×

মুক্তচিন্তা

করোনা পরিস্থিতির অবনতি দ্রুত যে কারণে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২১, ১২:২৩ এএম

বর্তমানে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বেশিরভাগ জেলাতেই সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ অতিক্রম করেই চলছে এবং গত শুক্রবার করোনা হটস্পট মোংলায় সংক্রমণের হার ৬১.২২ থেকে নেমে ৫০.৯৮ শতাংশে এলেও পার্শ্ববর্তী রামপাল উপজেলায় করোনা শনাক্তের হার বেড়ে ৭২.৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। সম্প্রতি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমান সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ভারতের ট্রিপল মিউট্যান্ট বি.১.৬১৭.২ নামে পরিচিত করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং ১৬ শতাংশ দক্ষিণ আফ্রিকার বি.১.৩৫১ মিউট্যান্ট বা বিটা ভ্যারিয়েন্ট। ইতোমধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে এবং এটি সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে আস্তে আস্তে পাশের জেলাগুলো ও ঢাকাসহ অন্যান্য দূরবর্তী জেলাতে ছড়িয়ে পড়েছে বলে করোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কাজেই এ সময় অধিক সংক্রমণশীল এসব ভয়ংকর ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঠেকিয়ে রাখা কঠিন হবে। করোনা মহামারিতে বারবার দেখা গেছে, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমার ফলে প্রশাসন ও মানুষ বিধিনিষেধকে ভুলে গিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এবং করোনাকে এড়িয়ে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা অনেকটা ভুলে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার নতুনরূপে মাথাচাড়া দিয়েছে করোনা ভাইরাস। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সত্ত্বেও নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির কারণে অদূর ভবিষ্যতে নতুন বিপদের আশঙ্কা করছেন তারা। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য ৬৩ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজ ও ৪৩.৫ শতাংশকে দুটি ডোজ দিয়ে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য সত্ত্বেও করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাজ্যে দ্রুত বেগে ছড়িয়ে পড়ায় ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে মোট আক্রান্তের ৯১ শতাংশ মানুষ করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। যুক্তরাজ্যের সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ ফর ইমার্জেন্সিস (এসএজিই) জানিয়েছে, যারা করোনার টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন, তারা করোনার আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকেও একই রকমের সুরক্ষা পাচ্ছেন। আবার যুক্তরাজ্যের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দুটি ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ডেল্টা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে মাত্র ৩.৭ শতাংশ। তাই সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। গবেষকদের মতে, করোনায় আক্রান্ত বহুসংখ্যক মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হওয়া থেকে রক্ষা করছে টিকা। কাজেই টিকার মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন ছাড়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টসহ করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। সুতরাং করোনার হটস্পট অঞ্চলগুলোতে কার্যকর লকডাউনসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকাদান কর্মসূচি এগিয়ে নিয়েই এবং খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারলেই কেবল করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই আমরা আশা করি, সরকার দেশের উন্নয়নের চেয়ে করোনা থেকে মানুষের সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়েই এবং টাকা নয় টিকাই বিবেচ্য বিষয় মনে করে যত সম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে সব উৎস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা সংগ্রহ করে করোনার মৃত্যু ঝুঁকি থেকে প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করবে। টিকার মাধ্যমে করোনা নিয়ন্ত্রণ না আসা পর্যন্ত এসব ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন প্রতিরোধে বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আরো কার্যকর করা না হলে সংক্রমণ বাড়বে। করোনা সংক্রমণ রোধে এখন পর্যন্ত সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি, যার ফলে করোনার হটস্পট জেলাগুলোতে নানা সতর্কতার পরও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না জনগণ। করোনা যতদিন থাকবে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টও আসবে। তাই সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা ও যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয় সেখানে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি পালনে এগিয়ে এলেই করোনার সব ভ্যারিয়েন্টই ঠেকানো যাবে। কাজেই করোনা মোকাবিলায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি পালনে প্রশাসনের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

ড. মো. শফিকুর রহমান : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App