×

মুক্তচিন্তা

ফের ফিলিস্তিন নিয়ে কথা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ১২:১২ এএম

ফিলিস্তিন নিয়ে এবার আরো কিছু কথা। কারণ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে একাধিক চুক্তির ও শক্তির আশ^াস জর্ডান নদীতে ভেসে গেছে। দীর্ঘ সময়েও তা সম্পন্ন হয়নি। তাই ক্ষুব্ধ হামাস বহু অপরিণত পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগোতে চেয়েছে। এ পর্যন্ত তারা সফল হয়নি। তবু তারা উগ্রতা পরিহার করেনিÑ স্বভাবতই থেকে থেকে অসম ধরনের সংঘাত ফিলিস্তিনি বসতির পক্ষে দুর্বিষহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাসের দু’চারটে ছোটখাটো রকেট হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের ব্যাপক বোমাবাজি এবং মির্মম অভিযান চালনা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিশ^ মহল প্রসঙ্গক্রমে স্বীকার করেছে যে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তাহলে তো জাতিসংঘের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর নৈতিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। কী বলবেন সাবেক দু’চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সম্পর্কে কিছুটা নমনীয় মনোভাব পোষণ করেন, যেমন বিল ক্লিনটন কিংবা বারাক ওবামা। তারা যেমন উদ্ধত চরমপন্থি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর আগ্রাসন বন্ধ করতে পারছেন না, তেমনি সামাল দিতে পারছেন না হামাস চরমপন্থিদের। অশুভ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া তাদের হাতের বাইরে থেকে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কী করবেন ইসরায়েল নীতির ক্ষেত্রে দুর্বল জো বাইডেন। তিনি মনে হয় যুদ্ধবিরতি সম্পন্ন করিয়েই খালাস। কিন্তু এর টেকসই ব্যবসা, গাজায় স্থায়ী ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা (যার রাজধানী হবে জেরুজালেম) তার মাথায় নেই। ডেমোক্র্যাটদের বর্তমান বামপন্থি অংশ এখনো এতটা শক্তিমান নয় যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গৃহীত নীতির পরিবর্তন ঘটাবেন। তবু একটি চাপ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, হামাসের দিকে নজর থাকা দরকার। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও পরাশক্তি বিষয় রাজনৈতিক সচেতনতা খুবই জরুরি।   দুই. বিষয়টি ফিলিস্তিনি আরবদের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি লড়াইয়ের মূল প্রতিনিধি হামাসের জন্য। বিভক্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অন্তত প্রধানদের সমর্থন আদায়। এক সৌদি আরব যদি বা নাও থাকে। তেমন কূটনীতি হামাসকে অবশ্যই উদ্ভাবন করতে হবে। হামাস যতই ফিলিস্তিনি আরবদের জনপ্রতিনিধিত্ব মূল সংগঠন হোক না কেন, তাদের মধ্যে মনে হয় বুদ্ধিমান ও রাজনৈতিক বিচারে বিশিষ্ট নেতৃত্বের কিছুটা অভাব আছেÑ জননেতা থাকলেও ক্যারিশম্যাটিক নেতার অভাবÑ যেমন আরাফাত। তবে আরাফাতেরও সীমাবদ্ধতা ছিল, যেজন্য শেষ লড়াইয়ে চতুর ইসরায়েল বা মোসাদ-সিআইএর সঙ্গে টেক্কা দিয়ে উঠতে পারেননি। বিনাযুদ্ধে অসহায়ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছেÑ বড় দুঃখজনক ঘটনা। তবে হামাসের বড় সুবিধা গণসমর্থন। সেই সুবিধা টিকিয়ে রেখে তাদের জন্য দরকার রাজনৈতিক উগ্রতা নয়, রাজনৈতিক-কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ। কী মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে, কী পরাশক্তির ক্ষেত্রে। হামাসের এখন সুবিধা আরাফাত নেই। আর মাহমুদ আব্বাস একজন অদূরদর্শী দুর্বল নেতা। আল ফাত্তাহর বীজতলায় তার সমর্থন কতটা রয়েছে তাও বিচার্য বিষয়। সে ক্ষেত্রে লড়াইয়ের মাঠ অনেকটা শূন্য। এ সুযোগে তারা জনসমর্থনের মাঠ গুছিয়ে নিতে পারে। এখন তাদের দরকার মিত্র দেশগুলোর সাহায্যে সামরিক শক্তি সমৃদ্ধ করা এবং কূটনৈতিক দিকটির বিস্তার ঘটানো। বিশেষ করে চীন রাশিয়াকে আরো কাছে টানা, সেই সঙ্গে মার্কিনি উদারপন্থি সিনেটরদের। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ এবং তা থেকে করণীয় উদ্ধার। সেই যে জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়ে গেলেন, আমার বিবেচনায় তার সর্বশেষ ধারাটি হামাসই বহন করছে। আরাফাত তার সূচনা ঘটিয়ে গেলেও তার সংগঠন আল ফাত্তাহ তা পুরোপুরি ধারণ ও বহন করেনি। করেছে তারুণ্য ও যৌবন-প্রধান হামাসÑ যদিও আন্তর্জাতিক সমর্থন পুরোপুরি ও বরাবর হামাসের পক্ষে ছিল না। ব্যতিক্রম ইরান। এবারের কিছুটা ব্যতিক্রম জো বাইডেন সমর্থিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি যা হামাস বিজয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তারা আনন্দসূচক বিজয় মিছিল বের করেছে। আমি এ অপরিণত বিজয়ের পক্ষে মিছিল করার পক্ষে নই, তবু জনসমর্থন তাদের আকাক্সক্ষা পূরণ করতে এ মিছিলের হয়তোবা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু হামাসকে এখনো অনেকটা পথ হাঁটতেই হবে। তাদের প্রয়োজন হবে আন্তর্জাতিক বড় মিত্রের সমর্থন, চীন-রাশিয়া তো বটেই; নীতিগতভাবে হলেও আগামীতে বার্নি স্যাডার্সের মতো কোনো এক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থন। তার জন্য তাদের কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা আমার জানা নেই। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনচেতনার এক স্তরে যে নিঃশব্দ পরিবর্তন শুরু হয়েছে তার গুরুত্ব অপরিসীম, বিশেষ করে বিশ^ রাজনীতির দিক ফেরার ক্ষেত্রে।   তিন. বিষয়টিই তাৎপর্য দীর্ঘ না করে শুধু এইটুকু বলি, কেউ কেউ তা লক্ষ্য করছেন। বাংলাদেশের বিদেশনীতি কি সেদিক লক্ষ্য করেই একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভিন্নমাত্রায় অর্থাৎ পাসপোর্ট বন্ধ করে এবং সেই সঙ্গে ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ নীতি নিয়ে এ ব্যাপারে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে বহুজনের প্রতিবাদের জবাবে বিশেষ মহলের বক্তব্য ‘ফিলিস্তিন প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান বদলায়নি।’ দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়নি। বিষয়টি তাহলে কোথায় দাঁড়াল? যেখানেই দাঁড়াক, এটুকু উদারতা ও নমনীয়তা গ্রহণ করতে ইসরায়েল দেরি করেনি। ইহুদিরা অতীব বুদ্ধিমান জাতি, এ কথা বহুবার লিখেছি। ওরা ভবিষ্যৎ দেখতে ও শোনতে এবং অপেক্ষা করতে জানে। তাই ফল পেয়েছে। আমার ধারণা হয়তো পারে ফিলিস্তিনিরাও। যদি তারা তাদের দাবার ছক সাজাতে ভুল না করে। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে হামাস কতটা বুদ্ধিমত্তা ও রাজনৈতিক কূটকৌশল ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে পারবে, ভবিষ্যতেই তা বোঝা যাবে। অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে সুফল আনে না। সেখানে দরকার সুস্থির বিবেচনা ও প্রয়োজনে অপেক্ষা। অস্থির হামাস নেতৃত্ব কি তা পারবে? আমরা অপেক্ষায় আছি ফিলিস্তিনিদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখার জন্য। যত ছোটই হোক একটি সংহত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র দেখার জন্য, যা মার্কিন রাজনীতিরও সমর্থন পাবে। আহমদ রফিক : লেখক, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App