×

সম্পাদকীয়

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন কার স্বার্থে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২১, ১২:৪৭ এএম

অনেক বাধা পেরিয়ে সংসদে পাস হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এর গেজেট জারি করা হয়। এরপরও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে আইনটি বাস্তবায়ন করতে পারছিল না সরকার। অবশেষে নতুন এ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশোধনের জন্য প্রস্তাবিত আইনে চালক ও শ্রমিকদের শাস্তি কমানোর কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কমছে চালকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রস্তুতকৃত সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবের কপি অংশীজনদের কাছে পাঠিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। আইনটি বাস্তবায়নের আগে থেকেই শাস্তি কমানোর এমন দাবি করে আসছিলেন নেতারা। আইন সংশোধনের এ উদ্যোগে প্রশ্ন উঠেছে। আইনটি সংশোধন হলে পরিবহন চালকদের বেপরোয়া কি থামবে? সড়কে মৃত্যুর মিছিল কি কমবে? সড়ক দুর্ঘটনা এখন অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে নতুন আইনটি কার্যকরে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু একটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং দুর্ঘটনাকেন্দ্রিক অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদানের জন্য একটি কার্যকর ও ফলপ্রসূ আইনের প্রত্যাশা অনেক পুরনো। কিন্তু কোনো সরকার এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছে বলে মনে হয় না। দুই বছর আগে রাজধানীতে এক বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদের চাপে পুরনো আইন সংশোধন করে অপরাধের দণ্ডের মাত্রা বাড়ানোসহ কিছু কঠোরতা আরোপ করা হয়। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী, গাড়ির লাইসেন্স না থাকলে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ভুয়া লাইসেন্সের জন্য শাস্তি আরো বেশি। সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ধারায় ট্রাফিক আইন অমান্যের জন্য বাড়ানো হয়েছে শাস্তি ও জরিমানা। আইনের প্রয়োগে বাধা নিয়ে প্রভাবশালীদের ভূমিকা লক্ষণীয়। বিআরটিএও সহযোগী নয়। আমরা মনে করি, এই আইন বাস্তবায়ন করতে হলে মূলে হাত দিতে হবে। বিআরটিএ স্বচ্ছ হলে সড়ক-মহাসড়কে নৈরাজ্য প্রায় কমে আসবে। বিআরটিএর সেবার মান নিয়ে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি বহু দিনের। আছে নানা অভিযোগ। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মালিকানা বদলসহ বিভিন্ন কাজে বিআরটিএর শরণাপন্ন হতে হয়। কিন্তু হয়রানি, অনিয়ম ও নানামাত্রিক দুর্নীতির কারণে অনেকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হন। আধুনিক, মানসম্পন্ন ও নিরাপদ সড়ক পরিবহন যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকেও গতিশীল করে। পরিবহন খাত এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আঞ্চলিক যোগাযোগ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক বিষয় এখন পরিবহনে যুক্ত। তাই সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এজন্য সময়ের ধারাবাহিকতায় সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন নয়, নতুন আইনে যে বিষয়গুলো সংযোজিত হয়েছে, তার কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি মনে করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App