×

মুক্তচিন্তা

ডাকঘরের সোনালি দিন বিলুপ্তপ্রায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ১২:১০ এএম

হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয়জনকে কাগজে লেখা সেই আবেগ। ফুরিয়ে গেছে ডাকঘরের মাধ্যমে চিঠি পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা। এখন আর আগের মতো লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ে না ডাকঘরে। মাসের পর মাস অনেকে পোস্ট অফিসে আসে না। দিনে দিনে কমে যাচ্ছে ডাক বা চিঠি আদান-প্রদান। ডাকপিয়নও এখন তেমন চোখে ধরা পড়ে না। সময়ের সঙ্গে নানা ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। যার ফলে হাতে লেখা চিঠির কদর অনেকাংশে কমে গেছে। এখন চাইলে পৃথিবীর এক প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তির আদলে মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ই-মেইল কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব প্রকার যোগাযোগ করা যায় সহজে। এখন প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। প্রবাসী প্রিয়জনদের সঙ্গে ইচ্ছা হলে কয়েক সেকেন্ডে অত্যাধুনিক মোবাইলে ভিডিও কল করে কথা বলা যায়। চিঠি লেখার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না। তাই এখন আর ডাকবক্সগুলো ব্যবহার হয় না। দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগই ভাঙা ও মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার পথে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ইতিহাস বেশ পুরনো, ১৫০ বছরের ঐতিহ্য ধারণ করে এগিয়ে চলা ডাক বিভাগ আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেশে প্রায় ১০ হাজারের মতো পোস্ট অফিস রয়েছে। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট ৯ হাজার ৮৮৬টি ডাকঘর রয়েছে। এর মধ্যে জিপিও ৪টি, এ গ্রেড প্রধান ডাকঘর ২১টি, ব্রি গেড প্রধান ৪৬টি, উপজেলা পোস্ট অফিস ৪০০টি, সাব পোস্ট অফিস ১ হাজার ২৬৭টি ও ব্রাঞ্চ পোস্ট অফিস ৮ হাজার ১৪৮টি। ডাকসেবার মানও উন্নত হচ্ছে দিন দিন। এখন ডাকঘর শুধু চিঠি আদান-প্রদানই করে না। এখন নতুন নতুন সেবা চালু করেছে ডাক বিভাগ। মানিঅর্ডার, ই-মানি অর্ডার, ইএমও ইস্যু, ক্যাশ কার্ড, এসবি, এফডি, সঞ্চয়পত্র, মুনাফা সঞ্চয়পত্র, ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রসহ নানা ধরনের কার্যক্রম চালু রয়েছে। কিন্তু তাও মানুষ ডাকসেবা নিতে আগ্রহী নয়। এর মূল কারণ মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা। পাশাপাশি ডাকসেবা সম্পর্কে মানুষের ধারণার অভাব। ডাকঘরে বিকল্প হিসেবে নানা ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিকাশ, রকেট, ডাচ্্-বাংলা নামক সহজলভ্য সেবা চালু হওয়ায় মানি অর্ডারের পরিমাণ রীতিমতো কমে গেছে। দেশের অধিকাংশ পোস্ট অফিসের অবস্থা এখন অত্যন্ত নাজুক। ডাকসেবার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি কল্পে ও ডাকসেবা সবার কাছে পৌঁছে দিতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে। সর্বপ্রথম অবকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে। ডাকঘরগুলোতে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। ডাকসেবা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ডাকঘরে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় আনতে হবে। এতে ডাকঘরের সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সম্ভবপর হবে। ইন্টারনেটে জগতের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যার দরুন ডাকঘরের উপকারিতা সম্পর্কে ব্যাপক সম্প্রচার চালাতে হবে। এছাড়া সাইবার ক্যাফে স্থাপন ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। সাইবার ক্যাফে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবস্থা এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের ঋণ প্রদান করে স্বকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ডাক ও ইন্টারনেট সেবা সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে। এতে ডাকঘর ঐতিহ্য হারানোর হাত থেকে রক্ষা পাবে। তামান্না আক্তার শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App