×

পুরনো খবর

কুষ্টিয়ায় তিন হত্যা: দায় স্বীকার করে এসআই সৌমেনের জবানবন্দি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২১, ০৫:৪৩ পিএম

কুষ্টিয়ায় তিন হত্যা: দায় স্বীকার করে এসআই সৌমেনের জবানবন্দি

আদালতে নেওয়া হচ্ছে অভিযুক্ত এএসআই সৌমেন রায়কে। ছবি ভোরের কাগজ

কুষ্টিয়ায় স্ত্রীসহ তিনজনকে হত্যা মামলার আসামি সাময়িক বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায় আদালতে স্বীকারোক্তীমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুন) দুপুর ১টার দিকে তাকে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিমের আদালতে নেয়া হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দি গ্রহন করা হয়।

এদিন সকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার (ওসি-তদন্ত) নিশি কান্ত সাহা জানান, আদালতে ১৬৪ ধারায় সৌমেনের জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে তার রিমান্ডের আবেদনও করা হতে পারে। এর আগে, কুষ্টিয়ার ডিবি কার্যালয়ে রেখে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সৌমেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ফরহাদ হোসেন খান জানান, তার স্ত্রী আসমার সঙ্গে শাকিলের পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন। রবিবার ভোরে তিনি খুলনা থেকে বাসযোগে কুষ্টিয়ায় আসেন। এ সময় তিনি সার্ভিসের জন্য পাওয়া রিভলভার ও দুটি ম্যাগজিনে ১২টি গুলি সঙ্গে নিয়ে আসেন।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ১৩ জুন রবিবার বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাষ্টমস্ মোড়ে একটি কনফেকশনারীতে বসে সেখানে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে প্রথমে আসমার প্রেমিক শাকিলকে গুলি করেন তিনি। এরপর আসমাকে গুলি করেন। এ সময় শিশু রবিন দৌড়ে পালাতে গেলে তাকেও পেছন থেকে গুলি করেন। একটি ম্যাগজিনের গুলি শেষ হয়ে গেলে আরেকটি ম্যাগজিন ব্যবহার করেন।

রবিবার (১৩ জুন) দিবাগত রাতে নিহত আসমা খাতুন, তার ছেলে রবিন ও পরকীয়া প্রেমিক শালিক খানের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও তাপস কুমার সরকার।

তিনি আরও জানান, নিহত তিন জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার রাত ১২টার পর স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শাকিলের মরদেহ তার বাবা মেজবা রহমানের কাছে এবং আসমা খাতুন ও তার ছয় বছর বয়সী ছেলের মরদেহ মা হাসিনা বেগমের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, বাদ জোহর নিহত আসমা খাতুন ও তার ছেলে রবিনের জানাজা শেষে নিজ গ্রাম কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের নাতুড়িয়া কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

অন্যদিকে নিহত শাকিল খানের নিজ গ্রাম কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা কারিগর পাড়া গ্রামের মেছের উদ্দিন দারুল উলুম কওমি মাদরাসায় বাদ জোহর জানাজা শেষে সাঁওতা কারিগর পাড়া গোরস্থানে দাফন করা হবে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম জানান, এই হত্যাকাণ্ডে সৌমেনকে আসামি করে রবিবার রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম।

এদিকে হত্যার ঘটনায় এএসআই সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়ায় এক পুলিশ কর্মকর্তা তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

রবিবার বিকেলে এবিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মাহবুব রহমান বলেন, ঘটনা জানার পর সৌমেন রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপর তদন্ত শেষে তাঁর বিরুদ্ধে সর্বশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুষ্টিয়া পুলিশ সূত্র জানায়, সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উন্নীত হন। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে জেলার অন্যান্য থানায়ও কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্পে ছিলেন। এরপর বাগেরহাট হয়ে খুলনা ফুলতলা থানায় যোগ দেন।

জানা গেছে, এএসআই সৌমেন কুমার রায় ছুটি না নিয়েই কর্মস্থল ত্যাগ করেছিলেন। তিনি ফুলতলা থানা থেকে রবিবার ভোরে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ফুলতলা থানা পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে এএসআই সৌমেন ফুলতলা থানায় উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ছুটি না নিয়ে এবং থানার কাউকে কিছু না জানিয়ে রোববার ভোরে কুষ্টিয়ায় চলে যান। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি ফুলতলা থানায় যোগ দিয়েছিলেন। তার বাড়ি মাগুরা সদরের আসবা গ্রামে।

খুলনার পুলিশ সুপার মো. মাহবুব হাসান জানান, আটক এএসআই সৌমেনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। এছাড়া খুলনা জেলা পুলিশ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবে। ছুটি না নিয়েই কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় সৌমেন সরকারি অস্ত্র ও গুলি সঙ্গে করে নিয়ে যান কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App