×

ফিচার

শেরে বাংলার সার্টিফিকেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২১, ০৮:৫৬ এএম

পাকিস্তান ইসলামিক রিপাবলিক হলো। গণবিরোধী বুরোক্র্যাট ভোগবাদী ইসকান্দার মীর্জা হলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট। তাকে ‘একজন খাঁটি বাঙালি’ সার্টিফিকেট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার বিনিময়ে শেরে বাংলা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হন।

১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ায় ঢুকে পড়ে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে লিয়াকত আলী খান, যিনি আমেরিকাতে অবস্থান করছিলেন কোরিয়ার জন্য গঠিত ‘ইউ-কমান্ড’-এ সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু সামগ্রিক বিচারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহেরুর তুলনায় তার সাহায্যের আশ্বাস মার্কিন নীতিনির্ধারকদের নিকট সামান্যই সাড়া জাগাতে পেরেছিল। কোরিয়ার যুদ্ধের পটভ‚মিকায় কমিউনিস্ট ‘আগ্রাসন’কে প্রতিহত করার চূড়ান্ত ব্লুপ্রিন্টে পাকিস্তানের করাচি, লাহোর, রাওয়াল পিন্ডি সোভিয়েতের পূর্ব-উরাল শিল্পনগরীর কাছাকাছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবেই বিবেচিত হয়। মার্কিন নীতিনির্ধারকগণ বিবেচনা করে দেখলেন যে, লিয়াকত আলী খান দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলেও সামরিক বিষয়ে ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজন একজন সামরিক নেতৃত্বের। এই লক্ষ্যে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তাদের বিশ্বস্ত প্রতিরক্ষা সচিব ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান তদানীন্তন জেনারেল স্যার ডগলাস গ্রেসির অবসরের সাথে সাথে তার স্থলে জেনারেল আইয়ুব খানের স্থান করে দেয়। এমনি অবস্থায় নিরাপত্তা পরিষদের কাশ্মীর সমস্যা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিশ্রুত সামরিক ও আর্থিক সাহায্য প্রাপ্তির বিষয়ে লিয়াকত আলী খান উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

[caption id="attachment_284880" align="aligncenter" width="595"] যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম বইটির কভার ফটো[/caption]

১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর রাওয়ালপিন্ডির কোম্পানিবাগে অনুষ্ঠিতব্য জনসভায় প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিতে যাচ্ছেন এরূপ একটি গুজব রটে যায়। নির্ধারিত ভাষণের প্রারম্ভেই লিয়াকত আলী খানকে সভামঞ্চে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ দিতে হয়। এই হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গভর্নর জেনারেল পদ হতে খাজা নাজিমুদ্দিনকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং তদস্থলে মার্কিন বিশ্বস্ত অনুচর গোলাম মোহাম্মদ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেলের অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন পদটি দখল করেন। খাজা নাজিমুদ্দিনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদে প্রদান করা হয়। অতিসম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডী হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে এ কথাও স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে, জাতীয় স্বার্থে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড শুধু জাস্টিফাইড নয় প্রয়োজনীয়ও বটে। লিয়াকত হত্যাকাণ্ডের প্রয়োজনীয় দলিলপত্রাদি এক প্লেন ক্রাশে খোয়া যায়। লিয়াকত আলী খানের হত্যাকাণ্ড পাকিস্তানের তদানীন্তন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ফলাফল।

১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তানে ইসলামিক রিপাবলিক প্রতিষ্ঠিত হলো এবং জেনারেল ইসকান্দার মীর্জা হলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট। মুসলিম লীগ বা পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যার কোনো সংশ্রব ছিল না। জীবনে যিনি কোনো দিন দেশের হিতার্থে কোনো কাজ করেছেন বলে নিদর্শন নেই। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্রব নেই। গণতান্ত্রিক, শাসনতান্ত্রিক আন্দোলনে যার সামান্য অবদান ও ত্যাগ তিতিক্ষা নেই। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের একজন বশংবদ, আমলা, ব্যক্তিগতভাবে উচ্চাকাক্সক্ষী, লোভ, ভোগ যার জীবনে একমাত্র লক্ষ্য এরকম একজন গণবিরোধী সামরিক বুরোক্র্যাট হলেন পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। শেরে বাংলার মতো নেতৃত্ব এক বিবৃতিতে গভর্নর জেনারেল ইসকান্দার মীর্জাকে ‘একজন খাঁটি বাঙালি’ সার্টিফিকেট দিয়ে তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন ও বিনিময়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত হন। বলা বাহুল্য ইসকান্দার মীর্জা পিতৃপুরুষ পশ্চিম বাংলায়। যিনি মীর জাফরের বংশধর বলে জনশ্রæতি।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘প্রেসিডেন্ট মীর্জার খেলা’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App