ এখনো বাল্যবিয়ের উচ্চহারের দেশের তালিকায় রয়েছে। বাল্যবিয়ের কারণে অনেক মেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একমাত্র বাল্যবিয়ের কারণেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে অনেক কিশোরীর শিক্ষাজীবন। অথচ তারা সমাজের অন্য মেয়েদের মতো শিক্ষিত, স্বাবলম্বী হতে পারত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও সমাজের অগ্রসর নাগরিকদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাল্যবিয়ে রোধে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। আর জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে হবে ২০৪১ সালের মধ্যে। বাল্যবিয়ে রোধে অনেক বছর ধরেই সরকার সচেষ্ট। নানা পদক্ষেপ গ্রহণসহ সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে সাজা ও জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাদের, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এমনকি সংসদ সদস্যদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে সুফল পাওয়া যাবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বাল্যবিয়ে রোধে প্রাথমিকভাবে মা-বাবাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। বাল্যবিয়ে রোধের জন্য প্রতিটি উপজেলায় যে কমিটিগুলো আছে, তা খুব বেশি সচল করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App