×

সম্পাদকীয়

জঙ্গিবাদ, হেফাজত প্রশ্নে কোনোভাবেই সন্ধি নয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২১, ১২:১৫ এএম

বর্তমান সরকার সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি অবসানের মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দিকে যাত্রা করার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সরকারের সঙ্গে উগ্র সংগঠন হেফাজতের সম্পর্ক নিয়ে নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। হেফাজত ও ইসলামের সঙ্গে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়া দরকার। তবে ভোটের বাক্স ভারির জন্য হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের সঙ্গে জোট করেছিল বিএনপি। ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াতের নেতা ও যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রিত্বও পেয়েছিল। জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জোট করে দলটি হারাল তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষ শক্তির সমর্থন। হেফাজতের সঙ্গে যদি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ কী সেই পথে হাঁটছে? বিএনপির উদাহারণ তো সামনে আছে। আওয়ামী লীগের শিক্ষা নেয়া উচিত। আমাদের মনে আছে, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা শহর দখল করার চেষ্টা করে। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উপরন্তু, তাদের লালন-পালনের একটা প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করেছি। চলতি বছর মার্চে সুনামগঞ্জের শাল্লায় এরপর ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের তাণ্ডব আমরা দেখেছি। সংগঠনটির বর্বরতা, হিংস্রতা দেশের জনগণ এখনো ভুলে যায়নি। গত প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশে উগ্রবাদী সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তারা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বল দিকের সুযোগ নিয়ে একের পর এক রাষ্ট্র ও সমাজবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমরা দেখেছি, জামাআতুল মুজাহিদীন, হরকাতুল জিহাদ এ ধরনের কয়েকটি সংগঠন বাংলাদেশে একটি ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হয়। ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম জন্মলাভ করে, যার পেছনে ছিল কওমি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। ২০১০ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধেও সরব ছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে ১৩ দফা দাবি নিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান করে সংগঠনটি। সারাদেশ থেকে সেদিন নিরীহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করেছিল তারা। সেদিন তারা ঢাকায় তাণ্ডব ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। নানাদিক থেকে বিশ্বে যখন বাংলাদেশের ভূমিকা উদাহরণ সৃষ্টি করছিল, তখন হেফাজতের এসব ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। জঙ্গিবাদ, হেফাজত প্রশ্নে কোনোভাবেই ছাড় আমরা দেখতে চাই না। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে জঙ্গিবাদবিরোধী মানসিকতা। সুদৃঢ় মনোবল ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আমরা যদি জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে পারি, তাহলে শান্তি ও প্রগতির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। প্রতিক্রিয়াশীলতার সব বাধাকে অতিক্রম করে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সাম্যমৈত্রীর বাংলাদেশ গড়ব এ হোক আমাদের অঙ্গীকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App