×

জাতীয়

২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বাল্যবিয়ে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২১, ০৮:৫৬ এএম

২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বাল্যবিয়ে

ফাইল ছবি

কোভিড মহামারির কারণে নারী ও শিশুদের জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মেয়েদের ওপর। অভিভাবকদের কর্মহীনতা, সন্তানের স্কুল খোলার নিশ্চয়তা না থাকা এবং নিরাপত্তা বোধ থেকে দেশে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ের হার। দেশে আগের তুলনায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে ১৩ শতাংশ। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই এ হার সবচেয়ে বেশি। সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বাল্যবিয়ের শিকার হতে পারে আরো অতিরিক্ত ২৫ লাখ মেয়ে। মোট ছয় কোটি দশ লাখ পর্যন্ত হতে পারে বলে সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করছে।

সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৫ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই। ১৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই। মহামারির কারণে এই সংখ্যাটি কয়েকগুণ বেড়েছে। বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে অভিভাবকের কাজকর্ম না থাকা, সন্তানের স্কুল খোলার নিশ্চয়তা না থাকা এবং অনিরাপত্তা বোধ থেকে দেশে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ে। কুড়িগ্রাম, নাটোর, যশোর, কুষ্টিয়া, নরসিংদী ও ঝালকাঠি জেলায় বাল্যবিয়ে বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে।

মহামারিতে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়ে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেন, এখন কন্যাশিশুদের প্রতি যে অবিচারটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, সেটা হলো বাল্যবিয়ে। করোনার জন্য অনেকের আয় কমে গেছে, যার জন্য অনেক অভিভাবক ভেবেছেন যে মেয়েটার বিয়ে দিলে একটা মুখ কমে যায়। বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার এটা একটা কারণ। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে বাল্যবিয়ে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটির জরিপে দেখা গেছে, মহামারির মধ্যে অভিভাবকের আয় কমে যাওয়া ও স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া; এ দুইটি বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা যায় শতকরা ৮৫ ভাগ বাল্যবিয়ে হচ্ছে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার কারণে। শতকরা ৭১ ভাগ বাল্যবিয়ের শিকার হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে।

এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. এএসএম আতীকুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, করোনায় স্কুল বন্ধ, মা-বাবারা চাকরি হারাচ্ছেন, লকডাউনে বাড়ছে সহিংসতা আর ধর্ষণ। স্থানীয় মাস্তান বা কিশোর গ্যাংয়ের খপ্পর থেকে কন্যার নিরাপত্তার কথা ভেবে মা-বাবারা তাদের অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন। বিয়ে হলে মেয়ে অন্তত ক্ষুধা আর বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে বলে তাদের ধারণা।

বিশ্লেষকদের মতে, বাল্যবিয়ে সবসময়ই বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি বড় বাধা। যদিও এটি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারি সব প্রচেষ্টার ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও সমাজ গবেষক তৌহিদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, বাল্যবিয়ে সমাজে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। কন্যাশিশুর বিয়ে হলে সংসার জীবনের কঠিন পরিস্থিতি সামাল দেয়া, সন্তান জন্মদানে জটিলতাগুলো বাড়ে। বর-কনের বয়সের ব্যবধান বেশি হলেও মানসিক সমঝোতায় সমস্যা হয়।

অন্যদিকে নারীর ক্ষমতায়নে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সমভাবে ক্ষমতায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমাদের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায়ও বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে সামাজিক আন্দোলন জরুরি মন্তব্য করে এই গবেষক বলেন, সরকার সচেষ্ট তবে বাল্যবিয়ে বন্ধে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে জোর সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। সেইসঙ্গে দরিদ্র পরিবারে আয় বাড়াতে সরকারের নজর দেয়া উচিত। কন্যাশিশুকে বোঝা না ভেবে তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নে সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা তৈরি প্রয়োজন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App