×

খেলা

সাকিবকে চার ম্যাচ নিষিদ্ধের সুপারিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২১, ১১:২৮ এএম

সাকিবকে চার ম্যাচ নিষিদ্ধের সুপারিশ

মাঠে আছাড় দিয়ে স্টাম্প ভাঙ্গছেন সাকিব আল হাসান।

সাকিবকে চার ম্যাচ নিষিদ্ধের সুপারিশ

মাঠে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অখুশিতে স্টাম্প লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলেন এবং আছাড় দিয়ে স্টাম্প ভাঙ্গছেন সাকিব আল হাসান।

ম্যাচ চলাকালীন মাঠে অসাদচরণের দায়ে সাবিক আল হাসান কে লেভেল থ্রি ভঙের অভিযোগ এনে দুই ধারায় ডিপিএলে ৪ ম্যাচ নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। শনিবার (১২ জুন) সকালে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে শুক্রবার ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে খেলতে নামে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী আর মোহামেডান। সেই ম্যাচে ছড়িয়েছে বেশ উত্তেজনা। উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি ম্যাচের আম্পায়ারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডতায় জড়িয়েছেন। মুশফিকুর রহিমকে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ আউট না দেওয়ায় রাগে স্টাম্পে লাথি মেরেছেন। আবার বৃষ্টি আসার আগেই খেলা বন্ধ করায় আম্পায়ারের সামনে স্টাম্প তুলে ছুড়ে ফেলেছেন। আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সঙ্গে হাতাহাতি করার পর্যায়েও গিয়েছেন সাকিব। মাঠের মধ্যে তার এমন উগ্র আচরণ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ঘটনার জন্য ক্ষমা চান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। এমন ঘটনাবহুল ম্যাচে জয় পেয়েছে সাকিবের মোহামেডানই। তারা বৃষ্টি আইনে আবাহনীকে ৩১ রানে হারিয়েছে।

আবাহনীর বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্টাম্পে লাথি দেওয়া ও স্টাম্প আছাড় দেওয়ার ঘটনাটি খতিয়ে দেখবে সিসিডিএম। ম্যাচের দুই আম্পায়ার ইমরান পারভেজ ও মাহফুজুর রহমান এবং ম্যাচ রেফারি মোরশেদুল আলমের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছে সিসিডিএম। বিসিবির পরিচালক ও সিসিডিএম প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ এমনটি জানিয়েছেন। ম্যাচ রেফারি মোরশেদ চৌধুরী বলেছেন, সাকিব আচরণবিধির ‘লেভেল টু’ লঙ্ঘন করেছেন। আর এই অপরাধে শাস্তি দুই ম্যাচ কিংবা কমপক্ষে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা এবং আর্থিক জরিমানা। মেজাজ হারিয়ে সাকিব যদি আম্পায়ারের গায়ে হাত তুলতেন, তবে বড় বিপদে পড়তেন। সেক্ষেত্রে ‘লেভেল ফোর’ ভঙ্গে অভিযুক্ত হতেন মোহামেডান অধিনায়ক, যার শাস্তি কমপক্ষে পাঁচ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা।

বিসিবির পরিচালক ও সিসিডিএম প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ বলেছে, ‘খেলা শেষে ম্যাচ রেফারি, আম্পায়াররা একটা প্রতিবেদন দেবে। এখানে নিয়মনীতি যা থাকার, সবই আছে। নিয়ম ভাঙলে কী হয়, সেটাও সবাই জানে। যে প্রতিবেদনই আসুক, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব।’

সাকিব ম্যাচে যা দেখালেন, তা ক্রিকেট মাঠে দেখতে চান না সিসিডিএম প্রধান, ‘ম্যাচের মধ্যে অনেক সময় ক্রিকেটাররা উত্তেজিত হয়। তবে আমরা অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের কাছে আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারটি প্রত্যাশা করি। মাঠের মধ্যে যা দেখেছি, তা হতাশাজনক। এখানে যারা খেলছে, সবাই পেশাদার ক্রিকেটার, অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। আমরা এমন উদাহরণ দেখাতে চাই না।’

শুক্রবার ঘটনাবহুল এই ম্যাচের প্রথম ঘটনার সূত্রপাত হয় আবাহনীর ব্যাটিংয়ের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। এই ওভারটি করছিলেন সাকিব। শেষ বলে তিনি মুশফিকের বিপক্ষে এলবিডব্লিউ আউটের আবেদন করেন। কিন্তু তার এই আবেদন নাকচ করে দেন আম্পায়ার ইমরান পারভেজ। এরপরই মেজাজ হারান সাকিব। তিনি সজোরে লাথি মেরে স্টাম্প উড়িয়ে দেন আম্পায়ারের সামনে। এরপর দ্বিতীয় ঘটনা তিনি ঘটান ম্যাচের ষষ্ঠ ওভারে। এই ওভারের পঞ্চম বলে আম্পায়ার বৃষ্টির জন্য মাঠের খেলা বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। আর আম্পায়ারের এমন নির্দেশনার পর বেজায় ক্ষীপ্ত হন মোহামেডানের অধিনায়ক। ওই সময় সাকিব মেজাজ হারান কারণ ম্যাচটি ছয় ওভার পূর্ণ না হওয়ায় বৃষ্টি আইনের অধীনে পড়তো না। যদি বৃষ্টি শেষে ম্যাচ শুরু না হতো তাহলে সেটি পরিত্যক্ত হয়ে যেত। কিন্তু ওই সময় আবাহনীর চেয়ে মোহামেডান জয়ের দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল। যেহেতু ছয় ওভার পূর্ণ হওয়ার আগে আম্পায়ার খেলা বন্ধ করতে বলেন তাতেই হয়তো ক্ষেপে যান সাকিব। পঞ্চম ওভার শেষেই সাকিবের মেজাজ বেশ খিটখিটে হয়ে গিয়েছিল। ষষ্ঠ ওভারেও সেটি থেকে বের হতে পারেননি। আর তাই তো আম্পায়ারের সামনেই তিনটি স্ট্যাম্প তুলে ছুড়ে মারেন তিনি।

এরপর সুজনের সঙ্গে সাকিবের বিবাদের সূচনা হয় বৃষ্টির সময় তিনি যখন মাঠ থেকে বের হচ্ছিলেন। আবাহনীর ড্রেসিং রুমে বসা ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ওই সময় সাকিব কিছু একটা ইঙ্গিত করে দেখান। আর এরপরই সুজন সাকিবের দিকে তেড়ে আসতে থাকেন। যদিও পরবর্তীতে তাদের মধ্যে ঝামেলা মিটে যায় যখন সাকিব জানান, তিনি সুজনের দিকে কোনো ইঙ্গিত দেখাননি। এই ঘটনার পর সুজনের কাছেও সাকিব ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানা গেছে। একটি সূত্র জানিয়েছে ম্যাচ শেষে সাকিব আবাহনীর ড্রেসিং রুমে যান এবং সেখানে গিয়ে সুজনের কাছে ক্ষমা চান এবং দুজন একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।

সারাদিন ঘটা এসব ঘটনাগুলো নিয়ে যখন চারদিকে তুমুল আলোচনা হচ্ছিল ও সাকিবের সমালোচনা হচ্ছিল তখনই বিকালের পর সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তিনি। এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়ে সাকিব বলেন, ‘প্রিয় ভক্ত ও অনুসারীরা, আমি ক্ষমা চাচ্ছি, আমার মেজাজ হারানোর জন্য এবং ম্যাচটা সবার জন্য শেষ করে দেয়ায়, বিশেষত যারা ঘরে বসে খেলাটা দেখছিলেন। আমার মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারেরর এভাবে আচরণ করা ঠিক হয়নি। কিন্তু কিছু সময়ে এমন অনাকাক্সিক্ষত অবস্থার সৃষ্টি হয় বা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়ে যায়। আমি আমার ভুলের জন্য দল, ম্যানেজমেন্ট, টুর্নামেন্ট অফিসিয়াল ও আয়োজকদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আশা করি, আমি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি করব না। আপনাদের ভালোবাসার জন্য ধন্যবাদ।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App