×

শিক্ষা

জীবন ঝুঁকিতে লামায় কোয়ান্টামে আটকা ২৫০০ শিশুশিক্ষার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২১, ১২:৫০ পিএম

জীবন ঝুঁকিতে লামায় কোয়ান্টামে আটকা ২৫০০ শিশুশিক্ষার্থী

কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যাণ্ড কলেজ

সরকারি বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে করোনার মধ্যেও প্রায় আড়াই হাজার শিশুশিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। দেশে করোনায় মৃত্যুর মিছিলের শুরুতেই প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার।

তবে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞাকে আমলে নেয়নি মিশনারি সংস্থা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও তাদের পরিচালিত কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত দেড় বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি খোলা রেখে চালানো হচ্ছে একাডেমিক ও শিক্ষা কার্যক্রম। দীর্ঘ এই সময়ে একবারের জন্যেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এজন্য অবশ্য কৌশলী হতে হয়েছে কোয়ান্টাম কর্তৃপক্ষকে। সম্পূর্ণ আবাসিকভাবে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিকে এতিমখানা ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয় আবাসিক কার্যক্রম চালু রাখার অনুমতি। আর এই অনুমতিকে ব্যবহার করেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

তবে শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা এড়াতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। গত ৭ জুন মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ষষ্ঠ শ্রেণির দুই শিশু শিক্ষার্থী শ্রেয় মোস্তাফিজ (১১) ও আব্দুল কাদের জিলানী (১২)। স্কুলের অদূরেই একটি খালে ভাসমান অবস্থায় এই দুই শিক্ষার্থীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

এই ঘটনায় লামায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন নিহত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক। সেই মামলায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং স্কুলের আবাসিকের পরিচালকদেরকে আসামি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরোপুরি আবাসিকে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। যার ৫৫ শতাংশ উপজাতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং ৪৫ শতাংশ দেশের উত্তর বঙ্গের মঙ্গা-পীড়িত এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শিশু।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন জানান, মূলত দুস্থ, দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই এখানে বিনা খরচে পড়াশোনা করছে। এদের কারো মা নেই, কারো বাবা নেই। আবার অনেকের বাবা-মা দুই জনই নেই- এমনটাই দাবি কোয়ান্টামের এই পরিচালকের।

তিনি আরও বলেন, করোনার মহামারিতে দেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হলে এই প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই ছেলে-মেয়েদের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানটি খোলা রাখতে প্রথমে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করা হয়। তবে সেখান থেকে জানানো হয়, এটা মন্ত্রণালয়ের বিষয়, শিক্ষা বোর্ডের হাতে নেই। পরে এতিমখানার আদলে আবাসিক কার্যক্রম চালু রাখার আবেদন করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার অনুমতি দেয়। সেই থেকেই এই কার্যক্রম এখনও চালু আছে।

কোয়ান্টামের চট্টগ্রাম অঞ্চলের এই পরিচালকের ভাষ্য, গত ৭ জুন কোয়ান্টাম কসমো স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিশুরা প্রতিদিনের ন্যায় এদিন সকালেও ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে পিটি ক্লাস শেষ করে। এরপর নাস্তা এবং পাঠ শেষে খেলাধুলায় মেতে উঠে। ওদিন ভারি বৃষ্টি হচ্ছিল। সেই বৃষ্টির সময় আবসিকের কিছু ছাত্র নতুন ক্যাম্পাসের জিমনেসিয়াম ভবনের পেছনে নালায় বাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশনে বসানো পাইপের মুখ ঠিক আছে কিনা দেখতে যায়। সেখান থেকে ফের ওই পাইপে পানি প্রবেশ পথ দেখতে গিয়ে পাহাড়ির ঢলের সৃষ্টি ঘূর্ণিতে পড়ে ওই পাইপের ভেতরে ঢুকে যায়। পরে সেখানেই শ্রেয় মোস্তাফিজুর রহমান এবং আব্দুল কাদের জিলানী মৃত্যু হয়। এদের একজনের বাড়ি ঠাকুরগাঁও। অপরজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। পড়াশোনার জন্য এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় তারা।

যদিও পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, ওইদিন বেলা সাড়ে এগারোটার সময় কোয়ান্টামের অদূরের ঢেঁকিছড়া খালে ভাসমান অবস্থায় এই দুই শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করেছে স্থানীয় জনতা। পরে পুলিশকে হস্তান্তর করে।

করোনার এই মহামারির সময়ে ক্যাম্পাস কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, যেহেতু তার বললো, এটা একটা আশ্রম, আশ্রম ঘোষণায় এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের বলেন, নিষিদ্ধ এই সময়ে ক্যাম্পাস কার্যক্রম চালু রাখার কোনো প্রশ্নই আসে না। খবর নিয়ে দেখছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App