×

খেলা

গলফের পাইপলাইন বেশ সমৃদ্ধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২১, ০১:০৬ এএম

গলফের পাইপলাইন বেশ সমৃদ্ধ

গলফার সিদ্দিকুর রহমান

গলফ একটি ব্যয়বহুল খেলা। নিতান্তই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সিদ্দিকুরকে দেখে অনেকেই এখন গলফের দিকে ঝুঁকছেন। গলফার সিদ্দিকুর রহমান আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। গলফ দুনিয়ার বাংলার টাইগার উডস নামে পরিচিত তিনি। ১৯৮৪ সালের ২০ নভেম্বর মাদারীপুরে জন্মগ্রহণ করেন সিদ্দিকুর। পারিবারিক নাম মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। তার বাবার নাম আফজাল হোসেন এবং মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম। পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে সিদ্দিকের অবস্থান তৃতীয়। জন্ম থেকেই প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে বেড়ে উঠেন তিনি। প্রথম বাংলাদেশি গলফার হিসেবে ২০১০ সালের এশিয়ান ট্যুরে ব্রুনাই ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। ২০১৩ সালে সিদ্দিকুর জেতেন হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন শিরোপা।

২০১৪ সালের মার্চে মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো ইউরোপ ও এশিয়ার তারকা গলফারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘ইউরেশিয়া কাপ গলফ’। চার মিলিয়ন ইউএস ডলার প্রাইজমানির এ টুর্নামেন্টে এশিয়া ও ইউরোপের ১০ জন করে গলফার অংশ নেন। এশিয়ার পক্ষে অংশ নেন বাংলাদেশের তারকা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। প্রথম দিনেই ইউরোপের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ে এশিয়া। নির্ধারিত ১০ ম্যাচ শেষে ৭-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ইউরোপ। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের শেষ রাউন্ডে দুর্দান্তভাবে ফিরে আসে এশিয়া। সিদ্দিক ও ভারতের অনির্বাণ লাহিড়ির দারুণ দুটি জয় ও অন্যদের দৃঢ়তায় মান বাঁচে এশিয়ার। ৭-৩ ব্যবধানে জেতে এশিয়া। ফলে সমান ১০-১০ ম্যাচ জিতে দুই মহাদেশীয় লড়াইয়ের প্রথম আসরটিতে যুগ্মভাবে চ্যাম্পিয়ন হয় ইউরোপ ও এশিয়া। ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নিজের গলফ ক্যারিয়ারের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এ গলফার। এক সময় হতাশায় খেলা ছাড়তে চেয়েছিলেন গলফার সিদ্দিকুর। ২০১০ সালের এশিয়ান ট্যুরে ব্রুনাই ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ২০০৯ সালে এশিয়ান ট্যুরে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেবার যতটা খেলে উপার্জন করেছিলেন, এর চেয়েও বেশি খরচ হয়ে গিয়েছিল। সিদ্দিকুরের যত সঞ্চয় সব তখন শেষ। ভেবেছিলেন আর কয়েক সপ্তাহ পর হয়তো খেলতেই পারব না। ব্রুনাই ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে অনেক আর্থিক সমস্যাও যাচ্ছিল। তখনই তিনি জেতেন ব্রুনাই ওপেন শিরোপা। ওই টুর্নামেন্টের পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এ পর্যন্ত দেশ-বিদেশে অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন এ গলফার। এর মধ্যে ব্রুনাই ওপেনকে ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ভাবেন তিনি।

দরজায় কড়া নাড়ছে টোকিও অলিম্পিক। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। এবার অলিম্পিকে খেলার আশা ছেড়ে দিয়েছেন দেশসেরা এ গলফার। টোকিও অলিম্পিকে না খেলা সম্পর্কে ভোরের কাগজকে সিদ্দিকুর জানান, করোনা মহামারির জন্য এশিয়ান ট্যুরসহ অনেক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এসব প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলে সেখানে অংশ নিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করে টোকিও অলিম্পিকে খেলার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু একের পর এক টুর্নামেন্ট স্থগিত হওয়ায় র‌্যাঙ্কিংয়ের কারণে এবার অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। টুর্নামেন্টগুলো মাঠে গড়ালে র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ঘটিয়ে অলিম্পিকে খেলার সুযোগ হয়তো থাকতো। ২০১৬ সালে ৫৭ র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকায় বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরিও অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন সিদ্দিকুর। বর্তমানে তার র‌্যাঙ্কিং ১০৪৫। গলফে ওয়াইল্ড কার্ডের সুযোগ নেই জানিয়ে সিদ্দিক বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি অলিম্পিক গলফ ডিসিপ্লিনে নিজ যোগ্যতায়ই খেলতে হয়। গলফে ওয়াইল্ড কার্ড সাধারণত দেয়া হয় না বলে জানি।

আশির দশক থেকে অলিম্পিকে বাংলাদেশ ওয়াইল্ড কার্ড (বিশেষ বিবেচনা) নিয়েই অংশগ্রহণ করে আসছে । অ্যাথলেটিক্স, সুইমিং, অন্যান্য সব ডিসিপ্লিনে ওয়াইল্ড কার্ড নিয়েই অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা। এবার সাঁতারে আরিফুর রহমান ও জুনাইনা আহমেদ, অ্যাথলেটিক্সে জহির রায়হান, শুটিংয়ে আবদুল্লাহ হেল বাকী অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে।’ সিদ্দিকুর রহমানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এবার সরাসরি অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছে আরচার রোমান সানা।

অলিম্পিকে খেলা না হলেও নিজের অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন সিদ্দিকুর। করোনা টিকার দুই ডোজ নেয়া হয়েছে তার। গলফ কোর্সে গিয়ে অনুশীলনের পাশাপাশি বাসায়ও অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে ভোরের কাগজকে জানান তিনি।

বাংলাদেশে গলফের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গলফ ব্যয়বহুল, ধনী লোকের খেলা হলেও আমাদের দেশে এ খেলা দিনকে দিন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছে। জুনিয়র খেলোয়াড়রা দেশ-বিদেশে ভালো ফলাফল করছে। গলফে আমাদের পাইপলাইন বেশ সমৃদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত ট্রেনিংয়ের জন্য বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কাছে আর্থিক সাহায্য চেয়ে একটি আবেদন করেছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আবেদনের এখনো কোনো সাড়া পাননি। তিনি বলেন, ‘অলিম্পিক থেকে সাহায্য পেলে বাইরে ট্রেনিংয়ের পরিকল্পনাটি এখনো রয়েছে। আশা করি তারা বিষয়টি দেখবে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App