×

জাতীয়

সংশোধন হচ্ছে সড়ক আইন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ০৮:৪৩ এএম

২৯টি ধারা সংশোধন ৪টি ধারার কারাদণ্ড ও ১১টি ধারার জরিমানা কমানোর প্রস্তাব

‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ আবারো সংশোধন করছে সরকার। সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাবে এই আইনের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিধানের শাস্তি কমানো হয়েছে। বিদ্যমান আইনে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি ফৌজদারি কার্যবিধি (পেনাল কোড) অনুযায়ী অপরাধ হিসাবে গণ্য হওয়ার এবং কেউ আহত হলে ৫ বছরের কারাদণ্ডের বিধান খসড়া সংশোধনীতে বহাল থাকলেও ৫ লাখ টাকা জরিমানার পরিবর্তে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনের কোনো কোনো ধারায় ১ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ৩ মাসের, ১ লাখ টাকার জরিমানা কমিয়ে ২৫ হাজার টাকা, ১০ হাজার টাকার জরিমানা কমিয়ে ৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রস্তুতকৃত সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবের কপি অংশীজনদের কাছে পাঠিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। গত ১২ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সহকারী সচিব মোহা. জসিম উদ্দিন এ চিঠি পাঠিয়েছেন। মতামত এক মাসের মধ্যে লিখিতভাবে অথবা ই-মেইলে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। মতামত পাওয়ার পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ যাচাই-বাছাইয়ের পর খসড়া সংশোধনী চূড়ান্ত করা হবে। সড়ক পরিবহন আইন পাস হওয়ার পরে সড়ক মালিক-শ্রমিকরা আইনের কতিপয় ধারা সংশোধনের দাবি জানায়। আইন কার্যকর হওয়ার পরে তারা রাজপথে আন্দোলন করে। সরকার ওই সময় আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ না নিলেও এখন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে।

সংশোধনীর খসড়ায় বিদ্যমান আইনে ১২৬টি ধারার মধ্যে ২৯টি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১টি ধারার নির্ধারিত জরিমানা এবং ৪টি ধারার কারাদণ্ডের শাস্তি কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত আইনটি পাস হলে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও বিআরটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই বেশি লাভবান হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ভোরের কাগজকে বলেন, আইন সংশোধনের জন্য আমরা সরকারকে কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। আমরা আইনের ৩৪টি ধারার সংশোধনের দাবি করেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি আইন সংশোধনের জন্য কাজ করেছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। যে দাবিগুলো যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়েছে সেগুলো সংশোধনের জন্য খসড়া করেছে। এজন্য আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এই আইনটি পাস হলে জনগণ এবং সড়ক পরিবহন সেক্টরের সবাই উপকৃত হবে।

‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ভোরের কাগজকে বলেন, অনেক আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন করা হয়েছে। কিন্তু আইনটি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি পূর্ণ বাস্তবায়নের আগেই এটা আবার সংশোধন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরের জন্য এটা খুবই দুঃখজনক। সরকারের এই উদ্যোগ পরিবহন সেক্টরের লোকজনের চাপের ফসল। এটা কোনোভাবে কাম্য না। যারা এই ধরনের কাজ করে তারা ভবিষ্যতে অনেক রকমের দাবি তুলবে, মানুষের ক্ষতি করবে, সরকারকে বিব্রত করবে।

সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবে আইনের ১০৫ ধারায় দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি পেনাল কোর্ডের বিধান অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। মূল আইনের ‘কেউ আহত হলে ৫ বছরের কারাদণ্ডে’ বিধান খসড়া সংশোধনীতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। তবে সংশোধনীতে ৫ লাখ টাকা জরিমানার পরিবর্তে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তার করা হয়েছে। আদালত জরিমানার টাকার সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে। আইনের ৯৮ ধারায় বেপরোয়া বা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ওভারটেকিং বা দূর্ঘটনায় আহত, জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতির দণ্ডের বিধানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এজন্য ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অনির্ধারিত জায়গায় গাড়ি পার্ক করলে বা যাত্রী ওঠানামা করালে ওই পরিবহনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু খসড়ায় এই অপরাধের জরিমানা কমিয়ে মাত্র এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব হয়েছে।

গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন ও নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। এছাড়া চালকের ক্ষেত্রে ১ পয়েন্ট কর্তনেরও উল্লেখ ছিল মূল আইনে। সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবে ১০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড করা হয়েছে। চালকের ক্ষেত্রে পয়েন্ট কর্তনের বিষয়টি খসড়া প্রস্তাবে বাদ দেয়া হয়েছে। আইনের ৮৫ ধারায় ট্রাফিক সাইন ও সংকেত অমান্য করলে ১ মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার স্থলে সংশোধিত প্রস্তাবে ১ হাজার টাকা জরিমানা ও দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১ মাসের কারাদণ্ডের বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে।

৮৬ ধারায় অতিরিক্ত ওজন নিয়ে গাড়ি চালালে ১ বছরের কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড এবং চালকের ক্ষেত্রে দোষসূচক ২ পয়েন্ট কর্তনের শাস্তির বিধান সংশোধন করে ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ড এবং ১ পয়েন্ট কর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া মোটরযান বা গণপরিবহন চালানোর শাস্তিস্বরূপ মূল আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড অনুরূপ রাখা হয়েছে। তবে অর্থদণ্ড ২৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আইনের ২৫(১) ধারায় ফিটনেস ছাড়া বা মেয়াদ উত্তীর্ণ ফিটনেস ব্যবহার করে গাড়ি রাস্তায় না চালানোর বিষয়টি প্রস্তাবিত খসড়ায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। তবে ২৫ ধারার (২) উপধারা (২) এর বিধান অনুযায়ী ফিটনেসের অনুপযোগী কোনো মোটরযানকে ফিটনেস সনদ দিলে সনদ প্রদানকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার বিষয়টি বিদ্যমান আইনে রাখা হয়েছিলো। কিন্তু খসড়া প্রস্তাবে এই ধারা পরিবর্তন করে ‘কোনো অবস্থাতেই ত্রুটিপূর্ণ মোটরযানের ফিটনেস সনদ প্রদান করা যাইবে না’ লেখা হয়েছে। এর ফলে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের অবৈধভাবে সনদ প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এর ফলে ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের সনদ দেয়া বন্ধ হবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ২ শিক্ষার্থী, পরবর্তীতে বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ এবং দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানো রাজীবের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরপর সারাদেশে তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালে নতুন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস করে। এর প্রায় ১৫ মাস পর ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে আইন প্রয়োগ শুরু হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App