×

জাতীয়

দশ কোটি টাকার গ্যাস বিল হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক গ্রেপ্তার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২১, ১০:৪৩ পিএম

দশ কোটি টাকার গ্যাস বিল হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার প্রতারক মো. ওমর ফারুক

বিগত তিন বছর ধরে বিল না পেলেও মিরপুরের তিনটি ওয়ার্ডে বসবাসরত প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেনি তিতাস কর্তৃপক্ষ। তবে হঠাৎ করেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিল পরিশোধে ব্যর্থদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে এমন মাইকিং করা হলে হতভম্ব হয়ে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

বিল পরিশোধ না করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। তা শুনে হতভম্ব হওয়ার কী রয়েছে এখন এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে ভুক্তভোগীরা সেই প্রশ্নর উত্তর খুঁজতে যাওয়ার পরই সামনে বেরিয়ে আসে মহা প্রতারণার খবর। বিগত কয়েক বছর ইণ্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিল নিলেও তা পরিশোধ করেনি। এছাড়াও সে বিলের প্রায় ১০ কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়েছে এজেন্ট ব্যাংকের কর্ণধার। তবে অবশেষে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার প্রতারক মো. ওমর ফারুক (৩২) র‌্যাবের জালে ধরা পড়লেও গ্রাহকদের বিল বকেয়া হওয়ার দায় কার তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

সোমবার (৭ জুন) বিকালে ইন্টার্ন ব্যাংকিং অ্যান্ড কমার্স নামে এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার প্রতারক মো. ওমর ফারুককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) মোজাম্মেল হক জানান, গত রবিবার রাত ১ টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকা থেকে ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। গত জানুয়ারি মাসে মিরপুর এলাকায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে বকেয়া বিলের জন্য প্রায় দেড় হাজার গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করার প্রচারণা চালায়। মাইকিংয়ের পরপরই ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারক ফারুকের প্রতিষ্ঠান ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্সের বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পড়ে। পরে চলতি বছরের গত ২৩ জানুয়ারি ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্সসহ তিনটি অফিস তালাবদ্ধ করে ফারুকসহ তার অন্যান্য সহযোগীরা আত্মগোপনে চলে যায়।

এরপর এক ভুক্তভোগী বিষয়টি মিরপুর থানায় মামলা করে। তিনি আরো জানান, ওমর ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলার কবিরহাটের সাগরপুর এলাকায়। সে ২০০৯ সালে এসএসসি পাশ করে ২০১৪ সালে ঢাকায় চলে এসে মগবাজার এলাকায় একটি বিকাশের দোকানে চাকরি শুরু করে। অতপর ২০১৫ সালে মিরপুরের আহম্মেদনগর এলাকায় নিজে বিকাশের ব্যবসা শুরু করে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সে বিভিন্ন ব্যাংকে ৫ টির অধিক একাউন্ট খোলে। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে মিরপুর-২ এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৬০ ফিট এলাকায় ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্স নামে একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে। ওমর ফারুক তার এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার গ্রাহকের গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করত।

সিও জানান, গত ২০১৮ সাল থেকে তিতাস গ্যাস, ওয়াসা ও ডেসকোর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল সংগ্রহ করে জমা না দিয়ে বিলের টাকা আত্মসাৎ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সে এমএলএম ব্যবসা ‘অটুট বন্ধন’ নামে একটি এমএলএম সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সাধারণ জনগণকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রাহকের নিকট হতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা সে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিকাশ, নগদ এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এর অনুরুপ বিল পরিশোধের জন্য ‘নব ক্যাশ’ নামক একটি সেবা চালু করে সাধারণ মানুষের নিকট হতে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়। সে এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন ছিল কিনা এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, সঠিক কাগজপত্র দিয়েই ইন্টার্ন ব্যাংকিং এন্ড কমার্সের এজেন্ট খোলা হয়েছে হয়েছিল। কিন্তু, ফারুক ভুয়া সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে মানুষের কাছে টাকা সংগ্রহ করত। পরে ওই টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে সে নিজেই টাকা রেখে দিতো। এ ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা জড়িত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে তিতাস গ্যাসের কোন গ্রাহক জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ জড়িত হলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App