×

জাতীয়

সাত বছরের ভিক্ষার টাকায় গড়া সংসার ১৫ মিনিটে ছাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২১, ০৫:০৫ পিএম

সাত বছরের ভিক্ষার টাকায় গড়া সংসার ১৫ মিনিটে ছাই

রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তিতে আগুনে পুড়ে গেছে সবকিছু।

সাত বছরের ভিক্ষার টাকায় গড়া সংসার ১৫ মিনিটে ছাই

সাত বছর ধরে রাজধানীর মহাখালী এলাকায় ভিক্ষা করেন নূরজাহান বেগম। ৫ মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে আসমা মানসিক রোগী। ভিক্ষার টাকায় ওই মেয়ের চিকিৎসা চলে। যারা টাকার বদলে চাল বা অন্যকিছু দেয় সেগুলো দিয়ে চলে সংসার। এভাবে দ্বারে দ্বারে হাত পেতে সাততলা বস্তির ছোট একটি ঘরে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ছোট সংসার। কিন্তু বিধি বাম। সর্বনাশা আগুন নূরজাহানের চোখের সামনেই ছাঁই করে দিয়েছে সবকিছু।

ছাইয়ের মধ্যেই এখন হন্যে হয়ে এটা ওটা খুঁজছেন আশাহত নূরজাহান বেগম। ভিক্ষা করে আনা চালের পোড়া অবস্থা দেখে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলেন না তিনি। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন, পরনের কাপড় ছাড়া কিছু রইল না। দুই বস্তা চাল ছিল। তাও পুড়ে গেছে। এখন খাবো কি? থাকবো কোথায়?

সোমবার (৭ জুন) দুপুরে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে গিয়ে চোখে পড়ে নূরজাহানের এমন আর্তনাদ। জানতে চাইলে নূরজাহান বলেন, ৭ বছর আগে তার স্বামী বাদল মিয়া মারা যায়। এরপর থেকে ভিক্ষা করে সংসারটা ধরে রেখেছে। খুব কষ্ট করে টাকা জমিয়ে একটা চকি, একটা ফ্যান ও একটা পুরনো ওয়ারড্রব কিনছিলাম। চোখের সামনে ঘরে আগুন লাগার ১৫ মিনিটের মধ্যে সব পুড়ে গেলো। কিছুই করতে পারলাম না। খালি মেয়ে আসমাকে নিয়ে বের হতে পারছি- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নূরজাহান। চোখে মুর্ছা দিতে দিতে পুড়া চাল হাতে নিয়ে বলেন, ভিক্ষা করে আনা এ চালগুলোই খাওয়ার ভরসা ছিল। সবশেষ। আমার মতো গরীবের কেন এই সর্বনাশ হইলো, কি পাপ করছিলাম যে মাথা গুজার জায়গাটাও হারালাম।

[video width="640" height="352" mp4="https://www.bhorerkagoj.com/wp-content/uploads/2021/06/WhatsApp-Video-2021-06-07-at-4.04.55-PM.mp4"][/video]

পাশেই ঘরটির পোড়া টিন সরাচ্ছিলেন নূরজাহানের জামাতা বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, বস্তির সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু তার শাশুড়ি নূরজাহানের কথা আলাদা। সে ভিক্ষা করে সংসার চালায়। এখন শেষ অবলম্বনটুকুও ছাঁই হয়ে গেলো। সকাল থেকে এই ছাঁই হাতরে যাচ্ছেন তিনি (নূরজাহান)। কিছুতেই আমরা তাকে বোঝাতে পারছি না।

নূরজাহানের ঘর থেকে কিছুটা সামনে গেলে চোখে পড়ে নাসিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ বিলাপ করে কান্না করছেন। কান্না করবেন ইবা না কেন? জীবনের সর্বস্ব ও লোনের টাকায় বস্তিতে গড়ে তোলা ১৪টি ঘর পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। যা কিছুতেই মানতে পারছেন না নাসিমা বেগম। কান্না করতে করতে বলেন, সারা জীবনের জমানো টাকা আর লোনের ২ লাখ টাকা দিয়ে এখানে ঘর তুলেছিলাম। সব কয়টি ঘরই ছাই হয়ে গেছে। আর মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা থাকলো না। ব্যাংক লোনের কিছুটা শোধ করেছি। বাকিটা কিভাবে দিবো, ঘরই বা কিভাবে তুলবো আবার। মাথায় কিছুই কাজ করছে না।

সোমবার ভোর ৪টার দিকে সাততলা বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট অগ্নিকাণ্ডের আড়াই ঘণ্টা পর সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গ্যাস লিকেজ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিস ও বস্তিবাসীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App